দেশে-বিদেশে দীর্ঘ টানাপোড়েনের পরে অবশেষে জয় হল মায়েরই। কলকাতা হাইকোর্ট বৃহস্পতিবার জানিয়ে দিল, অনুরূপ ও সাগরিকা ভট্টাচার্যের দুই সন্তান অভিজ্ঞান ও ঐশ্বর্যা থাকবে তাদের মায়ের কাছেই। রায় দিয়ে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত বলেন, এই শিশুদের মায়ের চেয়ে ভাল আশ্রয় নেই।
আদালতের রায় শোনার পরে আনন্দে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি সাগরিকাদেবী। তিনি বলেন, “এত আনন্দ আর তৃপ্তি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। কত রাত জেগে বসে থেকেছি। এখন ছেলেমেয়েকে নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারব।” পরিবারটি নরওয়েতে থাকাকালীন অনুরূপ-সাগরিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তাঁরা দুই সন্তানের ঠিকঠাক যত্নআত্তি করেন না। এই অভিযোগেই ২০১১-র মে মাসে শিশু দু’টিকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছিল নরওয়ে সরকার। |
অনেক টানাপোড়েনের পরে অভিজ্ঞান ও ঐশ্বর্যাকে দেওয়া হয় তাদের কাকা, দন্তচিকিৎসক অরুণাভাস ভট্টাচার্যের হেফাজতে। দেশে ফেরার পরে তারা বর্ধমানের কুলটিতে কাকা, ঠাকুরদা-ঠাকুরমার কাছেই ছিল। তাদের বাবা অনুরূপবাবু এখনও নরওয়েতে। সাগরিকাদেবী ফিরে এসেছেন। পুলিশের সাহায্যে রবিবার কুলটি থেকে দুই সন্তানকে নিজের কাছে আনেন সাগরিকাদেবী। বিচারপতি এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। মঙ্গলবার ওই শিশুদের কুলটিতে কাকার জিম্মায় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশও দেন তিনি। এ দিন অবশ্য বিচারপতি বলেছেন, “সন্তানদের কাছে পাওয়ার জন্য দিশাহারা হয়েই মা এমন কাজ করেছেন।”
বিচারপতি দত্ত এ দিন অভিজ্ঞানের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। মনোরোগ বিশেষজ্ঞকে দিয়ে অভিজ্ঞানের চিকিৎসা করানোর নির্দেশ দেন তিনি। হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী অভিজ্ঞান-ঐশ্বর্যার কাকা ও ঠাকুরদা সপ্তাহে এক দিন তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। তিন মাস পরে শিশু দু’টি কেমন আছে, তা হাইকোর্টকে জানাতে হবে।
হাইকোর্টের এ দিনের রায়ে হতাশা চেপে রাখতে পারেননি অভিজ্ঞানদের কাকা। অরুণাভাসবাবু বলেন, “আদালতের রায় তো মানতেই হবে। কিন্তু শিশু দু’টির ভাল-মন্দ নিয়ে আমরা চিন্তিত।” তাঁর দাবি, “আমাদের বাড়িতে ওরা যত্নে ছিল। নতুন পরিবেশের সঙ্গে অনেকটা মানিয়ে নিয়েছিল। পড়াশোনাও শুরু করেছিল। এখন তাদের ফের নতুন পরিবেশে ধাতস্থ হতে হবে। ওরা সেটা কতটা পারবে, জানি না।” আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তিনি প্রতি সপ্তাহে শিশু দু’টির সঙ্গে দেখা করতে যাবেন কি না, জানতে চাওয়া হলে অরুণাভাসবাবু বলেন, “অবশ্যই যাব। ওদের দেখভাল করার যতটুকু সুযোগ পাব, সেটাই কাজে লাগাব।”
শিশু দু’টি কেমন থাকবে, কাকা তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও সাগরিকাদেবীর আইনজীবী সমরাদিত্য পালের অভিযোগ, এত দিন কুলটির বাড়িতে অভিজ্ঞান-ঐশ্বর্যাকে অত্যন্ত অযত্নে রাখা হয়েছিল। এক জন পরিচারিকার কাছেই তাদের থাকতে হত। শিশু কল্যাণ সমিতির সদস্যেরাই এ কথা জানিয়েছেন। সমরাদিত্যবাবু বলেন, “শুধু পেশাগত কারণে নয়। মায়ের এই যন্ত্রণার অবসানে আমারও কিছু ভুমিকা আছে মনে করেছি বলেই এই মামলা লড়েছি।” তিনি জানান, নরওয়ের শিশুকল্যাণ কর্তৃপক্ষ বাড়ি বাড়ি ঘুরে দেখেন, শিশুরা কেমন আছে। সাগরিকাদেবীর বাড়িতে গিয়ে তাঁরা দেখেছিলেন, মা এক বছরের ঐশ্বর্যাকে কোলে নিয়ে রান্না করছেন। ছোট্ট অভিজ্ঞান মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে। তার পরেই তাঁরা ওই দুই শিশুকে মা বাবার রাছ থেকে সরিয়ে নেন। |