দুর্ঘটনা রুখতে এবং যাত্রী-সুরক্ষা বাড়াতে তৈরি হয়েছে নতুন নিয়ম। তবুও বদলায়নি রোজকার ছবিটা। অভিযোগ, কলকাতা, উত্তর শহরতলি বিশেষ করে বারাসতের বিভিন্ন রুটে বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে অটো-রাজ এখনও অব্যাহত। সরকারি বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রতিনিয়তই অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া চলছে।
পর পর অটোর দৌরাত্ম্যের খবর শিরোনামে আসার পরে যাত্রী-সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে কিছু নিয়ম চালু করে রাজ্য পরিবহণ দফতর। তাতে বলা হয়, কোনও রুটেই চার জনের বেশি যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করা যাবে না। কলকাতা ও উত্তর শহরতলির বিভিন্ন রুটে অটোর ভাড়াও বাড়ানো হয়। কিন্তু কয়েক দিন যেতে না যেতেই বারাসত, মধ্যমগ্রাম ও দুর্গানগর রুটে অটোর দৌরাত্ম্য আবার পুরনো চেহারায় ফিরে এসেছে বলে অভিযোগ। |
বড় রাস্তায় চার জনের বদলে পাঁচ জন এবং ভিতরের রাস্তায় কখনও কখনও ছ’জন যাত্রী নিয়েও চলছে অটো।
যাত্রীদের অভিযোগ, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশি ভাড়া চাইতে শুরু করেন অটোচালকেরা। নির্দিষ্ট রুটেও পুরোটা যেতে চান না। প্রতিবাদ করলে উল্টে যাত্রীদেরই গালিগালাজ করেন। কটূক্তির শিকার হন মহিলারাও।
অভিযোগ, যশোহর রোডে বারাসত-মধ্যমগ্রাম, বারাসত স্টেশন-হৃদয়পুর স্টেশন রুটের অটোচালকেরাও নিয়মিত পাঁচ জন নিয়ে যাতায়াত করেন। চালকের দু’পাশেই যাত্রী বসানো হয়। বারাসত স্টেশন-মোচপুল রুটে ডিজেলচালিত অটোয় কখনও কখনও ১০-১৫ জন যাত্রীও নেওয়া হয়। এমনকী, অটোর পিছনে ঝুলতে ঝুলতে যান যাত্রীরা। অভিযোগ, পুলিশ নির্বিকার থাকে। অটোচালক দেবু বিশ্বাস সাফ বললেন, “ইউনিয়নের নির্দেশ আছে। তাই ধরপাকড় হয় না।” দুর্গানগর থেকে মাঝেরহাটি, আলিপুর এবং এয়ারপোর্ট এক নম্বর গেট রুটেও চোখে পড়ে একই ছবি।
নিত্যযাত্রী বিশ্বজিৎ পাল বলেন, “চালকের বাঁ পাশে দু’জন যাত্রী বসানোর ফলে চালককে বেঁকে বসে অটো চালাতে হয়। ধারে বসা যাত্রী অটোর বাইরে ঝুলে থাকেন। এই অবস্থাতেই ব্যস্ত সড়ক দিয়ে অটো চলে। কোনও ব্যবস্থাও নেওয়া হয় না।”
যানজট এড়াতে কয়েক মাস আগেই বারাসত মহকুমার মধ্যমগ্রাম চৌমাথা, বারাসতের ডাকবাংলো মোড়, কলোনি মোড়, হেলাবটতলা মোড় ও চাঁপাডালি মোড়ের ৫০ ফুটের মধ্যে কোনও যানবাহনের স্ট্যান্ড করা যাবে না বলে বিশেষ নির্দেশ জারি করেছেন জেলাশাসক। কিন্তু এই নিয়ম কার্যত খাতায়কলমে রয়ে গিয়েছে। ওই মোড়গুলিতে অটোচালকেরা রাস্তার উপরেই অটো দাঁড় করিয়ে রেখে যাত্রী ওঠানো-নামানো করেন। সর্বক্ষণই এই নিয়মভঙ্গের পর্ব চললেও পুলিশের নথিতে নিয়মভঙ্গকারীর কোনও
হদিস নেই। |
বারাসতের তৃণমূল-সমর্থিত একটি অটো ইউনিয়নের সম্পাদক বলেন, “মন্ত্রী বা সরকারের নিয়মে নয়, অটো চলে সংগঠনের নিয়মে। কিন্তু গোষ্ঠী-কোন্দলে কোনও নিয়মই ঠিকমতো প্রয়োগ হচ্ছে না। ফলে অটোর দৌরাত্ম্য চলছেই।” উত্তর ২৪ পরগনা জেলা আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি নির্মল ঘোষের বক্তব্য: “বারাসত-সহ উত্তর ২৪ পরগনার কোনও রুটের অটোচালক সরকারি নিয়ম উপেক্ষা করে চার জনের বেশি যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করছেন, এমন তথ্য আমার জানা নেই। শীঘ্রই খোঁজ নিয়ে সংগঠনের সঙ্গে কথা বলব।”
উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল বলেন, “বিষয়টি আমার জানা ছিল না। বিভাগীয় পরিবহণ দফতরকে শীঘ্রই ধরপাকড় অভিযানের নির্দেশ দেব। যে-সব জায়গায় বিশেষ নির্দেশ জারি আছে, সেখানে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেব।”
|