|
|
|
|
হোমে অব্যবস্থা দক্ষিণ দিনাজপুরে |
অবহেলায় পালাচ্ছে হোমের আবাসিকরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বালুরঘাট |
সরকারি কর্তা পরিদর্শনে এলে ভাল খাবার জোটে। অন্য দিন জলের মতো ডাল, বাঁধাকপির ঘ্যাঁট। মুখে তুলতে ইচ্ছে করে না। দক্ষিণ দিনাজপুরের একমাত্র সরকারি হোম বালুরঘাটের শুভায়নই নয়, জেলার আটটি হোমের আবাসিকদের অবস্থাই কার্যত একই রকম বলে অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে হোম থেকে শিশু-নাবালকদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। বালুরঘাটের সরকারি হোম থেকেই গত দু’বছরে ৪৫ জন শিশু-কিশোর আবাসিক পালিয়েছে। কয়েক জনকে ফেরানো গিয়েছে। অনেককেই যায়নি। তবে পরিস্থিতি আগের থেকে ভাল বলে দাবি করেছেন জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক কমলেশ বিশ্বাস। গত অগস্টে হুগলির গুড়াপ হোমে আবাসিক গুড়িয়ার দেহ উদ্ধারের পরে রাজ্যের হোমগুলির দুর্দশা নিয়ে নড়েচড়ে বসেছিল সরকার। সে সময়ে কথা উঠেছিল হোমগুলিতে প্রশাসনিক নজরদারিতে জোর দেওয়ার। গুড়াপের সেই ঢেউ থিতিয়ে গিয়েছে। হোমের অব্যবস্থার সমস্যাও রয়ে গিয়েছে সেই তিমিরেই। তবে রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণমন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের বক্তব্য, “এমন হওয়ার কথা নয়। নিয়মিত হোমগুলি পরিদর্শনের বিষয়ে বিভাগীয় অফিসারদের সঙ্গে কথা বলব।” হোমের পরিস্থিতি দেখতে শীঘ্রই দক্ষিণ দিনাজপুরে যাবেন বলেও জানান তিনি।
প্রচণ্ড শীতেও কম্বল নিয়ে টানাটানি। এক কম্বলে গাদাগাদি করে রাত কাটাতে হয় বালুরঘাটের নিবেদিতা বালিকা হোমের আবাসিকদের। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত ওই হোমে থাকে দুঃস্থ, অনাথ নাবালিকারা। ওই হোমের একাধিক আবাসিক কিশোরীর বক্তব্য, “কষ্টের কথা হোমের দিদিমণিদের বললে ধমক খেতে হয়।” আবাসিকদের ক্ষোভ রয়েছে খাবারের মান নিয়ে। কয়েকজন বলল, “সকালে মুড়ি। দুপুরে একটা ঘ্যাঁটের মতো তরকারি, ভাত। বিকেলে টিফিন নেই। রাতে ট্যালট্যালে ডাল আর ভাত। কোনও দিন ঘাঁটা সব্জি-ভাত। খাওয়ার ইচ্ছেটাই হয় না অর্ধেক দিন।” খাবার নিয়ে প্রায় একই রকম অভিজ্ঞতা শুভায়ন হোমের আবাসিকদেরও। তাদের বক্তব্য, “ইনস্পেক্টর এলে ভাল খাবার পাই। ওঁরা যে কেন রোজ আসেন না!”
কেন এই অবস্থা? বেসরকারি হোম পরিচালকদের বক্তব্য, মাথাপিছু আর্থিক বরাদ্দ কম। সরকারি টাকা নিয়মিত মেলে না। তার উপরে মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে বরাদ্দ না বাড়ায় ভরণপোষণের মান ঠিক রাখা যাচ্ছে না। জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক জানান, তাঁদের অনুমোদিত পাঁচটি হোমের আবাসিকদের ভরনপোষণ, লেখাপড়া ও চিকিৎসার খরচ বাবদ আবাসিকপিছু প্রতি মাসে ১,১০০ টাকা করে দেওয়া হয়। জনশিক্ষা দফতর দু’টি হোমের আবাসিকদের জন্য মাথাপিছু ৯০০ টাকা বরাদ্দ করে। তবে শুধু বরাদ্দের ঘাটতি নয়, হোমে আবাসিকদের দুর্দশার পিছনে অন্য কারণও রয়েছে বলে মত জেলা প্রশাসনের কর্তাদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমাজকল্যাণ দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “বরাদ্দ টাকার সবটা আবাসিকদের জন্য খরচ করা হয় না। এ জন্য দায়ী সরকারি নজরদারির অভাব।”
সরকারি নিয়মে প্রতি মাসে হোমগুলিতে সমাজকল্যাণ দফতর থেকে পরিদর্শনের কথা বলা থাকলেও দক্ষিণ দিনাজপুরে ছ’মাস কিংবা এক বছরে এক বারের বেশি হোম পরিদর্শন হয় না বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। ফলে, বদলায় না পরিস্থিতি। সম্প্রতি বালুরঘাটে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত ও জনশিক্ষা প্রসার দফতরের অর্থসাহায্য প্রাপ্ত একটি হোমের এক বালিকাকে নির্যাতনের ঘটনা জনসমক্ষে আসার পরে হইচই হয়েছিল। জনরোষে ভাঙচুর হয় ওই হোমে। সরকারি ভাবে তদন্তের কথা বলা হলেও পরে সব ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে। নিয়মিত হোম পরিদর্শনে সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক। তিনি বলেন, “কর্মীর অভাবে নিয়মিত পরিদর্শনে সমস্যা হচ্ছে। সমস্যা কাটানোর চেষ্টা চলছে।” |
|
|
|
|
|