দীপঙ্কর খুনে ধৃতদের বাড়ি ভাঙচুর, বিক্ষোভ
শম শ্রেণির ছাত্র দীপঙ্কর সরকার অপহরণ ও খুনের মামলায় অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবি ও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে শিলিগুড়ি কমিশনারেটের সামনে বিক্ষোভ দেখালেন পতিরামজোতের বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা নাগাদ কমিশনারেটের সামনে জড়ো হন মাটিগাড়া থানার পতিরামের বাসিন্দারা। তাঁরা শিলিগুড়ির কমিশনার আনন্দ কুমারকে স্মারকলিপি দেন। পরে ওই বাসিন্দারা আদালত চত্বরে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। বিশৃঙ্খলার ভয়ে ধৃতদের ঘুরপথে এসিজেএম আদালতে হাজির করে পুলিশ। সন্ধ্যায় তুম্বাজোতে দুই অভিযুক্তের বাড়িতে পতিরামজোতের বাসিন্দাদের একাংশ ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ। শিলিগুড়ির ডেপুটি কমিশনার ও জি পাল বলেন, “একটি বাড়ি সামান্য ভাঙচুর হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে।”
আদালত সূত্রের খবর, ধৃত দু’জনের মধ্যে একজনের বয়স ১৮ বছরের কম থাকায় তাকে জুভেনাইল আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে বিচারক। অপর জনের বয়সের প্রমাণপত্র নিয়ে বিভ্রান্তি থাকায় আজ, শুক্রবার সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত জানাবেন বিচারক।
সরকারি আইনজীবী সুদীপ্ত বসুনিয়া বলেন, “একজনের বয়স ১৮-এর কম থাকায় তাকে জুভেনাইল বোর্ডে পাঠিয়েছে আদালত। অপরজনের যে বয়সের সার্টিফিকেট জমা দেওয়া হয়েছে তাতে অসঙ্গতি থাকায় বিচারক শুক্রবার ফের শোনানীর তারিখ রেখেছেন।” আপাতত তাকে একদিনের জন্য শিলিগুড়ি জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ধৃতদের আইনজীবী অখিল বিশ্বাস দাবি করেন, ধৃত দু’জনের কারও বয়স ১৮ হয়নি।
বুধবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে শিলিগুড়ির কমিশনার আনন্দ কুমার ধৃত দু’জনের বয়স ১৮ বছর বলে দাবি করেন। আদালত সূত্রের খবর, এ দিন মাটিগাড়া থানার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার বিচারকের কাছে যে তথ্য জমা দেন তাতেও ধৃতদের বয়স ১৮ বলে দেখানো হয়। তার ভিত্তিতে দীপঙ্করের টিউশন ব্যাগ, মানিব্যাগ, হাতের ব্রেসলেট উদ্ধারের জন্য ধৃতদের ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজত চেয়ে আবেদন করা হয়। কিন্তু পুলিশ ধৃত দু’জনের কারও কোনও বয়সের প্রমাণপত্র আদালতে জমা দিতে পারেনি। এসিজেএম মধুমিতা বসু বয়সের প্রমাণপত্র পুলিশ কেন জমা দিতে পারেনি তা নিয়ে তদন্তকারী অফিসারের কাছে জানতে চান। সে সময় তিনি জানান, ওই ঘটনা নিয়ে থানায় ক্রমাগত বিক্ষোভের জন্য বয়সের প্রমাণপত্র জোগাড় করতে পারেনি তারা। কমিশনার বলেন, “আমরা যে তথ্য পেয়েছি তার ভিত্তিতেই আদালতে ধৃতদের পুলিশি হেফাজত চাওয়া হয়। ধৃতরা ১৮-র কম বয়সের প্রমাণিত হলে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে পাঠাবে বিচারক। তাতে আমাদের কিছু বলার নেই।” পুলিশের বিরুদ্ধে গোড়া থেকেই অপহরণের মামলাটি নিয়ে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে। এদিনও পতিরামজোতের বাসিন্দারা দোষী পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি তুলে সরব হন। এলাকার বাসিন্দা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য অঞ্জলি দে সরকার, জীবন সরকার এদিনও বলেন, “পুলিশ অবহেলা না করলে দীপঙ্কর হয়তো এভাবে মারা যেত না।” দীপঙ্করের বাবা গোপালবাবুর সন্দেহ, দীপঙ্করকে অপহরণ করে খুনের ঘটনায় যে ২ জনকে ধরা হয়েছে তার বাইরেও অনেকে যুক্ত রয়েছে। তিনি বলেন, “ওই দু’জনের পক্ষে দীপঙ্করকে খুন করা সম্ভব নয়। তাদের সঙ্গে আরও দুষ্কৃতী রয়েছে। তাদের গ্রেফতার করতে হবে।” কমিশনার অবশ্য পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ মানতে নারাজ।
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে পুলিশ জেনেছে, দীপঙ্করকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। তার পর তাঁর মুখ পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নিহতের পেটে অ্যালকোহলের নমুনা মিলেছে। পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, যে দিন দীপঙ্কর অপহরণ হয়েছে তার একমাস আগে বাবার কাছে ২০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য অপহণের গল্পের ছক কষে দীপঙ্কর। ওই দু’জন বন্ধুকে সে পরিকল্পনার কথা জানায়। ৪ জানুয়ারি দীপঙ্কর পরিকল্পনা মতো বাড়ি থেকে বেরনোর আগেই তাঁকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়ে পুরো টাকা নিজেরা নেওয়ার পরিকল্পনা করে ওই দু’জন। সে মতোই একটি বাইকে করে দীপঙ্করকে তিনধারিয়ার কাছে সিপাইধুরা চা বাগানে নিয়ে যাওয়া হয়। মদ খাইয়ে বেহুঁশ করার পর দীপঙ্করকে খুন করা হয়। যে মোটর বাইকে করে দীপঙ্করকে নিয়ে যাওয়া হয় সেটি ধৃতদের একজনের বাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। ধৃত দু’জনের পরিবারের পক্ষ থেকে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, অপহরণ ও খুনের ঘটনার সঙ্গে ধৃতরা যুক্ত নন। তাদের বাড়ি ভাঙচুরের বিষয়টি পুলিশ লঘু করে দেখছে বলে অভিযোগ করেন তারা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.