প্রধান শিক্ষক এক সন্ন্যাসীর দায়িত্বে স্কুলের দুই পড়ুয়াকে রেখে ভেলোরে গিয়েছেন চিকিৎসায়। সেই সন্ন্যাসী দুই খুদে পড়ুয়াকে স্কুলে রেখে সদর দরজায় তালা মেরে চলে গিয়েছেন নবদ্বীপে। দু’দিন ধরে কালনার বারুইপাড়ায় আনন্দ মার্গের আবাসিক স্কুলে আটকে থাকা ওই দুই পড়ুয়াকে শনিবার তালা ভেঙে উদ্ধার করলেন বাসিন্দারা। খবর পেয়ে পুলিশ দুই পড়ুয়া সুদীপ দাস ও অজয় শেঠকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
আনন্দ মার্গ-র জনসংযোগ সচিব স্বামী দিব্যচেতনানন্দ অবধূত বলেন, “কালনায় আমাদের কোনও সন্ন্যাসী নেই। কার দায়িত্বে ছাত্রদের ছেড়ে গিয়েছিলেন তা জানতে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।” পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তাঁরা মামলা রুজু করেছে। উদ্ধার হওয়া বছর ছয়েকের সুদীপের বাড়ি কালনারই মহিষমর্দিনী এলাকায়। তাকে বাড়ির লোকেরা নিয়ে যায়। বছর পাঁচেকের অজয় ওড়িশার বাসিন্দা। তাকে একটি বেসরকারি হোমে পাঠানো হয়েছে। |
স্থানীয় বধূ সরস্বতী সাহা বলেন, “শুক্রবার বিকেলে স্কুলের ছাদে ওই দুই শিশুকে বিপজ্জনক ভাবে খেলতে দেখে সাবধান হতে বলি। তখনই ওদের কাছে জানতে পারি, স্কুলে সন্ন্যাসী স্যার নেই। দরজায় তালা মেরে তিনি নবদ্বীপে গিয়েছেন। মঙ্গলবার ফিরবেন বলে জানিয়ে গিয়েছেন। ছেলেগুলো খাবার চায়।” খবর পেয়ে স্থানীয়েরা পাঁচিল টপকে তাদের উদ্ধার করে। পরে এক যুবক রাতে তাদের দেখাশোনার দায়িত্ব নেন। তাঁর সঙ্গেই ওই দুই শিশু স্কুলে ফেরত যায়। এ দিন সকালে ওই যুবককে দেখতে না পেয়ে বাসিন্দারা বেলা ১১টায় তালা ভেঙে ওই দুই শিশুকে উদ্ধার করেন।
বাসিন্দারা জানান, স্কুলের প্রধান শিক্ষক জগৎপতি মণ্ডল ওই দুই ছাত্রের দেখাশোনা করতেন। তিনি নিজেও হস্টেলে থাকতেন। সপ্তাহখানেক আগে তিনি ভেলোরে চিকিৎসা করাতে যান। ওই দুই ছাত্রের দায়িত্ব দিয়ে যান এক সন্ন্যাসীর উপর। কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকেই ওই সন্ন্যাসীকে এলাকায় দেখা যায়নি। পুলিশ জানায়, সুদীপ তাদের কাছে জানিয়েছে, দু’দিন আগে সন্ন্যাসী স্যার নবদ্বীপ যাচ্ছেন বলে তাদের স্কুলে রেখে চলে যান। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন কালনার উপপুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগ। তিনি পুলিশকে খবর দেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮০ সালে আনন্দ মার্গ এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করে। গত এক দশক ধরে স্কুলটির পরিকাঠামো খারাপ হতে শুরু করায় অনেক অভিভাবক তাঁদের বাচ্চাদের ছাড়িয়ে নিয়ে যান। রয়ে গিয়েছিল ওই দুই পড়ুয়া। তাঁদের এ ভাবে আটকে রাখায় বাসিন্দারা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। চেষ্টা করেও প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। |