ইসিজি হয়েছে। ইকো-কার্ডিওগ্রামও হয়েছে। তাতে অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। তবু আরাবুল ইসলামকে নার্সিংহোম থেকে বাড়ি নিয়ে যেতে রাজি নন তাঁর পরিবার। বৃহস্পতিবার দুপুরে নার্সিংহোমে দাঁড়িয়ে আরাবুলের ছেলে হাকিমুল বলেন, “উনি আজও এখানে থাকবেন।”
মঙ্গলবার ভাঙড়ের গোলমালের পরে চিনার পার্কের ওই নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছিলেন তৃণমূল নেতা আরাবুল। সে সময়ে ডাক্তারদের বক্তব্য ছিল, তাঁর শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই, কিছুক্ষণ বাদেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তা অবশ্য হয়নি, বরং আরাবুলকে আইসিইউয়ে নেওয়া হয়। বুধবার তাঁকে আইসিইউ থেকে সাধারণ শয্যায় আনেন চিকিৎসকেরা। নার্সিংহোম সূত্রের খবর: রক্তে শর্করার মাত্রা কিছু বেশি থাকা ছাড়া আরাবুলের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সব রিপোর্টই মোটামুটি স্বাভাবিক। তাই নার্সিংহোম-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে বৃহস্পতিবার সকালে আরাবুলকে ছাড়া হতে পারে। কিন্তু এ দিনও তাঁকে ছাড়া হয়নি। বস্তুত কবে হবে, তা-ও নিশ্চিত নয়। নার্সিংহোমের এমডি সুভাষ ঘোষ এ দিন বলেন, “আরাবুলকে কবে ছাড়া হবে, সে সম্পর্কে এখনই কিছু বলতে পারছি না। উনি জানিয়েছেন, এখনও পুরো সুস্থ বোধ করছেন না। ওঁকে জেনারেল বেডে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।” |
নার্সিংহোম-সূত্রের খবর: এ দিন সকালে আরাবুল ডাক্তারদের বলেন, ফের তাঁর বুকে ব্যথা শুরু হয়েছে। তড়িঘড়ি ইসিজি, ইকো-কার্ডিওগ্রাম হয়। ঠিক হয়, ইসিজি বা ইকো-কার্ডিওগ্রামের রিপোর্টে অস্বাভাবিকতা থাকলে সিটি-অ্যাঞ্জিওগ্রাম হবে। চিনার পার্কের ওই নার্সিংহোমে তার ব্যবস্থা না-থাকায় চিংড়িহাটার কাছে এক নার্সিংহোমে সিটি-অ্যাঞ্জিওগ্রাম করার সিদ্ধান্তও হয়ে গিয়েছিল। তবে শেষমেশ তার দরকার পড়েনি। কারণ ডাক্তারেরা জানিয়ে দেন, আরাবুলের ইসিজি ও ইকো-কার্ডিওগ্রামের রিপোর্টে কোনও অস্বাভাবিকতা নেই।
তা হলে এখন ওঁর কী চিকিৎসা হচ্ছে? নার্সিংহোম-কর্তৃপক্ষ কিছু বলতে চাননি। আরাবুলকে ওখানে প্রথম দেখেছিলেন যে চিকিৎসক, সেই জয়ন্ত দত্ত এ দিন বলেন, “ভর্তি হওয়ার দিন আমি ওঁকে দেখেছিলাম। তার পরে আর দেখিনি। তাই কিছু বলতে পারব না।” আরাবুল এখন যে দুই ডাক্তারের অধীনে, তাঁরাও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। শারীরিক অবস্থায় অস্বাভাবিকতা না-থাকলে আরাবুল কেন নার্সিংহোমে? প্রশাসনের এক সূরে দাবি, রেজ্জাক মোল্লার উপরে হামলার ঘটনার পরে কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানায় আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে এফআইআর দাখিল হয়েছে। তাতে অস্ত্র-আইনের ধারাও রয়েছে, যা জামিন-অযোগ্য। দল যতই পাশে দাঁড়াক, এ নিয়ে আরাবুল যথেষ্ট চাপে রয়েছেন। বিশেষত রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন পুলিশ-প্রশাসনকে নিরপেক্ষ হওয়ার পরামর্শ দেওয়ায় চাপটা আরও বেড়েছে। তাই রেজ্জাক মোল্লা ও সিপিএম সমর্থকদের বিরুদ্ধে পাল্টা নালিশ দায়ের করার পাশাপাশি নিজেকেও ‘হামলায় আহত’ প্রতিপন্ন করে তিনি জনমানসে ভাবমূর্তি উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। |