দার্জিলিঙের ম্যাল। সন্ধে গড়িয়ে সবে রাত নামছে। বৃহস্পতিবার সেই সময়েই দোকান বন্ধ করে টুংসুঙে তাঁর আস্তানায় ফিরছিলেন চেংবা শেরপা (৩৭)। কিন্তু ম্যাল পেরিয়ে পাশের পাকদন্ডি ধরতেই তাঁর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে পূর্ণ বয়স্ক এক চিতাবাঘ। আঁচড়ে কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করেই ছাড়েনি তাঁকে। নির্জন সেই পাহাড়ি পথে রাতভর তার শিকার খুবলে খেয়েও গিয়েছে শ্বাপদটি। সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা চেংবার ছিন্নভিন্ন দেহ উদ্ধার করেন। বনকর্মীরা এসেই নিশ্চিত এ কাজ লেপার্ড বা চিতাবাঘের।
দার্জিলিঙের শহরতলীতে চিতাবাঘের আনাগোনা নতুন নয়। গত ২৬ ডিসেম্বর শহরের আভা আর্ট গ্যালারির কাছেই দেখা মিলেছিল একটি চিতাবাঘের। এক বনকর্মী-সহ দু-জনকে গুরুতর জখমও করেছিল সে। বহু খুঁজেও তার হদিস না পেয়ে অগত্যা খাঁচা পেতেই ফিরে আসতে হয়েছিল বমকর্মীদের। তা বলে খোদ শহরের বুকে চিতাবাঘের এমন দাপাদাপি দার্জিলিঙের ইতিহাসে বিরল। শেষ কবে শহরের ম্যাল বা তার আশপাশে তাদের দেখা মিলেছিল বহু নথি ঘেঁটেও বন দফতর বা শহরের প্রবীণ বাসিন্দারা তা মনে করতে পারছেন না।
চেংবার স্ত্রী পেটে ভুটিয়ার ম্যালের চৌরাস্তায় ছোট্ট একটি কাপড়ের দোকান রয়েছে। সন্ধ্যায় সেখান থেকেই ১ নম্বর জহর বস্তিতে নিজের বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি। |
রাতে না ফেরায় বাড়ির লোকজন ভেবেছিলেন ঠান্ডা প্রবল হওয়ায় শহরেই কারও বাড়িতে হয়তো থেকে গিয়েছেন চেংবা। সকালে প্রাতর্ভ্রমণকারীরা তাঁদের খবর দেন লোয়ার টুংসুং রোডে পড়ে আছে চেংবার ক্ষতবিক্ষত দেহ।
স্থানীয় বাসিন্দারা প্রথমে ভেবেছিলেন এ কাজ পাহাড়ি কুকুরের। তবে বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে এসেই জানিয়ে দেন, এ কাজ চিতাবাঘের। বন বিভাগের ওয়াইল্ড লাইফ স্কোয়াড-১’র রেঞ্জ অফিসার কাঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এ কাজ পূর্ণ বয়স্ক কোনও চিতাবাঘের। একমাত্র বড় মাপের কোনও শ্বাপদই এ কাজ করতে পারে।” তাকে ধরতে শুক্রবার সকালে টুংসুং এলাকায় দুটি খাঁচাও পেতেছে বন দফতর। দার্জিলিঙের বনাধিকারিক (বন্যপ্রাণ-১) বাসব রাজ বলেন, “এলাকার পাশেই ছোট ছোট ঝোরা, নদী এবং জঙ্গল। এলাকাটি চিতাবাঘের আদর্শ ঠিকানা।”
দার্জিলিং এমনিতে রাত-জাগা শহর। তবে গত কয়েক দিনের ঠান্ডায় স্বাভাবিক ভাবেই সন্ধে থেকেই শহর সুনসান হয়ে পড়ছে। এ দিন শেষ বিকেল থেকেই শহর জুড়ে স্পষ্ট আতঙ্ক। এমনকী রাতে ম্যালে ঘুরে বেড়ানো পর্যটকদের অনেকেই সাত তাড়াতাড়িই ফিরে গিয়েছেন হোটেলে। আতঙ্কে যেন জড়সড় হয়ে রয়েছে দার্জিলিং। |