স্কুল শুরু হয়ে গিয়েছে পুরোদমে। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও হুগলির বহু মাধ্যমিক স্কুলে এখনও পৌঁছয়নি মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পাঠ্যবই। ফলে, সমস্যায় পড়েছে ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকা সকলেই।
নতুন শিক্ষাবর্ষ অনুযায়ী স্কুলগুলিতে বাত্সরিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে ডিসেম্বরে। নতুন ক্লাসও শুরু হয়ে গিয়েছে জানুয়ারি থেকে। ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও পাঠ্যবই পৌঁছয়নি হুগলির বহু স্কুলে। জেলা সর্বশিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঠ্যবই বিতরণ সংক্রাম্ত কাজের জন্য ২৬ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত স্কুলের অফিসগুলি খুলে রাখতে বলা হয়েছিল। ঠিক হয়েছিল ২ জানুয়ারি স্কুল খোলার দিন ‘বই দিবস’ পালনের মধ্যে দিয়ে পড়ুয়াদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হবে। কিন্তু প্রায় এক সপ্তাহ কেটে যাওয়ার পরও সমস্যা মেটেনি।
সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা আধিকারিক মুনমুন ঘোষের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সমস্যায় কথা অস্বীকার করেননি। পাঠ্যবই বণ্টনে দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করতে আরও বেশ দিন কয়েক সময় লাগবে বলে মনে হচ্ছে। যে রকম বই আসছে, সেই রকমই দেওয়া হচ্ছে। এখনও প্রায় ৫০ হাজার অঙ্কের বই পাঠানো বাকি। চেষ্টা করা হচ্ছে, খুব তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান করার।”
খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, বৈদ্যবাটি বিদ্যানিকেতনে ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস, সপ্তম শ্রেণির ভূগোল, ইতিহাস, অঙ্ক ও বাংলা বই পৌঁছয়নি। শ্রীরামপুর চাতরা নন্দলাল ইনস্টিটিউশনের সপ্তম শ্রেণির অঙ্ক, ইতিহাস ও ভূগোল বই এখনও আসেনি। আরামবাগ বয়েজ হাইস্কুলে আসেনি সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস, ভূগোল, বাংলা এবং বাংলা গল্পের বই। একই অবস্থা গুপ্তিপাড়া, চুচঁুড়া, বলাগড়, ভদ্রেশ্বর, জিরাট-সহ জেলার নানা প্রান্তের স্কুলগুলিতে।
বলাগড় হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় পরামাণিক বলেন, “এখনও সব বই পৌঁছয়নি। ফলে সিলেবাস তৈরি করা যাচ্ছে না। অভিভাবকেরা এসে প্রশ্ন করছেন। কী উত্তর দেব বুঝতে পারছি না।” মাহেশ শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শশাঙ্কশেখর মণ্ডল বলেন, “আমার স্কুলেও একই সমস্যা। কবে মিটবে বুঝতে পারছি না।” একই সুর চাতরা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুশীল সাহা ও বৈদ্যবাটি বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক প্রিয়রঞ্জন ঘটকেরও। হরিপালের জামাইবাটি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সন্দীপ সিংহ জানান, এখনও সপ্তম শ্রেণির ভূগোল ও বাংলা বই পৌঁছয়নি। কোথাও কোথাও আবার বই পৌঁছলেও ছাত্রসংখ্যার অনুপাতে তা কম বলে জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
এই ঘটনায় ক্ষুদ্ধ অভিভাবকেরাও। গুপ্তিপাড়ার বাসিন্দা সুব্রত মণ্ডল বলেন, “আমার ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে উঠল। কিন্তু এখনও সব বই হাতে পায়নি। পড়াশোনায় সমস্যা হচ্ছে।” প্রধান শিক্ষকেরা জানালেন, শুধু সিলেবাস তৈরিতেই নয়, সমস্যা হচ্ছে স্কুলের দিনলিপি তৈরিতেও। এই দিনলিপিই স্কুলে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম বলে জানালেন তাঁরা। |