বিবেক অবতারে চমক দেব, তারকা সান্নিধ্যে তৃপ্ত মুখ্যমন্ত্রী
রনে গৈরিক বসন। হাতজোড় করে হেঁটে আসছেন দীর্ঘদেহী, সুঠাম তরুণ!
অজস্র কচিকাঁচা, খুদে বিবেকানন্দের ভিড়ে তিনিই মধ্যমণি!
চমকটা দর্শকরা বুঝতে পারেননি প্রথমে। তার পর জায়ান্ট স্ক্রিনে চোখ পড়তেই সমবেত উল্লাস! আরে, এ তো আর কেউ নয়, দেব!
বিবেকানন্দের ভূমিকায় দেবের আবির্ভাবই স্বামীজির ১৫১তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানের বড় চমক! আর তার পিছনে মূল মস্তিষ্ক কিন্তু স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!
শনিবার দুপুরে সল্টলেক স্টেডিয়ামের মাঠে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে তাই তৃপ্তির হাসি!
শিল্প না হোক, শিল্পীরা আছেন। দিন দুয়েক বাদে হলদিয়ায় ‘বেঙ্গল লিড্স’-এর আসরে ভিন রাজ্য থেকে বড় মাপের কোনও শিল্পপতি আসবেন বলে এখনও খবর নেই। কিন্তু শনিবার আন্তর্জাতিক যুব দিবসের অনুষ্ঠান-মঞ্চে টলিউডি তারকাদের বিচ্ছুরণে যথারীতি কমতি হয়নি।
এফডিআই-এর বিরুদ্ধে মেট্রো চ্যানেলের অনুষ্ঠানই হোক বা মহাকরণে মনীষীদের জন্মদিন পালন হাত বাড়ালেই মমতার বন্ধু টলিউড। সল্টলেকের মাঠে স্বামীজির জন্মদিন পালনেও সেই পরম্পরা রক্ষিত হল।
মমতার পূর্বসূরি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও নন্দনে সংস্কৃতি ও সাহিত্য জগতের সান্নিধ্যেই স্বচ্ছন্দ ছিলেন। তবু তারই মধ্যে রাজ্যে লগ্নি টানার ব্যাপারে সক্রিয় হয়েছিলেন তিনি। এ রাজ্যের শিল্পমহলের কিন্তু ধারণা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলিউডের শাহরুখ খান থেকে টলিউডের দেব-শুভশ্রী-সোহম-পায়েলদের অন্তরঙ্গ-বৃত্তেই বেশি সাবলীল ও সে সব দিকে তাঁর উৎসাহও বেশি। শাহরুখকে বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর করা থেকে শুরু করে এ দিনের বিশেষ চমক, বিবেকানন্দের বেশে দেব-কে হাজির করা, মমতারই মস্তিষ্কপ্রসূত বলে জানা গিয়েছে।
স্বামীজির বেশে অভিনেতা দেব। শনিবার যুবভারতীতে। —নিজস্ব চিত্র
মমতা ক্ষমতায় আসার পরে ২১ জুলাইয়ের শহিদ দিবস অনুষ্ঠানেই দেব তাঁর জনপ্রিয় ‘পাগলু’ নাচ দেখিয়েছিলেন। দেব-শুভশ্রীর ‘খোকাবাবু’ দেখতে এসআরএফটিআই-এ ছুটে গিয়েছিলেন মমতা। সংস্কৃতি-জগতের গুণিজনের জন্য বঙ্গবিভূষণ-সহ বিভিন্ন পুরস্কার চালু করাটা বারবারই তাঁর জমানার অন্যতম প্রধান কৃতিত্ব হিসেবে জাহির করেছেন মমতা। ইডেনে শাহরুখ খান এবং কেকেআর-এর সংবর্ধনা থেকে শুরু করে সোহমের বিয়ে, সর্বত্রই হাসিমুখে উপস্থিত থেকেছেন তিনি।
মাস দেড়েক আগে হস্তশিল্প মেলার উদ্বোধনেই মমতা স্বীকার করেছিলেন যে, ‘‘বড় শিল্প অনেকেরই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।” তা হলে উপায়? মমতার বক্তব্য ছিল, বাংলা বেশি জোর দেবে ক্ষুদ্রশিল্পের উন্নয়নে। সেই ক্ষুদ্রশিল্পের পরিধি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নাচ-গান-নাটক-সিনেমা সব কিছুকেই তার অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছিলেন তিনি। স্পষ্ট গলায় প্রশ্ন ছুড়েছিলেন, “শুধু কি কাঠের শিল্প, সিমেন্টের শিল্প, লোহার শিল্পই শিল্প?”
