কলকাতা সাময়িক ভাবে মুক্তি পেলেও রাজ্য জুড়ে শৈত্যপ্রবাহ চলছেই। আগামী দু’দিন রাজ্যের সর্বত্রই কড়া শীত থাকবে বলে জানিয়ে দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
বৃহস্পতিবার সকালে সাময়িক ভাবে কলকাতার বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে ঢুকে পড়েছিল জলীয় বাষ্প। অতি ঠান্ডায় সেই জলীয় বাষ্প কুয়াশার চাদর তৈরি করেছিল। সকালের ওই কুয়াশার জন্য এ দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বুধবারের থেকে সামান্য বেড়ে হয়েছে ৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরে অবশ্য সেই কুয়াশার চাদর কেটে ফের দাপাদাপি শুরু করে দেয় উত্তুরে হাওয়া। আগামী দু’দিন মহানগরীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯-১০ ডিগ্রি মধ্যেই ঘোরাফেরা করবে বলে জানিয়েছেন আবহবিদেরা।
চলতি মরসুমে উত্তুরে হাওয়ার প্রথম ইনিংসে শুধু কলকাতা বাদ দিয়ে দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতেই একসঙ্গে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে, বুধবার অবশ্য সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পাঁচ ডিগ্রি কমে যাওয়ায় শৈতপ্রবাহ বয়ে যায় মহানগরীতেও। বৃহস্পতিবার কলকাতা ছাড়া রাজ্যের সব জেলাতেই শৈত্যপ্রবাহ বয়েছে। বর্ধমানের শিল্পাঞ্চল, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করেছে চার থেকে পাঁচ ডিগ্রির মধ্যে।
শীতে বিলেতকে টক্কর দিয়ে কলকাতার যতই আহ্লাদ হোক, ঝক্কিঝামেলাও কম নয়। পারদ হঠাৎই অনেকটা নেমে যাওয়ায় মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। জ্বরজ্বালা, সর্দিকাশির দাপট বাড়ছে। কলকাতাকে লন্ডন বানানো যাঁর স্বপ্ন, সেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাই ঠান্ডা থেকে বাঁচার জন্য বঙ্গবাসীকে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি। এ দিন বর্ধমানে সকলকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “খুব ঠান্ডা। পিঠেপুলি খান। কিন্তু ঠান্ডা লাগাবেন না। সবাই বলছে, তাপমাত্রা চার ডিগ্রি। আমি ও-সব বুঝি না। এখানে অনেক বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়ে আছে। ঠান্ডা লাগানো চলবে না।” ঠান্ডা লেগে তাঁর যে জ্বর হয়েছিল, তারও উল্লেখ করেন মমতা। বলেন, “আমার ঠান্ডা লেগে জ্বর হয়েছিল। আমি জ্বর নিয়েই ঘুরে বেড়াচ্ছি।”
আসলে যে-ধরনের ঠান্ডায় রাজ্যবাসী অভ্যস্ত, এ বারের শীত তার থেকেও কড়া। উত্তুরে হাওয়া বইছে সকাল থেকেই। রাতের দিকে হাওয়ার তীব্রতা বাড়ছে। তাই সকালে এবং রাতের দিকে মানুষকে যথাযথ শীত-পোশাক পরে রাস্তায় বেরোনোর পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। বলছেন, বিশেষ
নজর রাখতে হবে বয়স্ক এবং শিশুদের উপরে।
কত দিন চলবে শীতের দাপট?
আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, উত্তরপ্রদেশে জোরালো ঠান্ডা যত দিন থাকবে, তত দিনই বিহার-ঝাড়খণ্ড হয়ে উত্তুরে হাওয়া নেমে আসবে পশ্চিমবঙ্গে। দিল্লির মৌসম ভবন জানায়, দেশের সমতলের ১২টি রাজ্য শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে পড়েছে। উত্তরপ্রদেশের বরেলীতে এ দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে যায় হিমাঙ্কের নীচে (-০.১ ডিগ্রি)। আগে কখনও সেখানকার তাপমাত্রা এত নীচে নামেনি।
এর আগে বরেলীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড ছিল ০.৬ ডিগ্রি, ১৯৮৯ সালের ২৪ জানুয়ারি। আগরায় এ দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ০.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
হাওয়া অফিস বলছে, বাংলার শীত-ভাগ্যের স্থায়িত্ব নির্ভর করছে উত্তরপ্রদেশের ঠান্ডার উপরেই। |