উপলক্ষ ছিল জন্মদিনের আগাম শুভেচ্ছা জানানো। সেই সূত্র ধরেই দীর্ঘ কয়েক মাস পরে মহাশ্বেতা দেবীর মুখোমুখি হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। শনিবার স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনের সরকারি অনুষ্ঠান শেষে আচমকাই গাড়ি ঘুরিয়ে মহাশ্বেতা দেবীর বাড়ি চলে যান মমতা।
১৪ তারিখ মহাশ্বেতা দেবীর ৮৮তম জন্মদিন। সেই দিন ব্যস্ততার কারণে উপস্থিত না-ও থাকতে পারেন জানিয়ে মহাশ্বেতা দেবীকে হলুদ-কালো কাশ্মীরি শাল ও কালো ফুলহাতা সোয়েটার উপহার দেন মুখ্যমন্ত্রী। ১৫ মিনিট তিনি কসবার রাজডাঙা রোডের বাড়িতে ছিলেন।
রবীন্দ্র পুরস্কার প্রাপক নির্বাচন থেকে শুরু করে একাধিক বিষয়ে মহাশ্বেতা দেবী সরকারের সমালোচনায় মুখ খোলায় মমতার সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বেড়েছিল। তখন মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল থেকে এমন কথাও বলা হয়েছিল, মহাশ্বেতা দেবীরা নিজেদের প্রয়োজনেই সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রক্ষা করে চলেন।
অনেকের মতে, পার্ক স্ট্রিট-কড়েয়া-ভাঙড়ের মতো একের পর এক ঘটনার পরে মমতা-ঘনিষ্ঠ অনেক বিশিষ্ট জনই যখন সরকারের সমালোচনায় মুখ খুলতে শুরু করেছেন, তখন মমতা আর বিতর্ক বাড়তে দিতে নারাজ। যদিও মুখ্যমন্ত্রী বা মহাশ্বেতা দেবী, কারও তরফেই এই কথা স্বীকার করা হয়নি। দাবি করা হয়েছে, এটা নিছকই সৌজন্য সাক্ষাৎ। |
মুখ্যমন্ত্রী দেখা করে চলে যাওয়ার পর এ দিন মহাশ্বেতা দেবী জানান, শিশু স্বাস্থ্য, জেলায়-জেলায় প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ, পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে তাঁদের মধ্যে কিছু কথা হয়েছে। লেখিকা বলেন, “জঙ্গল মহলে মমতা চমৎকার কাজ করছে। আগে এই কাজগুলো হয়নি। ওর কাজ নিয়ে আমি লেখা শুরু করব।” সাম্প্রতিক কালে একাধিক ধর্ষণের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠার প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “মমতার কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক, এটা ওকে বুঝতে হবে। আমি এটা নিয়ে ওকে বার-বার বলেছি। এই সব ঘটনা থেকে ও শিক্ষা নিচ্ছে, আগের থেকে অনেক সতর্ক হয়েছে। আজকেও সে সব আমি বলেছি। ও বলেছে, সব ঘটনার যথাযথ তদন্ত হবে।” তবে পাশাপাশি তিনি এ কথাও জানাতে ভোলেননি যে, “মমতা অনেকের থেকে ভাল। গরিব মানুষ সরাসরি সমস্যা নিয়ে তাঁর কাছে পৌঁছতে পারেন।” মমতার সঙ্গে সম্পর্কে শীতলতা কাটছে কি না, এই প্রশ্নের জবাবে মহাশ্বেতা দেবী বলেন, “মমতার সঙ্গে কোনও দিনই আমার অতি-প্রেম বা অতি-মনোমালিন্য হয়নি। সৎ পরামর্শ ওকে আগেও দিয়েছি, ভবিষ্যতেও দেব।” এক সময়ে মুখ্যমন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ বহু বিশিষ্ট মানুষ এখন তাঁর বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন। এই প্রসঙ্গে মহাশ্বেতা দেবী বলেন, “তাঁদের মমতার থেকে কী প্রত্যাশা ছিল, বা তাঁরা কী চান, আমার তা জানা নেই।” |