|
|
|
|
নেপালিপাড়া হিন্দি হাইস্কুল |
অভাবের স্কুলে আলো শুধু তিন হাজার পড়ুয়া |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
শিক্ষার অধিকার আইন বলে, প্রতি ত্রিশ জন পড়ুয়া পিছু এক জন করে শিক্ষক বা শিক্ষিকা থাকতে হবে। কিন্তু এ রাজ্যের আরও অনেক স্কুলের মতোই দুর্গাপুরের নেপালিপাড়া হিন্দি হাইস্কুলের তিন হাজার পড়ুয়ার জন্য রয়েছে মাত্র ১৯ জন শিক্ষক। এঁদের মধ্যে ১৩ জন স্থায়ী এবং ৬ জন অস্থায়ী। অভাব রয়েছে শ্রেণিকক্ষ, শৌচাগারেরও। এই পরিস্থিতিতে স্কুল চালাতে রীতিমতো নাভিশ্বাস স্কুল কর্তৃপক্ষের।
দীর্ঘদিনের এই সমস্যার কথা ইতিমধ্যই সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো হয়েছে বলে জানালেন প্রধান শিক্ষক কালিমুল হক। কিন্তু এখনও প্রশাসনের তরফ থেকে কার্যকরী কোনও পদক্ষেপ হয়নি। তবে আশ্বাস দিয়েছেন খোদ মহকুমাশাসক। আর সেই আশ্বাসে ভর করেই অপর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষে আঁটোসাটো হয়ে বসে লেখাপড়া করছে পড়ুয়ারা। |
|
দুর্গাপুরে স্কুলের সামনে পড়ুয়ারা। —নিজস্ব চিত্র। |
১৯৭৩ সালে গড়ে ওঠে এই নেপালি পাড়া হিন্দি হাইস্কুল। তবে গত শিক্ষাবর্ষে বিজ্ঞান ও কলা বিভাগে একাদশ শ্রেণির পঠনপাঠনও শুরু হয়। নতুন ভর্তি হয় ৩০৯ জন। ফলে গত বছরের ২৭৬১ জন থেকে এক ধাক্কায় পড়ুয়ার সংখ্যা বেড়ে ৩০০০ ছাড়িয়ে যায়। এই বিপুল সংখ্যক পড়ুয়াকে সামলাতে গিয়ে হিমসিম দশা ১৯ জন শিক্ষকের। প্রধান শিক্ষক কালিমুল হক বলেন, “শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী শিক্ষকের সংখ্যা হওয়ার কথা ৬৭। কী ভাবে যে স্কুল চলছে, তা কেবল আমরা কয়েক জনই জানি। অস্থায়ী ভাবে কয়েক জন শিক্ষককে নিয়ে কোনও রকমে কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।” শুধু শিক্ষক সংখ্যা নয় অপ্রতুল শ্রেণিকক্ষও। বর্তমানে স্কুলে শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা ৩৩। কিন্তু পড়ুয়ার সংখ্যা অনুযায়ী তা হওয়ার কথা ৫৮। ফলে বেশ কষ্ট করেই পড়ুয়াদের মানিয়ে নিতে হচ্ছে পরিস্থিতির সঙ্গে। কম রয়েছে বসার বেঞ্চও। ৪৭৫টি বেঞ্চের প্রয়োজন হলেও রয়েছে ৪২৫টি। এ ছাড়া আরও কিছু মৌলিক চাহিদা, যেমন, পানীয় জল বা শৌচাগার তারও প্রয়োজন অনুযায়ী যোগান নেই। স্কুলে শৌচাগার রয়েছে ২০টি, প্রয়োজন আরও ১৪টি। প্রধান শিক্ষক বলেন, “পড়ুয়াদের বেশ কষ্ট করে মানিয়ে নিতে হচ্ছে পরিস্থিতির সঙ্গে। তবে অভিভাবকরা সহযোগিতা করছেন বলে সমস্যা থাকলেও কোনও রকমে চলে যাচ্ছে।” অভিভাবকদের মধ্যে শ্রীরাম সাউ, মনজিৎ সিংহ’রা বলেন, “নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আন্তরিক চেষ্টায় স্কুল চালাচ্ছেন শিক্ষকরা। ওঁদের পাশে আছি।” স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এই সমস্যার সূত্রপাত দীর্ঘদিন আগেই। স্কুল প্রতিষ্ঠার সময় এলাকায় হিন্দি মাধ্যমে পড়ুয়ার সংখ্যা বেশি না থাকায় সমস্যা ছিল না। কিন্তু যত দিন গিয়েছে দুর্গাপুরে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বাইরে থেকে আসা মানুষজনের সংখ্যা, যাঁদের একটা বড় অংশ হিন্দিভাষী।
তা ছাড়া পড়াশোনা নিয়ে সচেতনতাও আগের থেকে বেড়েছে। সব মিলিয়ে গত কয়েক বছরে স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা বেড়েছে বহুগুণ। এর উপরে গত শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণির পঠন পাঠন চালু হওয়ায় পড়ুয়ার সংখ্যা এক ধাক্কায় আরও তিনশো বেড়ে যায়। ফলে সমস্যা বেড়েছে ক্রমেই। প্রধান শিক্ষক কালিমুল হক জানান, শিক্ষক সংখ্যা বাড়ানোর আর্জি জানানো হয়েছে ‘ডিরেক্টরেট অফ স্কুল এডুকেশন’ দফতরে। পুরো বিষয়টি জানানো হয়েছে দুর্গাপুরের মহকুমাশাসককেও। ‘ডিরেক্টরেট অফ স্কুল এডুকেশন’ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুরের এই স্কুলের জন্য ৩৩টি শিক্ষক পদ অনুমোদিত হয়েছে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে ওই পদগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক আয়েষা রানিও নেপালি পাড়া হিন্দি হাইস্কুলের সমস্যার কথা জানেন। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক মারফত স্কুলের সমস্যার কথা তিনি জানিয়েছেন শিক্ষা দফতরে। মহকুমাশাসক বলেন, “শিক্ষকের অভাব ও অন্যান্য পরিকাঠামোর অপ্রতুলতায় পড়ুয়া ও স্কুল কর্তৃপক্ষ সমস্যায় ভুগছেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দফতরে জানিয়ে সমস্যা সমাধানের আর্জি জানিয়েছি।” |
|
|
|
|
|