রঞ্জি কোয়ার্টার ফাইনালে যখন নতুন সকালে নতুন করে স্টান্স নিচ্ছেন সৌরাষ্ট্রের ঘরের ছেলে, তার কাছাকাছি সময়ে টিম বাস থেকে নামছে লাল জার্সির সারি। চেতেশ্বর পূজারা (৩৫২) যখন নিজের নামের পাশে আরও একটা ট্রিপল সেঞ্চুরি যোগ করে তাঁর শহরের অভিবাদন নিচ্ছেন, টিম ইন্ডিয়া তখন ঢুকে পড়েছে নেটে।
সৌরাষ্ট্র বিশ্ববিদ্যালয় মাঠ আর সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম শহরের দুই প্রধান ক্রিকেটকেন্দ্রের দূরত্ব মোটে পনেরো কিলোমিটার। আধঘণ্টা, বড়জোর পৌনে এক ঘণ্টার রাস্তা। কিন্তু পূজারার জন্য আপাতত সেই দূরত্বটা অনতিক্রম্য হয়েই থেকে গেল। ৩৫২ রানের প্রথম শ্রেণির ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোরে তখনও পৌঁছননি তিনি। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি কার্যত বলেই দিলেন, শুক্রবার প্রথম এগারোয় থাকছেন না পূজারা। |
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে সবচেয়ে ধারাবাহিক ভাবে চলেছে পূজারার ব্যাট। পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটেও যে তিনি সমান সাবলীল, তার হাতেগরম প্রমাণ শুক্রবারের ইনিংস। বৃহস্পতিবারের সকালে এসসিএ মাঠের এ দিক-ও দিক ছড়িয়ে থাকা মুখগুলোও তাই ছিল প্রত্যাশার জলজ্যান্ত প্রতীক। পূজারার রানের ঝুলি যত ভারী হচ্ছে, এসসিএ কর্তা থেকে সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমী সবার হাসিও যেন তত চওড়া হচ্ছে। ততক্ষণে তাঁরা ধরেই নিয়েছেন, এখানেই হবে। যাঁকে ঘিরে এত স্বপ্ন, সেই পূজারাও তো এই সে দিনই বলেছেন, রঞ্জি ম্যাচটাকে ওয়ান ডে-র প্রস্তুতি হিসেবে দেখছেন। তাঁকে ঘিরে গোটা রাজ্যের স্বপ্ন দেখাটা তাই খুব অযৌক্তিক ছিল না।
দুধে চোনাটা পড়ল বৃহস্পতিবার দুপুর-দুপুরই। মঞ্চ ভারত অধিনায়কের সাংবাদিক সম্মেলন। যে ধোনি ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগের সাংবাদিক সম্মেলনে টিম কম্বিনেশন নিয়ে বিশেষ মুখ খোলেন না, সেই ধোনি এ দিন পূজারা-প্রসঙ্গে রাখঢাক না করেই বলে দিলেন, স্কোয়াডে থাকলেও এই মুহূর্তে প্রথম এগারোয় ঢোকার সুযোগ নেই। তাঁর কথায়, “প্রথম ম্যাচে পূজারার খেলা প্রায় অনিশ্চিত বললেই চলে। জানি এটা ওর হোমগ্রাউন্ড। কিন্তু ক্রিকেটীয় দিকটাও তো মনে রাখতে হবে। দলের ব্যাটিং লাইন-আপ, পূজারার পক্ষে কত নম্বরে ব্যাট করতে নামা আদর্শসব মিলিয়ে যা দাঁড়াচ্ছে, তাতে এখনই ওর টিমে ঢোকার সুযোগ দেখছি না।” পরে ধোনি যতই বলুন, “দেখা যাক কাল কী হয়। যদি কেউ চোট পেয়ে যায়, তা হলে হয়তো...”, ততক্ষণে স্থানীয় ক্রিকেটভক্তদের মুখের হাসি উধাও।
ক্রিকেটীয় যুক্তির বিচারে ধোনি ভুল কিছু বলেননি। চার দিন আগে কোটলায় যে টিম জিতেছে, ইংল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচে সেই এগারো জনকে খেলানোই স্বাভাবিক। কিন্তু আবেগ কবেই বা পাত্তা দিয়েছে নিরস যুক্তিকে? জন-আবেগের তোড়ে তাই তলিয়ে গেল যুক্তির শুকনো খড়কুটো। আবেগের নাম সৌরাষ্ট্রের স্বপ্নভঙ্গ। |