বিকল্প চাষে উৎসাহ দেখাচ্ছেন চাষিরা
ভূগর্ভস্থ জলের স্তর স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক নীচে। বোরো ধানের চাষে জলও অমিল। তার উপর আছে ফসলের সঠিক দাম না মেলা। এই পরিস্থিতিতে জেলার চাষিদের অর্থকরী অথচ বিকল্প চাষে উৎসাহিত করার জন্য এগিয়ে এল কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা। ‘ওসিপি ফাউন্ডেশন’-র অর্থ সাহায্যে ও আন্তর্জাতিক গবেষণা কেন্দ্র ‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর এগ্রিকালচারাল রিসার্চ অফ ড্রাই ল্যান্ড এরিয়া’-র (আইসিএআরডিএ) প্রযুক্তিগত সহায়তায় সম্প্রতি হয়ে গেল একটি ডালশস্যের প্রদর্শনী ও উৎপাদন পদ্ধতির প্রশিক্ষণ। গত বুধবারের ওই আয়োজনে উদ্যোক্তা ছিল মির্জাপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। বোলপুর ব্লকের শতাধিক কৃষক, কৃষি বিশেষজ্ঞ ও রাজ্যের কৃষি দফতরের আধিকারিক যোগ দেন সেই প্রশিক্ষণ শিবিরে।
সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, বোলপুর ব্লকের প্রায় চারশো জন কৃষককে পরীক্ষামূলক ভাবে ৪০০ বিঘা জমিতে মসুর ডাল চাষের জন্য বীজ সরবরাহ করেছে আইসিএআরডিএ। চাষে রাসায়নিক সারের বহুল প্রয়োগ, ফসলের দাম না পাওয়া, সেচের অভাবে চাষে ক্ষতি-সহ একাধিক সমস্যার সমাধানে খরাপ্রবণ বীরভূমের একাধিক এলাকায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মির্জাপুরের ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এই প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা শ্রীকান্ত মণ্ডল বলেন, “বোলপুর ব্লকের চারটি পঞ্চায়েতের ৪০০ জনকে বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। ‘সুব্রত’ ও ‘মৈত্রেয়ী’ প্রজাতির মসুর ডাল বীজ দেওয়া হয়েছে। বীজ শোধন পদ্ধতি থেকে চাষের প্রণালী সব বিষয়ে যত্ন দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।”
ডাল চাষ বোলপুরে। —নিজস্ব চিত্র।
উদ্যোক্তাদের দাবি, চার থেকে পাঁচ কেজি এমন বীজ চাষ করলে গড়ে ১৫০ কেজি ফলন হয়। উৎপাদিত ফসল থেকে আবার পাঁচ কেজি বীজও পাওয়া যায়। ওই মসুর ডালের চাষে ভাল থাকে মাটির স্বাস্থ্যও। এ ছাড়া এই চাষে মাটির সঙ্গে নাইট্রোজেনকে মিশিয়ে দেওয়ায় মাটির উৎপাদন ক্ষমতাও বাড়ে। চাষের জলও লাগে কম। পরিবেশে কুপ্রভাব কমানো থেকে মাটির উর্বরতা বাড়ানো সব ক্ষেত্রেই লাভ ওই বীজের মসুর ডাল চাষে। এমনকী ওই মসুর ডাল চাষে গৃহস্থের অপুষ্টি দূর করা-সহ গবাদি পশুর খাদ্যও সুরক্ষিত থাকে বলে দাবি তাঁদের।
বোলপুর ব্লকের সহ-কৃষি অধিকর্তা অরিন্দম চক্রবর্তীও বলেন, “সেচের সমস্যা, ফসলের দাম-সহ একাধিক অভিযোগ কৃষকদের। অন্তত পক্ষে বীরভূমের মতো খরাপ্রবণ এলাকায় ধান চাষের পর স্বল্প জলে এই মসুর ডাল চাষ অত্যন্ত উপযোগী।” ওই ডালের চাষে চাষিরা লাভের মুখ দেখবেন বলেই তাঁর মত।
গত মরসুমেই কেন্দ্রীয় কৃষি বিশেষজ্ঞদের একটি প্রতিনিধি দল এসে বীরভূমের একাধিক এলাকায় ঘুরে খরা ঘোষণা করেছিলেন। তখন থেকেই বিভিন্ন কৃষক সংগঠন, কৃষিবিদ্যা বিভাগ, কৃষি বিশেষজ্ঞ এবং কৃষি দফতরও বিকল্প চাষের ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা ও পরামর্শ দিতে শুরু করেছিলেন। বারবার ‘মার খাওয়া’ চাষিরা এ বছর এই নতুন উদ্যোগে তাই আশা দেখছেন। রাইপুর-সুপুর পঞ্চায়েত এলাকার কাকুটিয়ার প্রান্তিক চাষি আব্দুল মাজিদ বললেন, “আগে যে বীজে ডাল চাষ করতাম, তাতে যে চারাগাছ জন্মাত তার বৃদ্ধি সমহারে হত না। ফলে উৎপাদিত ফসলের পরিমাণে মার খেতাম। এই নতুন বীজ লাগানোর পর চারাগাছ জন্মেছে। তার বৃদ্ধি কিন্তু সমান। আশা করছি এ বার ভাল ফলন হবে। দামও মিলবে।” অন্য দিকে, মির্জাপুরের চাষি বিষ্ণু মণ্ডলের অভিজ্ঞতা, “নতুন আর আমার কাছে থাকা পুরনো বীজ দুই দিয়েই জমিতে আলাদা করে মসুর ডালের চাষ করেছি। নতুন বীজে যে চারা তৈরি হয়েছে তা পুরনোর থেকে অনেক ভাল। নতুন বীজে বীজতলার মানও ভাল।”
কৃষি বিশেষজ্ঞ তথা বিশ্বভারতীর পল্লিশিক্ষা ভবনের অধ্যক্ষ গোপালচন্দ্র দে জানান, ফসল চক্রে এই চাষ ধানের পরে হয়। বোরো ধানের চাষে জল লাগে অনেক। কিন্তু এই চাষে জল লাগে তুলনায় অনেক কম। অন্য অনেক ফসলের আগে সময়োপযোগী উৎপাদনও হয়। তিনি বলেন, “এই মসুর ডাল চাষের প্রয়োজনীয়তা ও উপযোগিতা যথেষ্টই। এটি একটি অর্থকরী ফসল। ফলে চাষিরা ডাল বিক্রি করে যেমন লাভবান হবেন, তেমনই পরের মরসুমের জন্য বীজও সংগ্রহ করে রাখতে পারবেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.