বুধবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ শেষ ট্রেন থেকে নামার পর শ্যামল নাথ বেশ কিছু ক্ষণ পরে একটি রিকশার সন্ধান পেলেন। কিন্তু কনকনে এই শীতের রাতে সুযোগ বুঝে রিকশাচালক স্টেশন থেকে সদর মোড়ের ভাড়া হাঁকলেন ৪০ টাকা। এমনিতে ওই রাস্তাটুকু পেরোতে বড় জোর গোটা কুড়ি টাকা খসে। তাই শ্যামলবাবু কালবিলম্ব না করে পত্রপাঠ হাঁটা জুড়লেন। অনেকে অবশ্য রিকশাওয়ালাদের এই বাড়তি ভাড়া মিটিয়েই গন্তব্যে পাড়ি দিচ্ছেন। এই শীতে রাত একটু বাড়লেই রিকশার সংখ্যা কমে আসছে। যেগুলি পথে নামছে তার চালকেরা মর্জিমাফিক ভাড়া চেয়ে বসছেন। এক কথায় ভাড়ার জুলুম চলছে রাতের শহরে।
আসলে হঠাত্ এই পারদ পতনে গত কয়েক দিনে শহরের জীবনযাত্রার ধরনটাই গিয়েছে বদলে। শীতের সকালে শহরের ঘুম ভাঙতে ভাঙতে বেশ দেরি হচ্ছে। সকাল ৯টার আগে দোকানপাট সে ভাবে খুলছেই না। জনশূন্য শহরের পথে সকাল নাগাদ কিছু রিকশা ও মুষ্টিমেয় প্রাতর্ভ্রমণকারী ছাড়া সে ভাবে কারওরই দেখা মেলে না। সকালের দিকে বাস বা অন্য যানবাহন বিশেষ চোখে পড়ে না। বাস মালিকরাই জানিয়েছেন, হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় ভোরের দিকে বাস চালাতে চাইছেন না। তার উপর যাত্রীও সে ভাবে হয় না। খরিদ্দার কম আসায় এই শীতে ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রীর সহ-সম্পাদক অক্ষয় ভট্টাচার্য বলেন, “ব্যবসায়ীরা দোকান খোলা রাখবেন কী করে! শীতে রাস্তায় লোকেরই দেখা মিলছে না। খরিদ্দার কোথায়? বাজার শুরু হচ্ছে অনেক বেলাতে। আবার সন্ধ্যা নামতেই দোকান বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। ছোট বড় সমস্ত ব্যবসা মার খাচ্ছে এই শীতে।” আবার সন্ধ্যা ঘনালেই শহরের সমস্ত ব্যস্ত এলাকা সুনসান হয়ে পড়ে। সদর মোড়, হাই স্ট্রিটের মতো জনবহুল এলাকায়ও লোক সমাগম চোখে পড়ে না। দোকানের ঝাঁপও পড়ছে তাড়তাড়ি। ফাঁকা শহরে চোখে পড়ে কিছু চায়ের দোকান। আর সেই দোকানগুলি ঘিরে থাকে ছোট ছোট কিছু জটলা। কোনও কোনও মোড়ে আবার রিকশার উপরে পায়ের উপর পা তুলে দিয়ে মদ্যপ চালকের দেখা মেলে। শীতে লোকজনের নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকার সুযোগ নিয়ে দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্ত চোখে পড়ছে। পুলিশ প্রশাসনের আশঙ্কা ঢিলেঢালা পুলিশি নজরদারির সুযোগ নিয়ে দুষ্কৃতীরা অস্ত্র পাচার করতেও পারে। বিশেষ করে বেশি রাতের দিকের ট্রেনের নিরাপত্তা সে ভাবে থাকে না। এ ছাড়াও ঢিলেঢালা শীতের পোশাকের ভিতরে অনেকেই অস্ত্র বহন করতে পারেন বলে আশঙ্কা জেলা পুলিশের। |