সম্পাদকীয়...
অন্ধযুগ
পুদুচ্চেরির সরকার সপ্তাহখানেক পূর্বে বিধান দিয়াছিলেন, স্কুলছাত্রীদের ওভারকোট পরিতে হইবে, তাহাতে তাহাদের নিগ্রহের সম্ভাবনা কমিবে। সপ্তদশবর্ষীয়া ছাত্রীকে এক বাস কন্ডাক্টর ও এক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র মিলিয়া অপহরণ ও ধর্ষণ করিবার পর, এক সভায় এই সিদ্ধান্ত লওয়া হইয়াছিল, সভাপতি ছিলেন স্বয়ং বিদ্যালয় শিক্ষা মন্ত্রী। বিভিন্ন নারী সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন ও ছাত্রছাত্রী মিলিয়া প্রতিবাদ করিয়া সেই ফরমান প্রত্যাহার করিতে বাধ্য করিলেন সরকারকে, গত বৃহস্পতিবার ওই প্রস্তাব ফিরাইয়া লওয়া হইয়াছে। কিন্তু এই ঘটনা ব্যতিক্রম। সাধারণত নারীদের উপদেশ দেওয়ার পর কেহ কথা ফিরাইতে রাজি থাকেন না। যেমন বাণী প্রত্যাহার করিতে রাজি নহেন সমাজবাদী পার্টির নেতা আবু আজমি, যিনি বলিয়াছেন নিগ্রহ এড়াইতে চাহিলে নারীগণকে হ্রস্ব পোশাক ত্যাগ করিতে হইবে ও অধিক রাত্রে একা না বাহির হইয়া নিকটাত্মীয়ের সহিত বাহির হইতে হইবে। তিনি এই প্রসঙ্গে তাঁহার দলের রাজনৈতিক শত্রু আরএসএস-এর প্রধান মোহন ভাগবত-এর মত সমর্থন করিয়াছেন। মোহন বলিয়াছিলেন, নগর-ভারতের তুলনায় গ্রাম-ভারতে ধর্ষণের হার কম, কারণ গ্রাম্য নারীরা ‘ঠিক’ ধরনের পোশাক পরিয়া থাকেন। এই যে স্থান-কাল-ধর্ম-আদর্শ নির্বিশেষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পুরুষ প্রধানেরা প্রতিটি কুত্‌সিত নারী-নিগ্রহের পর তাহাতে নারীর দায় নির্দেশ করিতে এত ব্যস্ত হইয়া পড়েন, ইহা কেবল চূড়ান্ত অন্যায় ও বিরক্তিকর কাণ্ড নহে, ইহার ঘন ঘন পুনরাবৃত্তি একটি ভয়াবহ সত্যের সন্ধান দেয়: এই দেশ নারীবিদ্বেষী। কখনও অমুক ধর্মগুরু, কখনও তমুক রাজনৈতিক গুরু, কখনও পঞ্চায়েতের গুরু-অংশ গলা কাঁপাইয়া ফতোয়া দেন, নিগ্রহ থামাইতে গেলে কো-এড শিক্ষা বন্ধ করো, বা নারীদের হস্তে মোবাইল অর্পণ করিও না, অথবা ধর্ষিতা নারীটি ভ্রাতা বলিয়া ধর্ষককে বক্ষে টানিয়া লইলেই বীভত্‌স ঘটনাটি ঘটিত না। বাড়িতে বসিয়া ও বহিঃপৃথিবীর সহিত সম্পর্ক না রাখিয়া নারীর স্বরক্ষা বিষয়েও আশ্চর্য ঐকমত্য দেখা যায়। এই কর্তাব্যক্তিরা আদতে চাহেন এমন সমাজ, যেখানে নারী মনুষ্যপদবাচ্য হইবে না, বাঁচিবে পুরুষের ভরসায় ও দাক্ষিণ্যে, নতমুখে পুরুষের আদিষ্ট কর্ম করিয়া চলিবে, কদাপি নিজ অস্তিত্বকে মূল্যবান ভাবিবে না। হ্রস্ব পোশাকের প্রতি যে এই পরিমাণ ক্রোধ, তাহার একটি গুরুতর কারণ অতৃপ্ত যৌন ক্ষুধা, কিন্তু আরও জরুরি কারণ: নারী নিজ ইচ্ছামত পোশাক পরিতেছে, বা প্রেমিকের সহিত নিঃসঙ্কোচে বেড়াইতেছে, অথবা সিগারেট খাইতেছে, এইগুলির মধ্য দিয়া, গড় ভারতীয় মননে, নারীটির স্বাধীনচেতা মনোভাব প্রকাশিত হয়। এই ক্রিয়াগুলির অর্থ দাঁড়ায়: নারী নিজ শর্তে নিজ জীবন যাপন করিতেছে, পদানত হইয়া উপদেশ মানিবার পরিবর্তে নিজ মর্জি ও বুদ্ধি খাটাইয়া জীবনের সিদ্ধান্তগুলি লইতেছে। ইহাতে পুরুষসিংহের আত্মায় আঘাত লাগে। মনে হয়, ‘আধুনিকতা’য় বড় মাপের গলদ না থাকিলে, এই সকল ‘পাশ্চাত্য’ অসভ্যতা আমাদের মহিমময় দেশকে কলুষিত করিত না, সমাজের ভারসাম্য বিঘ্নিত হইত না। সমাজ সুষম হয় শোষণের গুণে। নারী নিম্নে থাকিলে ও পুরুষ তাহাকে পদপীড়িত করিয়া সগৌরবে দাঁড়াইলে, তবে প্রকৃত শৃঙ্খলা রচিত হয়। মিডিয়া এই মনোভাবের যতেক নিন্দা করুক, ইঁহারা তাহাকে আমল না দিয়া অনবরত নিজ কথাগুলি বলিয়া যান, কারণ তাঁহারা জানেন, সাধারণ মানুষ এই গণমাধ্যমের ‘প্রগতিশীল’ মতামতকে তীব্র ঘৃণা করেন ও সত্যিকারের গুরুত্বই দেন না। এই দেশের অধিকাংশ লোক কন্যাসন্তান হইলে মাথায় হাত দিয়া বসিয়া পড়েন ও সে কিশোরী হইলে তাহাকে বুঝাইয়া দেন, কোনও পুরুষ তাহাকে প্রেম নিবেদন করিলে, দোষ কিশোরীরই, সে নিশ্চয় অসঙ্গত প্রশ্রয় দিয়াছিল। ইঁহাদের ও ইঁহাদের গুরুগণের সত্তায় কে সভ্যতার ওভারকোট চড়াইবে?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.