ফেস্টিনস্টি
মিলিউ, সংস্কৃতি, জাভোৎসব... নিশ্চয়ই ভাবছেন হঠাৎ কলকাতার হিপ কলেজ ফেস্টের কথা কেন আসছে? আসছে তাঁর কারণ জেন ওয়াইয়ের কাছে কলেজ ফেস্টের সংজ্ঞাটাই এখন বদলে গিয়েছে। ফেস্ট আর মোটেই বোরিং সোশ্যাল নয়। জেন ওয়াইয়ের ক্যালেন্ডারে কলেজ ফেস্ট এখন আন-অফিশিয়াল ‘ঝারি ডে’।
ঠিক এক মাস পরেই ভ্যালেন্টাইনস্ ডে, সরস্বতীপুজো। কিন্তু তাদের সরিয়ে প্রেম শুরুর দিন হিসেবে নিজের জায়গা বেশ কায়েমি করে নিয়েছে কলেজ ফেস্ট। মেটাল ব্যান্ডের তালে তালে বেসুর শৌভিক দিব্যি মেপে নিতে পারছে প্রেসির কিউট সোমলতাকে।
কিন্তু কেন এই পরিবর্তন? কোন কারণে জেন ওয়াইয়ের ক্যালেন্ডারে এখন রেড লেটার ডে হয়ে উঠেছে কলেজ ফেস্ট?
ঝারি ডে
“ভ্যালেনটাইনস্ ডে তো বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ডের দিন। আরে যে এখনও কোনও গার্লফ্রেন্ডই জোটাতে পারল না, সে ভ্যালেনটাইনস্ ডে-র দিন করবেটা কী? তাই কলেজ ফেস্ট। ফেস্টে কাউকে পটাতে পারলে তবে তো সেলিব্রেট করবে ভ্যালেনটাইনস্ ডে!” জানালেন আশুতোষ কলেজের ছাত্র অনিমেষ ঘোষ।
সমর্থনের সুর সেন্ট জেভিয়ার্সের অভিনবের গলায়, “ফেস্টটা আসলে মেলটিং পট। ফেস্টের দিন শুধু তো নিজের কলেজের মেয়েরাই থাকে না, অন্য কলেজ থেকেও মেয়েরা আসে। আবার অন্য কলেজের ফেস্টেও যাই আমরা। ন্যাচারালি অপশনটা বেড়ে যায়। তবে নিজের কলেজে একটা জম্পেশ ফেস্ট হলে তো কথাই নেই। কলার তুলে ফেস্টে যাওয়া যায়।”

আমরাও আছি
তার মানে কি শুধু ছেলেরাই অ্যাডভান্টেজ নেয় কলেজ ফেস্টের? তা কিন্তু মোটেই নয়। মেয়েরাও এ ব্যাপারে কম যায় না। “আমি তো প্রায় সব ক’টা ফেস্ট অ্যাটেন্ড করতাম,” বলছিলেন সৌরিণী বন্দ্যোপাধ্যায়, “ফেস্টের মজাটাই আলাদা। অনেক লিবারাল সবাই। আর একটা ব্যাপার, জেভিয়ার্স বা যাদবপুরের ফেস্ট যেহেতু চার-পাঁচ দিন ধরে চলে। তাই ফেস্টেই বেশ একটা পুজো-পুজো আমেজ থাকে। ফুল ষষ্ঠী টু দশমী এক্সপিরিয়েন্স। ঠিকঠাক চললে ব্যাপারটা প্রেমেও গড়াতে পারে।”
একই মত আশুতোষ কলেজের মোনালিসার, “আমরা কেন লুজার হব? আমরাও তো সেজেগুজে যাই ছেলেদের দেখাব বলে। আবার হ্যান্ডু কোনও ছেলে দেখলে আড়ি আড়ি ঝারিও মারি। একটা মিউচুয়াল লেন-দেন আর কী।”
মনে রাখবেন টলিউডে ফেস্টিনস্টি
• ‘উইল ইউ মেক ফ্রেন্ডশিপ?’ ‘মেক ফ্রেন্ডশিপ’ বললেই সব ঘেঁটে ঘ।
• ফোন নম্বর নেওয়ার সময় ভাল করে নাম শুনে নেবেন। সুস্মিতার নম্বরে ফোন করে সৌমিলিকে চাইবেন না।
• কেউ ফোন নম্বর দিলে, তার সামনেই ফোন করে নম্বরটা ঠিক কি না যাচাই করে নেবেন। ফেস্টে দেওয়া অধিকাংশ নম্বরই ভুল থাকে।
• আগেকার দিনের অনেক পরিচালকেরই কলেজ ফেস্টের ফার্স্ট হ্যান্ড অভিজ্ঞতা ছিল না । স্বাভাবিক ভাবেই তাঁদের ছবিতে ‘ফেস্টিনস্টি’ ছিল না।
• আর একটা অসুবিধা কলেজ স্টুডেন্ট নিয়ে। শ্যুটিং দেখা পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু অংশ নিতে কেউ-ই রাজি হবে না। আর জুনিয়র আর্টিস্টদের দিয়ে ফেস্টের ফিল আসে না।
• ফেস্টে তো নায়ক-নায়িকার প্রথম দেখা হয়। আমার মতে ওখানে ইম্প্রেশন তৈরি হলেও প্রেমটা জমে না।
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়
ফেস্ট টু পিঁড়ি
কলেজ ফেস্ট থেকে বিয়ের পিঁড়ি। এই উদাহরণেরও অভাব নেই। সুশোভন-সৌমিলি বা সুদীপ-মনীষা। হাজরা ল’ কলেজের সুশোভন রায়ের সঙ্গে ক্যালকাটা মেডিকেল কলেজের সৌমিলির প্রথম দেখা সৌমিলির কলেজের ফেস্টে। সাক্ষাৎটা হয়ে যায় ‘ইন্ডিয়ান ওশান’য়ের প্রেমে। প্রেমে পড়তে দেরি লাগেনি। গত মাসে বিয়েটাও সেরে নিয়েছে দু’জন। যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সুদীপ আর শ্রী শিক্ষায়তনের মনীষার গল্পটাও একই। দু’জনের দেখা ফেটসু-র সংস্কৃতিতে। তাদের ‘ফেট’য়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসা হবে কি না বলা না গেলেও গত দু’বছর চুটিয়ে প্রেম করে যাচ্ছে তারা।

