যুদ্ধবাজ রাষ্ট্রের মতো আচরণ করতে চায় না ভারত। দেশে যারা প্রতিশোধের জিগির তুলছে, সরকারের যে তাতে সায় নেই, তা আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ। কিন্তু নিয়ন্ত্রণরেখায় যুদ্ধবিরতি ভাঙার জন্য ইসলামাবাদকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে ধারাবাহিক ভাবে হুঁশিয়ারি বার্তা দিতে চাইছেন সাউথ ব্লকের কর্তারা। যে কারণে বায়ুসেনাপ্রধান আজ কড়া বার্তা দিয়েছেন পাকিস্তানকে। আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানকে চাপে রাখতে বিদেশমন্ত্রী এ দিন প্যারিসেই ভারতীয় দুই জওয়ানকে হত্যা ও দেহ বিকৃত করার কথা উল্লেখ করেছেন সাংবাদিকদের কাছে।
পুঞ্চ সেক্টরে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে আজও গুলির লড়াই হয়েছে ভারতীয় ও পাক সেনার। অথচ উত্তেজনায় ইন্ধন জোগাতে ইসলামাবাদই আজ ফের নিয়ন্ত্রণরেখায় গোলাবর্ষণ নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করেছে। শুধু তাই নয়, যুদ্ধবিরতি ও শান্তি কায়েম রাখার স্বার্থে সীমান্তে ব্রিগেডিয়ার স্তরে ফ্ল্যাগ মিটিং করার যে প্রস্তাব নয়াদিল্লি দিয়েছিল, সাড়া দেয়নি তাতেও।
পাকিস্তানের আচরণের জবাবে নীরব না থেকে ভারত আজ চড়া সুরে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসলামাবাদকে। বায়ুসেনাপ্রধান এন এ কে ব্রাউন আজ বলেছেন, “সামগ্রিক পরিস্থিতির ওপর সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে। পাকিস্তান যদি এ ভাবে যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভাঙতে থাকে, তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমাদের হয়তো অন্য বিকল্পের কথা ভাবতে হবে।”
যদিও অন্য বিকল্প বলতে কী কী পথের কথা বলতে চাইছেন, সে বিষয়ে কোনও ব্যাখ্যায় যাননি এয়ার চিফ মার্শাল ব্রাউন। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি শুধু বলেন, “অনেক বিকল্প রয়েছে। সে সব প্রকাশ্যে আলোচনা করা যায় না। তবে যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভাঙার ঘটনা ধারাবাহিক ভাবে চলতে থাকলে গোটা বিষয়টিই নতুন করে ভেবে দেখতে হবে নয়াদিল্লিকে। ”
এটা যে শুধু পাকিস্তানের প্রতি কড়া বার্তা তা নয়। সাউথ ব্লক সূত্রে বলা হচ্ছে, তিন বাহিনীর প্রধানদের মধ্যে বায়ুসেনাপ্রধানই সব থেকে বর্ষীয়ান অফিসার। তাঁর এই বার্তা ভারতীয় সেনাবাহিনীর মনোবল বাড়াবে। এর পাশাপাশি, যে কোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকার ব্যাপারেও তৎপর করবে তাদের। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে বেশ কিছু জঙ্গি ঘাঁটি সক্রিয় রয়েছে। ফলে সীমান্তের সেনা শিবিরগুলিকে সব রকম ভাবে প্রস্তুত রাখাটা খুবই জরুরি।
পাকিস্তানের আচরণে ঘরোয়া রাজনীতিতেও যথেষ্ট ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। সে জন্যও পাকিস্তানকে কঠোর বার্তা দেওয়াটা জরুরি ছিল। বায়ুসেনাপ্রধানের পাশাপাশি আজ তাই বিদেশমন্ত্রী খুরশিদও কড়া সমালোচনা করেন পাকিস্তানের। বিদেশমন্ত্রী এই মুহূর্তে প্যারিস সফরে রয়েছেন। সেখানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে খুরশিদ আজ বলেন, “যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে দুই ভারতীয় জওয়ানকে কেন হত্যা করা হল, তার স্পষ্ট কোনও জবাব এখনও ইসলামাবাদ দেয়নি।” তবে ভারত যে প্ররোচনায় পা দিয়ে কোনও ভুল পদক্ষেপ করবে না তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
যদিও তাতে পথ বদলাচ্ছে না পাকিস্তান। ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে পাক বিদেশসচিব জলিল আব্বাস জিলানি আজও বলেন, “যখনই সীমান্তে এ ধরনের কোনও পরিস্থিতি (গোলাবর্ষণ বা যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ) হয়, তখন একমাত্র নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমেই প্রকৃত সত্য জানা যেতে পারে।” নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে পাল্টা আঙুল তুলে জিলানি
বলেন, “আশা করি ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি হবে না।” লস্কর-ই-তইবার নেতা হাফিজ মহম্মদ সইদের দাবি, নিয়ন্ত্রণরেখার উত্তেজনার পিছনে তাঁর হাত নেই। |