|
|
|
|
চাপ জয়রাম, মণীশদের |
নারাজ চিদম্বরম, তবু ভর্তুকি বৃদ্ধি ইন্দিরা আবাসে
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
আর্থিক ঘাটতির যুক্তি দিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আজও আপত্তি করেছিলেন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় কংগ্রেস সদস্যদের চাপে ইন্দিরা আবাস যোজনায় গৃহহীন বিপিএল পরিবারগুলিকে বাড়ি বানানোর জন্য অনুদান এক ধাক্কায় ২৫ হাজার বাড়িয়ে ৭০ হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত আজ গৃহীত হল। সেই সঙ্গে জমিহীন বিপিএল পরিবারগুলিকে জমি কিনতে অতিরিক্ত দশ হাজার টাকা অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্তও এ দিন নিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।
সব কিছু ঠিকঠাক চললে আগামী বছরেই লোকসভা ভোট। তার আগে এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক ভাবে ইতিবাচক হবে বলেই মনে করছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। তবে জয়রাম রমেশ, মনীশ তিওয়ারিদের বক্তব্য, নিতান্ত ‘পপুলিজম’ না বলে বিষয়টিকে সামাজিক দায়বদ্ধতার দিক থেকে দেখা উচিত। এক মন্ত্রীর কথায়, “আম-আদমির কাছে সেই অঙ্গীকার করেই ক্ষমতায় এসেছিল ইউপিএ। সেই প্রতিশ্রুতি পালন করছে সরকার।”
তবে ভর্তুকি মূল্যে বরাদ্দ রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের সংখ্যা ৬ থেকে বাড়িয়ে ৯টি করার প্রস্তাবে এখনও নারাজ চিদম্বরম। এই সংক্রান্ত ক্যাবিনেট নোট অনেক আগেই তৈরি হয়েছে। কিন্তু চিদম্বরম আজও বলেন, “মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।” উল্টে অর্থ মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, ডিজেল ও রান্নার গ্যাস উভয়ের দামই শীঘ্রই বাড়ানো হবে। আজ একই ইঙ্গিত দেন যোজনা কমিশনের উপাধ্যক্ষ মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়াও।
ইন্দিরা আবাস যোজনায় গৃহহীন বিপিএল পরিবারগুলিকে পাকা বাড়ি নির্মাণের জন্য এত দিন কেন্দ্রের তরফে ৪৫ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হত। আজকের সিদ্ধান্তের পর তা বাড়িয়ে ৭০ হাজার টাকা করা হল। পাবর্ত্য ও দুর্গম এলাকা এবং মাওবাদী অধ্যুষিত জেলার (পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের) বিপিএল পরিবারগুলি এ বাবদ ৭৫ হাজার টাকা অনুদান হিসেবে পাবেন। সেই সঙ্গে ভূমিহীন কৃষক বা ক্ষেতমজুররা জমি কিনতে এখন থেকে কুড়ি হাজার টাকা অনুদান পাবেন। এ ছাড়াও পয়ঃপ্রণালী নির্মাণের জন্য পাবেন অতিরিক্ত ৯ হাজার টাকা। ১ এপ্রিল থেকে এই নতুন হারে অনুদান চালু হবে। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, প্রাথমিক ভাবে এ জন্য সরকারের আর্থিক দায় বাড়বে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। তবে একটি অন্য সংশয়ও দেখা দিচ্ছে সরকারি মহলে। তা হল, অনুদান বাড়িয়ে প্রকল্পের আওতায় সুবিধাভোগীদের সংখ্যা কেন্দ্র কমিয়ে দেবে না তো?
কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের তরফে মূল প্রস্তাব ছিল, অনুদানের হার বাড়িয়ে সমতলের জন্য ৭৫ হাজার টাকা ও পার্বত্য এবং দুর্গম এলাকার জন্য ৮০ হাজার টাকা করা হোক। সেই সঙ্গে পয়ঃপ্রণালী নির্মাণের জন্য আরও ৯ হাজার টাকা অনুদান দেওয়ার প্রস্তাব ছিল। সূত্রের খবর, মন্ত্রিসভার বৈঠকে আজ এই প্রস্তাব নিয়ে ঘোর আপত্তি করেন চিদম্বরম। বলেন, সরকারের আর্থিক ঘাটতির যা হাল, তাতে এত চাপ নেওয়া সম্ভব নয়। অনুদান একান্ত যদি বাড়াতেই হয়, তা হলে তা ৪৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৬০ হাজার করা হোক। পয়ঃপ্রণালী নির্মাণ ও জমি কেনার জন্য অনুদান দিতেও রাজি হননি চিদম্বরম। কিন্তু গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ, সড়ক উন্নয়ন মন্ত্রী সি পি জোশী, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মনীশ তিওয়ারি অনুদান আরও বাড়ানোর পক্ষে জোরালো সওয়াল করেন। চাপের মুখে কোনঠাসা হয়ে পড়েন চিদম্বরম।
শেষ পর্যন্ত মধ্যপথ বের করে অনুদান ২৫ হাজার টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ-ও স্থির হয়, পয়ঃপ্রণালী নির্মাণের জন্য খরচ এ সংক্রান্ত সরকারের চলতি প্রকল্প মারফৎ দেওয়া হবে।
কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহে কংগ্রেসের চিন্তন বৈঠকের আগে সম্ভবত ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনও ঘোষণা হবে না। কেন না তা হলে সেই একটি বিষয়ই চিন্তন বৈঠকের মুখ্য আলোচ্য বিষয় উঠবে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও চিদম্বরমকে দলের মধ্যেই সমালোচনার মুখে পড়তে হতে পারে। |
|
|
|
|
|