আমি তো এমনি এমনি যাই
স্বাভাবিক ভাবেই ফেস্টের সব প্রেম যে লং-টার্ম রিলেশনশিপে দাঁড়ায় তা তো নয়। ক’জনই বা সেটা চায়? অনেকের কাছেই ব্যাপারটা ট্যাক্স ফ্রি মস্তি। ফেস্টেও তো কোনও এন্ট্রি ফি থাকে না! কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসের অরুণ-ই যেমন বলছিলেন, “ক্যাম্পাসে ফেস্ট মানেই একটা আলাদা মজা। অন্য ক্যাম্পাসের মেয়েরা আসবে, তাদের ঝারি মারা বা অডিটোরিয়ামের রাস্তা দেখিয়ে বন্ধুত্ব পাতানোর মতো ব্যাপারগুলো ভীষণ এনজয় করি। বেশ একটা হিরো হিরো লাগে তখন। আমি তো বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকি, রাস্তা দেখিয়ে দেব বলে! ওই দু’ মিনিটে যাকে ভাল লাগে তার ফোন নম্বরটা নিয়েনি। অনেকেই ভুল নম্বর দেয়। যারা ঠিক নম্বর দেয় তাদের সঙ্গেও বন্ধুত্ব পর্যন্তই গড়াই। তার বেশি এগোলে গার্লফ্রেন্ডের একটা মারও পিঠের বাইরে পড়বে না।”
একই মত প্রেসিডেন্সির দেবারতির, “ফেস্টের কয়েকটা দিন বেশ হ্যান্ডু ছেলে দেখা যায়। ওটাই মজা। কয়েক দিন ফোরাম- সাউথ সিটি ঘোরা হল। ব্যাস। লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট-টাইট গল্পেই হয় বস্। অ্যাটলিস্ট আমার তো হয়নি। হ্যাঁ, এটা হতে পারে ফেস্টে গিয়ে হয়তো কারও সঙ্গে আলাপ হল। সিসিডি- ম্যাক ডি ঘুরে হয়তো দেখা গেল প্রেমটা জমে গেল। তাই হোপ ফর দা বেস্ট।”
আর কী? সামনেই তো শুরু হচ্ছে ফেস্ট সিজন। নিজের হোক বা অন্য কলেজ, ঢুঁ মারুন ফেস্টে। বলা যায় না হয়তো আপনার ‘দি ওয়ান’ অপেক্ষা করছে সেই ফেস্টে।
হিরো হওয়ার আগে তো নিয়মিত কলেজ ফেস্ট অ্যাটেন্ড করতাম। ফেস্ট মানেই দেদার ঝারি। নৌটঙ্কিবাজ ছিলাম। কিন্তু মেয়েদের অ্যাপ্রোচ করতে বেশ ফাটত। তাই চুলে জেল-টেল লাগিয়ে বেশ কায়দা মেরে যেতাম, যদি কোনও মেয়ে ইমপ্রেসড হয়ে এগিয়ে আসে।
অঙ্কুশ



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.