তফিল মহম্মদের ইচ্ছে ছিল সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর সামনে গিয়ে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির জন্য জমি দেওয়ার কথা জানাবেন। ইলিয়াস আলি, বিশু মহম্মদের মতো এমনই ৫০ জন চাষিরও ইচ্ছে ছিল একই। কিন্তু, তার আগেই পুলিশ গ্রেফতার করায় সেই ইচ্ছে পূরণ হয়ে ওঠেনি। বৃহস্পতিবার কলকাতায় মহাকরণ অভিযানে অংশ নেওয়ার পরে রায়গঞ্জের পানিশালার ওই চাষিরা অবশ্য হতাশ হননি। বরং তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী দিনে ফের তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সামনে গিয়ে জমি উপযুক্ত দামে নেওয়ার জন্য আর্জি জানাবেন। পানিশালা এলাকায় হাসপাতাল তৈরির জন্য জেলা প্রশাসনের চিহ্নিত করা জমির ৮৪ জন মালিক তথা চাষি রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এদিন ৫০ জন মহাকরণ অভিযানে সামিল হয়েছিলেন।
রায়গঞ্জের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি বলেন, “রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির দাবিতে এত দিন উত্তরবঙ্গ জুড়ে আন্দোলন হয়েছে। এ দিনের মহাকরণ অভিযানের মাধ্যমে এ বারে রাজ্য জুড়ে আন্দোলনের সূচনা করা হল। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, জোর করে জমি অধিগ্রহণ করবেন না। কিন্তু পানিশালা এলাকার চাষিরা স্বেচ্ছায় জমি দিতে রাজি রয়েছেন। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বন্ধ করে রাজ্য সরকারের উচিত অবিলম্বে রায়গঞ্জে জমি অধিগ্রহণ করা। জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু না হওয়া পর্যন্ত কংগ্রেসের আন্দোলন চলবে।” মহাকরণ অভিযানকে ঘিরে পানিশালায় ব্যাপক উদ্দীপনা ছিল। সে কারণে উত্তর দিনাজপুর জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্তের ডাকে জেলা থেকে দলে দলে কংগ্রেস কর্মীরা যোগ দেন ওই অভিযানে। পানিশালা এলাকার ৫০ জন চাষি তথা জমির মালিক উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পেলে স্বেচ্ছায় জমি দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশের কথা নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখে নিয়ে গিয়েছিলেন। এ দিন অভিযানের পরে চাষিরা বলেন, “এতদিন জমি অধিগ্রহণের দাবিতে রায়গঞ্জে আন্দোলন করেছি। এবারে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পেলে আমাদের জমি দেওয়ার ইচ্ছেপ্রকাশের কথা মহাকরণ পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পেরে আমরা খুশি। ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে লিখিত ভাবে স্বেচ্ছায় জমি দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশের কথা জানাতে পারব।” জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দের অভিযোগ, রাজ্য সরকার পরিকল্পিত ভাবে পুলিশ দিয়ে তাঁদের গ্রেফতার করায়, চাষিরা মহাকরণে গিয়ে জমি অধিগ্রহণের দাবিতে স্মারকলিপি জমা দিতে পারেননি। চাষিরাও স্বেচ্ছায় জমি দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশের কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, “যাই হোক, আমাদের আন্দোলন সার্থক। কারণ, চাষিরা যে হাসপাতাল তৈরির জন্য স্বেচ্ছায় জমি দিতে রাজি রয়েছেন, সেই বার্তাটুকু তো অন্তত রাজ্য সরকারের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হল।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত বলেন, “শৈত্যপ্রবাহ, বয়স্ক ও অসুস্থতার কারণে বাকিদের আন্দোলনে সামিল করা হয়নি। যে সমস্ত চাষিরা আন্দোলনে সামিল হননি, তাঁরাও প্রতিবেশী চাষিদের দিয়ে নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বেচ্ছায় জমি দেওয়ার ইচ্ছেপ্রকাশের কথা লিখিতভাবে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।”
জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য জানান, চাষিরা যদি স্বেচ্ছায় জমি দিতে ইচ্ছুক থাকেন, তবে জমি অধিগ্রহণ করা হবে কি না তা মুখ্যমন্ত্রীই ঠিক করবেন। |