চাষিদের আপত্তিতে পুলিশ নিয়ে গিয়ে স্কুল ভবন তৈরির জন্য মাটি পরীক্ষার কাজ করল জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার দুপুরে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের হোসেনপুর এলাকার ঘটনা। ওই এলাকায় প্রায় সাড়ে ৬ একর সরকারি খাসজমি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় তৈরির জন্য গত সেপ্টেম্বর মাসে স্কুল কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করে জেলা প্রশাসন। ওই খাসজমিতে ইতিমধ্যে এলাকার ৩৫ জন কৃষক দীর্ঘদিন ধরে চাষ করেন। ফলে, বিকল্প জমির ব্যবস্থা না করে তাদের উচ্ছেদ করা চলবে না বলে এদিন চাষি পরিবারের মহিলা-পুরুষেরা কাজে আপত্তি তুলে বিক্ষোভ দেখানো হয়।
এলাকার চকবাখর, রায়নগর, হোসেনপুর গ্রামের চাষি বুকা ওঁরাও, মঙ্গল ওঁরাও, কারমা ওঁরাও, রাকা ওঁরাও, মন্টু ওঁরাওরা বলেন, “জোর করে চাষের জমি কেড়ে নেওয়া হবে না বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন। অথচ তাঁর সরকারের প্রশাসন আমাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করতে চাইছে।” তাঁদের বক্তব্য, “বাপ-ঠাকুর্দার আমল থেকে ওই জমিতে তাঁরা ধান, গম সর্ষের মতো বছরে তিনটি ফসলের চাষ করছেন। বিকল্প ব্যবস্থা না হলে তাঁরা পরিবার নিয়ে পথে বসবেন।’’ |
চলছে জমি পরীক্ষা। নিজস্ব চিত্র। |
বালুরঘাটের মহকুমাশাসক প্রতিমা দাস বলেন, “সরকারি এই খাস জমির পাট্টা কাউকে দেওয়া হয়নি। জমি কারও নামে রেকর্ডও নেই। ফলে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়কে স্কুলবাড়ি তৈরির জন্য ৬.৪৪ একর জমি দেওয়া হয়েছে। এদিন স্কুলের তরফে ইঞ্জিনীয়ারের মাটি পরীক্ষা করতে গেলে বাসিন্দারা বাধা দেন। পুলিশি সহায়তা দেওয়া হয়েছে।” চাষিদের পুনর্বাসনের পক্ষে সওয়াল করেছেন আরএসপির জেলা সম্পাদক তথা প্রাক্তন কারা ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী বিশ্বনাথ চৌধুরী। তিনি বলেন, “উন্নয়ন কাজের জন্য দীর্ঘদিন আগে সরকার থেকে হোসেনপুর এলাকায় ওই খাস জমি চিহিৃত করা হয়। কাউকে পাট্টাও দেওয়া হয়নি। তবে ফেলে রাখা ওই জমিতে দীর্ঘদিন যাবত চাষিরা চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদেরও একটা অধিকার জন্মেছে। উচ্ছেদ হওয়া চাষিদের বিকল্প ব্যবস্থা করার জন্য প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।” এদিন মহকুমাশাসক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, মহকুমা পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে কমব্যাট ফোর্স সহ বিরাট পুলিশ বাহিনীর উপস্থিতিতে বিকেল ৫টা অবধি নির্ধারিত জমিতে মাটি পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রতীক বাগচী জানান, “বালুরঘাটের রঘুনাথপুরে পুরসভার ভাড়া বাড়িতে অস্থায়ী ভাবে স্কুলটি চলছে। এই জমিতে স্কুল ভবন তৈরিতে দুবছর সময় লাগবে।” কাউকে জমি থেকে উচ্ছেদ করে কোনও উন্নয়ন প্রকল্পের পক্ষে নয় বর্তমান তৃণমূল সরকার, রায়গঞ্জে এইমস হাসপাতাল গড়ার প্রসঙ্গে গত অগস্ট মাসে ইটাহারের জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ কথা ঘোষণা করেন। ইষ্ট-ওয়েস্ট করিডর তৈরির কাজও সরকারের একই জমি নীতির ফলে আটকে রয়েছে বলে অভিযোগ। তবে বালুরঘাটের ওই সরকারি খাস জমিতে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় তৈরিতে বাধাদানের বিপক্ষে সওয়াল করেছেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর রায়। তিনি বলেন, “যারা বাধা দিচ্ছেন, তারা ভুল করছেন। কারণ, আমাদের সরকার নথিভুক্ত চাষিদের জমি থেকে উচ্ছেদের বিপক্ষে। সরকারি জমিতে, সরকারি প্রকল্পের কাজে যারা বাধা দিচ্ছেন, তারা অন্যায় করছেন।” পাশাপাশি, আরএসপি-র জেলা নেতা অসিতবন্ধু ঘোষ জানান, প্রকল্পটি অন্যত্র চলে যাক তা তাঁরাও চান না। |