পঞ্চায়েত নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই একের পর এক জনসভায় গিয়ে কর্মসংস্থানের উজ্জ্বল ছবি আঁকার চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এর আগে নদিয়ায় বা মেদিনীপুরে গিয়ে যা বলেছিলেন, বৃহস্পতিবার বর্ধমানে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে গেলেন মমতা। দাবি করলেন, গত এক বছর সাত মাসে তাঁর সরকার ছ’লক্ষ চাকরির ব্যবস্থা করেছে। এর মধ্যে তিন লক্ষ সরকারি, বাকি অর্ধেক বেসরকারি ক্ষেত্রে। দুর্গাপুর-আসানসোল শিল্পাঞ্চলে লগ্নি ও কর্মসংস্থানের বিপুল টাকার লগ্নির কথা শুনিয়ে বললেন, ‘কয়েক লক্ষ কর্মসংস্থান’ হবে। |
রাজ্য সরকার যতই শিল্পবান্ধব ভাবমূর্তি তৈরির চেষ্টা করুক, জমি অধিগ্রহণের বিরোধিতা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক হিংসা ও অস্থিরতা শিল্পমহলের কাছে ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজ্য সরকার শিল্পের জন্য জমি নিতে রাজি না হওয়ায় কাটোয়ায় এনটিপিসি-র প্রস্তাবিত ১২ হাজার কোটি টাকার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। যে কারণে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি মমতার দাবির প্রতি কটাক্ষ করতেও ছাড়ছে না।
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য জমি, পরিকাঠামো, রাজনৈতিক শান্তি বা শিল্পপতিদের নিরাপত্তা নিয়ে কিছু বলেন। বরং গত বছর স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া-র (সেল) সঙ্গে রাজ্যের যে ‘মৌ’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, সেই কথাই সামনে তুলে আনেন। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, “সেল এসেছিল, আমাদের সঙ্গে কথা বলতে। সেল বলেছে, পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ওদের একটা বড় শিল্প দুর্গাপুরে হবে। অর্থাৎ ওখানে কয়েক লক্ষ ছেলেমেয়ের চাকরি হবে।”
পানাগড় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীকে ১,১,৮৫ একর জমি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মমতা বলেন, “এই শিল্পগোষ্ঠীগুলো ১২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করছে। ১২ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।” দুর্গাপুরে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ফেজ টু’-র শিলান্যাস করে তাঁর সংযোজন “আট কোটি টাকা ব্যয়ে এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট তৈরি হয়েছে। দুর্গাপুরে ইটের ক্লাস্টার তৈরি করা হবে, সেখানে ৩০০ জনের কর্মসংস্থান হবে। সালানপুর এবং কুলটিতে ইটের ক্লাস্টারে উৎপাদন চলছে।” |
ডিসেম্বরে নদিয়ার তেহট্টে গিয়ে মমতা বলেছিলেন, সরকারের চাকরির অপেক্ষায় বসে না থেকে বেসরকারি ক্ষেত্রে আবেদন করতে। তিনি বিষয়টি দেখবেন। জানুয়ারির গোড়ায় মেদিনীপুরে গিয়ে জঙ্গলমহলে বেকার যুবক-যুবতীদের পুলিশে চাকরি দেওয়ার কথা বলেছিলেন। এ দিন বর্ধমানে গিয়ে তিনি বললেন, “এক বছরে আড়াই-তিন লক্ষ সরকারি ও তিন লক্ষ বেসরকারি চাকরি দিয়েছি। প্রাথমিক শিক্ষকদের এক লক্ষ চাকরি দেওয়া হচ্ছে। পুলিশে ৪০ হাজার নতুন নিয়োগ হয়েছে। নার্সের চাকরি পেয়েছেন তিন-চার হাজার।” বারবার ‘এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্ক’ তৈরির কথাও উল্লেখ করতে ভোলেননি। যা শুনে প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তথা আইএনটিইউসি-র প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, “দুর্গাপুরে বৃহৎ শিল্পের ব্যাপারে ওঁর বিশেষ কৃতিত্ব নেই। কেন্দ্রের টাকায় যে প্রকল্প হবে তা অনেক দিন আগেই ঠিক হয়ে আছে।” সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমল হালদারের কটাক্ষ, “শিল্পাঞ্চলে একাধিক কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন ইস্পাত কারখানার গল্প শুনিয়ে উনি বেকার যুবকদের নতুন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন!” একই বক্তব্য আসানসোলের সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরীরও। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের মন্তব্য, “উনি আসলে প্রতিশ্রুতির মাস্টার। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে উনি বেকারদের চাকরির লোভ দেখাচ্ছেন। নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ভেবেছেন।”
|