মাঠ ভরা দর্শক। ফুটবল-পাগল জনতা। প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড আর লিভারপুল। স্থান: ম্যাঞ্চেস্টার, ওল্ড ট্রাফোর্ডে স্থানীয় ক্লাব ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের মাঠ। সেই মাঠে ‘জায়ান্ট স্ক্রিন’। কাল, রবিবার সেই জায়ান্ট স্ক্রিনে ফুটে উঠবে বঙ্গসন্তানের ছবি! যুযুধান দুই ক্লাবের কোনও খেলোয়াড় নন। তিনি নিখোঁজ শৌভিক পাল। তাঁর সন্ধান পেতেই ফুটবলের ওই বড় আসরকে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর রাতে ম্যাঞ্চেস্টারে একটি নাইট ক্লাবের সামনে থেকে হারিয়ে যাওয়া বঙ্গসন্তান শৌভিককে খুঁজে পেতে মরিয়া সেখানকার পুলিশ। তদন্তের দায়িত্বে গোয়েন্দা-প্রধান কলিন লারকিন। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের কর্তাদের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। রবিবার ওই স্টেডিয়ামে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড বনাম লিভারপুল বড় ম্যাচে প্রচুর দর্শক হবে। সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগাতে চাইছে লারকিন-বাহিনী। বিশাল পর্দায় শৌভিকের ছবি দেখে কেউ যদি কোনও হদিস দিতে পারে, আশায় আছে পুলিশ। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের ওই মাঠের সাহায্য নেওয়ার আরও একটি কারণ আছে। সেটা হল, ওই মাঠের সঙ্গে বাঙালি ছেলেটির সম্পর্ক। লারকিন জানান, শৌভিক ওই মাঠে কাজ করতেন। পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য। মূলত দর্শকদের পানীয় সরবরাহ করতেন তিনি। তাই মাঠে যাঁরা নিয়মিত যাতায়াত করেন, তাঁদের অনেকেই ওঁকে চেনেন। তাই ঠিক হয়েছে, খেলা শুরু হওয়ার আগে এবং বিরতিতে জায়ান্ট স্ক্রিনে শৌভিকের ছবি দেখানো হবে। পুলিশের তরফে ঘোষণা করা হবে, ‘‘আপনাদের পরিচিত এই যুবকটিকে ৩১ ডিসেম্বর থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। কোথাও এঁকে দেখতে পেলে গ্রেটার ম্যাঞ্চেস্টার পুলিশকে জানান।’’
লারকিন বললেন, “হতেও তো পারে, দর্শকদের মধ্যে কেউ ওঁকে এর মধ্যে কোথাও দেখেছেন। সেটা আমাদের সাহায্য করতে পারে।” তিনি জানান, হারিয়ে যাওয়ার মাত্র দু’দিন আগে, ২৯ ডিসেম্বরও ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড বনাম ওয়েস্ট ব্রম ম্যাচে দর্শকদের পানীয় সরবরাহ করেছিলেন শৌভিক। “তাই ওঁর মুখ অনেকেরই চেনা,” বললেন লারকিন।
ছেলেকে ফিরে পেতে চিঠি লিখে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন শৌভিকের মা মহুয়া পাল। তাঁর আর্জি, আরও জোরদার তল্লাশির ব্যবস্থা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী যেন বিদেশ মন্ত্রককে নির্দেশ দেন। সন্তানের ছবি নিয়ে স্থানীয় মন্দির থেকে নাইট ক্লাব সর্বত্র ছুটে বেড়াচ্ছেন শৌভিকের বাবা শান্তনু পাল। শুক্রবার ম্যাঞ্চেস্টার থেকে ফোনে তিনি বললেন, “কোনও সদর্থক খবর পাচ্ছি না। পুলিশ এখনও সিসিটিভি-র ছবি দেখে যাচ্ছে। আমাকেও দেখিয়েছে। তবে সেটি ঘটনার রাতের। নাইট ক্লাবের বাইরের ছবিটুকুই দেখেছি। মুখ স্পষ্ট না-হলেও হাঁটাচলা দেখে মনে হয়েছে, ওটা শৌভিকেরই ছবি।” তিনি বার্মিংহামে ভারতীয় দূতাবাসের অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। দূতাবাসও এই বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছে বলে জানান শান্তনুবাবু। |