শিল্প-বাণিজ্য আর কলাশিল্পের ভেদরেখা মুখ্যমন্ত্রী এই ভাবে মুছে দেওয়ায় শিল্প মহল বিস্মিত হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু মমতা তাঁর নিজস্ব শিল্প-নীতিতে অনড় থেকে যান। তাই বিবেকানন্দের ১৫০ বছর পালনের ময়দানে ঢালাও নক্ষত্র সমাবেশ যাতে থাকে, সে দিকে আলাদা করে নজর ছিল তাঁর। ফলে এ দিন কার্যত ছুটির মেজাজে মমতার ডাকে হাজির ছিল প্রায় গোটা টলিউডই। মঞ্চে তৃণমূলের মেজ-সেজ মন্ত্রী-নেতা ছাড়াও দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, চুনী গোস্বামী, দীপঙ্কর দে, অজয় চক্রবর্তী, অর্পিতা ঘোষদের মধ্যে বসেই মমতা এ দিন ‘ধনধান্য পুষ্পে ভরা’ শুনতে শুনতে হাসি মুখে তাল দিয়েছেন। এই অন্তরঙ্গ-বৃত্তে মুখ্যমন্ত্রীর আত্মসন্তুষ্টির ছবিটাই টিভির ক্যামেরা-বন্দি হয়ে এ দিন রাজ্যবাসীর সামনে উঠে এসেছে। নৃত্যগীত আলেখ্য শুরুর আগে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই গ্যালারিতে উপস্থিত স্কুলপড়ুয়াদের বলেছেন, “অনেক ফিল্মস্টার-অভিনেতারা আছেন, এই অনুষ্ঠানটা দেখতে ভুলো না!” হাঁকডাক করে ভিড় সরিয়ে মাঠ ফাঁকা করে দেন মমতাই। এই ‘কৃতিত্বে’র জন্য মজা করে রাজ্য পুলিশের ডিজি-র কাছে নিজের ‘পুরস্কার’ দাবি করতেও ভোলেননি তিনি।
স্বামীজির ১৫০ বছর পূর্তিতে সল্টলেকের মাঠে নানা বয়সের দেড়শো জন বিবেকানন্দকে পেশ করেন উদ্যোক্তারা। শিকাগো বক্তৃতার সময়কার গেরুয়া পাগড়ি পরিহিত ‘বীর সন্ন্যাসী’বেশে হাজির হন তাঁরা। এদেরই কেন্দ্রে ছিলেন দেব। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, মমতাই দেব-কে বিবেকানন্দের ভূমিকায় দেখতে চেয়েছিলেন। তাঁকে অনুরোধ করা হলে, দেব রাজি হয়ে যান। যুবসমাজের প্রতিনিধি এক ঝাঁক তরুণ-তরুণীর মাঝেও সন্ন্যাসীর গৈরিকবেশে দেবকে ফের হাজির হতে হয়। তাঁর সঙ্গী তখন কোঁচানো ধুতি-ডিজাইনার শাড়িতে সজ্জিত টালিগঞ্জের সিনেমা-সিরিয়ালের পরিচিত নায়ক-নায়িকারা আবির, সাহেব, রাইমা, শুভশ্রী, পায়েল, মিমি, হিরন, কাঞ্চন-সহ অনেকেই। মঞ্চে তখন বেলুড় মঠের ম্যানেজার স্বামী গিরিশানন্দ ও বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্বামী আত্মপ্রিয়ানন্দ মুখ্যমন্ত্রীকে আশীর্বাদ করছেন। স্বামী আত্মপ্রিয়ানন্দের কথায়, “স্বামীজির শতবর্ষেও এত বড় অনুষ্ঠান হয়নি।” অনুষ্ঠান শেষে বাইরে টিভি-সিনেমার তারকাদের ছবি মোবাইল-বন্দি করতে মশগুল ছিল জনতা। সহাস্য মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের মাঝখান দিয়েই গটগটিয়ে হেঁটে গাড়িতে উঠলেন।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.