মন্ত্রীদের বয়ানই উঠে এল ভাঙড়ের পুলিশি রিপোর্টে
যা আশঙ্কা করা হয়েছিল, তাই সত্যি হল!
৮ জানয়ারি ভাঙড়ের বামনঘাটায় গুলি, গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা নিয়ে মহাকরণে সাংবাদিক বৈঠকে চার চার জন মন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছিলেন, ওই দিন আক্রান্ত হয়েছিলেন তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামই। হামলাকারীরা সিপিএমের। এর পরে প্রশাসনিক মহলেই প্রশ্ন উঠেছিল, তা হল আর পুলিশের তদন্তের কী দরকার। সরকারের চার জন হেভিওয়েট মন্ত্রী ঘটনা ব্যাখ্যা করার পরে পুলিশের পক্ষে অন্য কোনও রিপোর্ট দেওয়া সম্ভব কি না, উঠেছিল সেই প্রশ্নও। বাস্তবেও সেটাই হল।
চার মন্ত্রী মহাকরণে দাঁড়িয়ে বামনঘাটার ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছিলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে জমা পড়া রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের এডিজি-র রিপোর্টে কার্যত সেই বর্ণনারই প্রতিধ্বনি হল। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘ওই দিন (৮ জানুয়ারি) দুপুরে ভাঙড়ের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক আরাবুল ইসলাম বামনঘাটা বাজারে দলীয় অফিসে বসে কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। সেই সময় আচমকা সাত্তার মোল্লা নামে এক সিপিএম নেতার নেতৃত্বে সিপিএমের কর্মীরা ওই পার্টি অফিস আক্রমণ করে। তাঁদের হাতে ছিল মারণাস্ত্র। তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে তারা ভাঙচুর চালায়। কয়েক জন তৃণমূল সমথর্ককে মারধরও করে তারা। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িতে তারা আগুনও লাগিয়ে দেয়। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ ১২ জন সিপিএম কর্মীকে গ্রেফতার করেছে’।
শুক্রবার ছাড়া পেলেন আরাবুল ইসলাম। নার্সিংহোম থেকে
জানানো হয়েছে, তিনি সুস্থ। সব রিপোর্ট স্বাভাবিক। —নিজস্ব চিত্র
মহাকরণ সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো ওই রিপোর্টই রাজ্যপালকে জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রসচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি। এবং সেই রিপোর্টে রাজ্যপাল অসন্তুষ্ট হন। তাঁর পরেই রাজ্যপাল প্রকাশ্যে জানিয়ে দেন, তিনি প্রশাসনিক ব্যবস্থায় খুশি নন। তা নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছে। গোয়েন্দা দফতরের ওই রিপোর্ট নিয়ে খুশি নন রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তারাও। এক কর্তা বলেন, “ওই দিন ঘটনার পরে বিভিন্ন বৈদ্যুতিন মাধ্যমে আরাবুল ইসলাম নিজে যে বিবৃতি দিয়েছেন, তার সঙ্গে গোয়েন্দা রিপোর্ট একেবারেই মিলছে না।”
বৈদ্যুতিন মাধ্যমে সে দিন আরাবুল বলেন, “গাড়িতে ছিলাম। সিপিএমের গাড়ি থেকে গুলি চালাচ্ছিল। নীচে পড়ে গেলাম। তখনও গুলি চলছে। দলের ছেলেরা আমাকে বাঁচায়।” স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তাটি বলেন, “রাজ্যপাল কেন, যারা সে দিন পুরো ঘটনা বৈদ্যুতিন মাধ্যমে দেখেছেন এবং পর দিন সংবাদপত্রে পড়েছেন, তাঁরাই গোয়েন্দা রিপোর্টের বয়ান জানলে ক্ষুব্ধ হতেন।” ওই কর্তাটির কথায়, “এটা প্রাথমিক রিপোর্ট। তাড়াহুড়ো করেই তা পাঠানো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তাই সবিস্তার রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। তা হাতে আসার পরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজভবনেও তা পাঠানো হবে।”
গোয়েন্দা দফতরের ওই রিপোর্ট মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে কিন্তু স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তাদের অন্য সমস্যাও ছিল। কারণ, আরাবুল ইসলাম যে আহত হয়েছেন, তার কোনও উল্লেখই রিপোর্টে নেই! ওই রিপোর্ট মহাকরণ মেনে নিলে প্রশ্ন উঠত, তা হলে আরাবুল নার্সিংহোমে ভর্তি হলেন কেন? সিপিএমের ওই হামলায় তৃণমূলের কত জন আহত হয়েছেন, তাঁদের আঘাত কতটা গুরুতর সেই প্রসঙ্গ ওঠেইনি রিপোর্টে। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তার মন্তব্য, “রিপোর্টের ওই একটি অংশের সঙ্গেই বাস্তবের মিল রয়েছে। তা হল, ওই দিন তৃণমূলের কোনও নেতা-কর্মীর আহত না হওয়ার প্রসঙ্গটি।”
জেলা পুলিশের একটি অংশ এবং অন্য সূত্র থেকে স্বরাষ্ট্র দফতর কিন্তু ৮ জানুয়ারির ঘটনা সম্পর্কে রিপোর্ট সংগ্রহ করেছেন। সেই রিপোর্ট ঘটনার প্রত্যদর্শীদের বয়ানের সঙ্গে অনেকটাই মিলে যাচ্ছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা সে দিন জানিয়েছিলেন, ভাঙরের কাঁটাতলায় সকাল ১০টা নাগাদ আরাবুলের নেতৃত্বে তৃণমূলের মিছিল হয়। সাড়ে ১২টা নাগাদ বামনঘাটায় সিপিএমের গাড়িতে ইটবৃষ্টি শুরু হয়। গাড়িগুলি আলিপুরে সিপিএমের কর্মসূচিতে যাচ্ছিল। বোমাবাজিও হয়। ১টা নাগাদ গুলিবিদ্ধ হন তিন জন সিপিএম সমর্থক, জখম হন আরও ৬ জন। ৯টি গাড়িতে আগুন লাগানো হয়। দেড়টা নাগাদ তৃণমূলের তরফে জানানো হয়, আরাবুলও আক্রান্ত। পৌনে ২টো নাগাদ জখম সিপিএম কর্মীদের হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। পৌনে তিনটে নাগাদ আরাবুল চিনার পার্কের নার্সিং হোমে ভর্তি হন।
সরকারি সূত্রের খবর, জেলা পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের এই রিপোর্ট পেয়ে বিব্রত মহাকরণের কর্তারা। নিজস্ব সূত্র মারফত তাঁরা যে খবর পেয়েছেন, তার সঙ্গে সরকারি রিপোর্টের কোনও মিল না থাকায় ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রেও তাঁরা নিরুপায়। তা ছাড়া সে দিনের ঘটনা নিয়ে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার কথা তুলেছেন। সংবাদমাধ্যম জ্বলন্ত সারবদ্ধ গাড়ির ছবি দেখালেও সেখানে কোনও পুলিশ ছিল না। জেলার পুলিশ কর্তারা অবশ্য জানান, দু’পক্ষের হাতে যা অস্ত্রশস্ত্র ছিল, তাতে পুলিশ গেলে আরও ভয়াবহ কাণ্ড হতে পারত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে গুলি চালাতে হত।
সেই কারণেই পুলিশ ঘটনার সময় বামনঘাটা বাজারে যায়নি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.