|
|
|
|
আপাতত বন্ধ হতে পারে ভারত-পাক শান্তি প্রক্রিয়া
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাক হানার ঘটনায় ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে কড়া কূটনীতির রাস্তাতেই যেতে হচ্ছে দিল্লিকে। ওই ঘটনায় ঘরে-বাইরে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়া আগের মতো চালিয়ে যাওয়া আপাতত সম্ভব নয় বলেই মনে করা হচ্ছে।
পাক বিদেশমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার বলছেন, সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের জেরে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ব্যাহত হবে না বলে তিনি আশাবাদী। পাকিস্তানের কিন্তু অভিযোগ, সংঘর্ষবিরতি ভেঙেছে ভারতই। গত ৬ জানুয়ারি ভারতীয় সেনার গুলিতে তাদের এক সেনা নিহত হন বলে রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘সামরিক নজরদার গোষ্ঠী’র কাছে অভিযোগ করেছে পাকিস্তান। এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন। তবে দুই ভারতীয় সেনার খুনের ঘটনা নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। উত্তেজনা কমানোর প্রক্রিয়ায় সাহায্য করতে ভারত-পাকিস্তানে তাদের দূতদের নির্দেশ দিয়েছে আমেরিকা। যদিও আজ ফের নিয়ন্ত্রণরেখায় পাক সেনা ভারতীয় ছাউনি লক্ষ করে গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
মনমোহন সিংহের পাক নীতিই ছিল নির্বাচিত পাক নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা জারি রাখা। কিন্তু দুই জওয়ানের হত্যার পর বিরোধীদের পাশাপাশি ইউপিএ শরিকরাও সেই নীতিকে কাঠগড়ায় তুলেছে। দাবি উঠেছে কড়া পদক্ষেপের। এক দিকে, কংগ্রেস-বিরোধিতার রাশ ফের হাতে পেতে জাতীয়তাবাদ-তাস খেলছে বিজেপি। অন্য দিকে, ইউপিএ শরিক ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা তথা জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা শান্তি প্রক্রিয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। পাক হামলার নিন্দা করেছেন অণ্ণা হজারেও।
এ হেন পরিস্থিতিতে দ্বিপাক্ষিক স্তরে পাকিস্তানের উপর সর্বাত্মক চাপ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্র। সম্প্রতি থিম্পুর সার্ক সম্মেলনের পার্শ্ব বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে সামগ্রিক আলোচনার যে পথ খোলা হয়েছিল, তা আপাতত বন্ধ করার কথা ভাবা হচ্ছে। ইউপিএ-২-এর বকেয়া সময়সীমায় প্রধানমন্ত্রীর পাকিস্তান সফরেরও আর প্রশ্ন উঠছে না। বরং জয়পুরে কংগ্রেসের আসন্ন চিন্তন শিবিরের বিদেশনীতি সংক্রান্ত প্রস্তাবে পাক প্রশ্নে কড়া অবস্থান নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে আজ দাবি করেছেন যে, গত পরশুর ঘটনার চার-পাঁচ দিন আগে পাক অধিকৃত কাশ্মীরেই ছিল ২৬/১১-র মূল চক্রী হাফিজ সঈদ। সেনাদের হত্যাকাণ্ডে হাফিজের প্ররোচনা রয়েছে কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন গোয়েন্দারা।
তবে এখন ঘরোয়া রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে রকম, প্রায় সেই অবস্থাই হয়েছিল মুম্বই হামলার পর। সে সময় তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় বাগ্যুদ্ধ চালিয়েছিলেন পাক সরকারের সঙ্গে। এ বার দেশের পরিস্থিতি এমনিতেই উত্তপ্ত। দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডের জেরে ক’দিন আগেই রাস্তায় নেমেছে দেশের আমজনতা। সরকারের যেমন সেই চিন্তা আছে, বিরোধীদেরও তেমন চেষ্টা আছে ঘোলা জলে মাছ ধরার।
প্রধান বিরোধী দল হয়েও দিল্লির বিক্ষোভের রাশ হাতে পায়নি বিজেপি। এ বার জওয়ানদের হত্যার ঘটনাকে অস্ত্র করে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার পুরনো জাতীয়তাবাদের ধ্বজা তুলে মানুষের আক্রোশের প্রতিনিধি হতে চাইছে। ইতিমধ্যেই বিজেপি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতারা রাস্তায় নেমেছেন। আগামিকাল ছাত্র শাখাকেও বিক্ষোভে নামাচ্ছে বিজেপি। সুষমা স্বরাজের কথায়, “সরকার যদি কঠোর পদক্ষেপ করে, আমরা সমর্থন করব। কিন্তু সরকারের তরফে জবাব আসেনি। যেখানে দেশের সম্মান, সেনার মনোবলের প্রশ্ন জড়িত, সেখানে কঠোর পদক্ষেপ করতেই হবে।”
এ দিকে, ওমর আবদুল্লা বলেছেন, “পাকিস্তান যদি কোনও কথাই না রাখে, তা হলে শান্তি প্রক্রিয়ার অর্থ কী? এর পিছনে মনমোহন সিংহ অনেক সময় ব্যয় করেছেন।” খোদ কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীর এই চড়া স্বর তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
স্বভাবতই সুর চড়িয়েছে কেন্দ্র। শিবশঙ্কর মেনন আজ বলেছেন, “সীমান্তে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন অথবা অনুপ্রবেশের মতো ঘটনা ২০১১-র তুলনায় ২০১২-তে অনেকটাই বেড়েছে।... পাকিস্তান সরকারকে এ বার সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা ভবিষ্যতে কোন পথে চলবে।” |
|
|
|
|
|