সম্পাদকীয় ১...
স্বার্থই ভরসা
কূটনীতি শব্দটি সার্থকজন্মা। খুব কম শব্দই আপন প্রকৃতার্থের প্রতি এমন বিশ্বস্ত থাকিতে পারে। গত কয়েক দিন যাবৎ ভারত ও পাকিস্তানের পারস্পরিক সম্পর্ক যে পথে চলিতেছে, তাহা কূট নীতির এক তাৎপর্যপূর্ণ উদাহরণ। আপাতদৃষ্টিতে সীমান্তের অশান্তি লইয়া যাহা দেখা যাইতেছে, যাহা শোনা যাইতেছে, দুই রাষ্ট্রের নেতা, প্রতিনিধি ও মুখপাত্রদের যে সওয়াল-জবাব চলিতেছে, তাহার গভীরে রহিয়াছে নানা জটিল অঙ্ক। সেই অঙ্কের সম্পূর্ণ সমাধান জানিতে বিস্তর বিলম্ব হইতে পারে। গণিতশাস্ত্রে কিছু কিছু কঠিন অঙ্কের সমাধান আজও হয় নাই, কূটনীতিই বা কম কীসে? আপাতত কেবল কিছু সঙ্কেত রহিয়াছে। দুই ভারতীয় সৈনিকের মর্মান্তিক মৃত্যুর পরে ভারতের বিদেশ মন্ত্রী সলমন খুরশিদ তীব্র ভাষায় এই ঘটনার নিন্দা করিয়াছেন এবং প্রায় এক নিশ্বাসে বলিয়াছেন, ভারত চাহে না, এই ঘটনা হইতে অশান্তির মাত্রা আরও বাড়ুক, কিন্তু পাকিস্তান সরকার এই বিষয়ে দ্রুত প্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া না জানাইলে দুই দেশের আলোচনাভিত্তিক শান্তিপ্রক্রিয়া বিপন্ন হইতে পারে। অন্য দিকে, পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার ভারতের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের পরে জানাইয়াছেন, ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতি মান্য করিতে তাঁহার দেশের সরকার আন্তরিক ভাবে দায়বদ্ধ, তিনি আশা করিবেন, শান্তিপ্রক্রিয়া বহাল থাকিবে। ইতিমধ্যে দুই দেশের রাষ্ট্রদূতকেই অপর দেশের সরকারি সমালোচনা শুনিতে হইয়াছে, দিল্লি এবং ইসলামাবাদ উভয়েই অপরের বিরুদ্ধে সীমান্তে অশান্তি সৃষ্টির অভিযোগ তুলিয়াছে। দুই মন্ত্রীর কথাতেও সেই তিরস্কারের প্রতিধ্বনি ছিল, কিন্তু তাহার পরে ছিল শান্তির পথ হইতে সরিয়া না আসিবার অনুজ্ঞা।
অভিযোগ, তিরস্কার, সমালোচনা, সকলই অত্যন্ত প্রত্যাশিত। পাকিস্তান হইতে ভারতে সীমান্ত অতিক্রমী গুলিবর্ষণের ঘটনা গত এক বছরে বিস্তর বাড়িয়াছে, ইহা সুস্পষ্ট সরকারি তথ্য। যে নৃশংসতার সহিত দুই তরুণ ভারতীয় সেনাকে হত্যা করা হইয়াছে, তাহাও অত্যন্ত গর্হিত এবং মর্মান্তিক। ভারত এই অন্যায়ের জন্য ইসলামাবাদের নিকট জবাবদিহি চাহিবে, ইহাই প্রত্যাশিত। এই অন্যায়ের বাস্তবটিকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলিয়া ধরাও ভারতের কূটনীতির অবশ্যকর্তব্য। কিন্তু ‘বদলা চাই’, ‘যুদ্ধং দেহি’ বলিয়া যাঁহারা ভারতীয় রাষ্ট্রযন্ত্রকে রণক্ষেত্রে নামিবার আহ্বান জানাইতেছেন, তাঁহারা কূটনীতির ক্ষতি করিতেছেন, দেশেরও। পাকিস্তানের সহিত শান্তি কবে প্রতিষ্ঠিত হইবে, তাহা সম্পূর্ণ অনিশ্চিত, কিন্তু পাকিস্তানের সহিত সংঘাত অন্তত প্রশমিত রাখিতে পারিলেই ভারতের মঙ্গল, তাহাতে কোনও সন্দেহ নাই।
দ্বিপাক্ষিক সংঘাতের আশঙ্কা অন্য কারণেও ক্ষতিকর। পাকিস্তানের সমাজ এবং রাজনীতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে অস্থিরতা, জঙ্গিয়ানা এবং সন্ত্রাসের প্রকোপ। তদুপরি, অদূরে দেশে সাধারণ নির্বাচন। এই পরিস্থিতিতে ভারতের সহিত নূতন অশান্তি সে দেশের অশুভ শক্তিগুলিকে উৎসাহিত করিবে, তাহাদের ক্ষমতাও বাড়াইয়া তুলিবে, বিভিন্ন শিবিরের রাজনীতিকরা না চাহিলেও সেই তাহাদের দ্বারা প্রভাবিত হইতে বাধ্য হইবেন, নির্বাচনের সময় ভারত-বিরোধিতার পারদ না চড়াইয়া তাঁহাদের উপায় থাকিবে না। তাহাতে দেশের ক্ষতি, রাষ্ট্রেরও, কিন্তু অনেক সময়েই রাজনীতি এবং রাষ্ট্রের স্বার্থ পরস্পরবিরোধী হইয়া থাকে। ভারত নিজেও তাহার সাক্ষী। পাশাপাশি, ইসলামাবাদের চিরাচরিত লক্ষ্য, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে আন্তর্জাতিক শক্তিকে টানিয়া আনা। সীমান্তের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির ‘তদন্ত’ করিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের পর্যবেক্ষকদের ডাকিবার জন্য পাকিস্তানের প্রস্তাব যে এই অভিসন্ধিতেই, তাহা লইয়া কিছুমাত্র সংশয় নাই, এই প্রস্তাব পত্রপাঠ উড়াইয়া দিয়া ভারত ঠিক কাজ করিয়াছে, ভারত ও পাকিস্তানের সমস্যা সমাধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের প্রশ্ন নাই, এই কথাটি বুঝাইয়া দিয়া ওয়াশিংটনও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়াছে। পাকিস্তানের শাসকরাও জানেন, সেই ওয়াশিংটনও নাই, সেই ভারতও নাই, এখন সীমান্তে অশান্তি তাহার অভ্যন্তরীণ শান্তিতে ব্যাঘাত ঘটাইবে। বিদেশ মন্ত্রীর ‘শান্তির আশা’ সেই স্বার্থবোধের তাড়নাতেই। স্বার্থই ভরসা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.