আরাবুল ইসলামদের আক্রমণ কি ‘ভাল ছেলে’ বানিয়ে দিল আব্দুর রেজ্জাক মোল্লাকে! হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে তাঁর বিবৃতি এমনই জল্পনার জন্ম দিল সিপিএম মহলে! বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও নিরুপম সেনের সঙ্গে তাঁর কোনও বিরোধ নেই বলে দাবি করলেন হাসপাতালের শয্যাবন্দি রেজ্জাক। বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পরে প্রথম জনের সম্পর্কে যে রেজ্জাকের মন্তব্য ছিল, “হেলে ধরতে পারে না, কেউটে ধরতে গিয়েছে!” আর দ্বিতীয় জনকে বলেছিলেন ‘নাটের গুরু’! কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। আহত রেজ্জাকের নামে পথে নেমেছে গোটা দল। প্রতিবাদ মিছিলে পা মিলিয়েছেন বুদ্ধবাবু-নিরুপমবাবুও। এবং তার পরেই রেজ্জাকের নরম সুর।
দলের পলিটব্যুরোর দুই সদস্য বুদ্ধবাবু ও নিরুপমবাবু যে এখনও তাঁকে হাসপাতালে দেখতে আসেননি, তা নিয়েই বৃহস্পতিবার প্রশ্ন করা হয়েছিল রেজ্জাককে। সিপিএমের বর্ষীয়ান বিধায়কের বক্তব্য, “আমার সঙ্গে বুদ্ধবাবু ও নিরুপমবাবুর কোনও বিরোধ নেই। মতের পার্থক্য থাকতে পারে। ওঁরা সব সময় টেলিফোনে আমার শরীরের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। এখন দলের নানা কর্মসূচি রূপায়ণ করতে হচ্ছে। ও দিকটা ওঁরাই সব ব্যবস্থা করছেন।” দলের অন্দরের বিবাদ সরিয়ে রেখে রেজ্জাক এবং ভাঙড়ে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উপরে আক্রমণের প্রতিবাদে এককাট্টা হয়ে ময়দানে নেমেছে সিপিএম। প্রথম দিনের জড়তা কাটিয়ে মিছিলে সামিল হয়েছেন বুদ্ধবাবু-নিরুপমবাবুও। এই সময়ে তাঁদের নিয়ে বেফাঁস কোনও মন্তব্য করে রেজ্জাক যাতে অস্বস্তি ডেকে না-আনেন, তার জন্যই তাঁর দলীয় সহকর্মীদের একাংশ সতর্ক হয়ে প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রীকে দিয়ে দলের মনোবল চাঙ্গা করার চেষ্টা করেছেন বলে সিপিএম সূত্রের খবর। ভাঙড়ে গত রবিবার হামলার ঘটনায় দু’টি দাঁত ভেঙেছে রেজ্জাকের। কোমরের হাড়ে চিড় ধরেছে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এ দিনও প্রবীণ বিধায়ক বলেছেন, “কোমরে এখনও খুব ব্যথা হচ্ছে।” বিজেপি ছাড়া সব রাজনৈতিক দলের নেতারাই হাসপাতালে রেজ্জাকের সঙ্গে দেখা করছেন। কংগ্রেসের দীপা দাশমুন্সি, শঙ্কর সিংহ, প্রদীপ ঘোষ এ দিন রেজ্জাকের শরীরের খোঁজ নেন। প্রায় আধ ঘণ্টা তিন জনের সঙ্গে কথা বলেন রেজ্জাক। ঘরে তাঁরা আসার পরেই রেজ্জাক বলেন, “এসো বন্ধু! লেট আস ফাইট টুগেদার!” প্রসঙ্গত, শঙ্করবাবুর মেয়ে অসুস্থ হয়ে বুধবার গভীর রাতে ই এম বাইপাস সংলগ্ন ওই হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন।
বুধবার তৃণমূলের প্রতিবাদসভায় পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র রেজ্জাককে ‘পাগল’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। রেজ্জাকের প্রতিক্রিয়া, “আমি ১৯৭২ সালে থেকে বিধায়ক। মানুষ এত বার ভোট দিয়েছে। এত বার একটা পাগলকে মানুষ ভোট দিল কী ভাবে? আমাকে যারা পাগল মনে করে, তাদের আমি ছাগল মনে করি!” পাশাপাশি, পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, রেজ্জাক হাসপাতালে শুয়ে কী নাটক করছেন, সেটাই দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। রেজ্জাকের পাল্টা মন্তব্য, “নাটক দেখতে এলে ফুল নিয়ে এলেন কেন? টিকিট কেটে আসা উচিত ছিল।” প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের মত, বিষমদ কাণ্ডে মৃত্যুতে সরকার যদি ক্ষতিপূরণ দিতে পারে তা হলে সে দিন ভাঙরে যে গাড়িগুলো পোড়ানো হয়েছিল তার মালিকদেরও ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত। |