ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশে দুর্গাপুরে নতুন একটি ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট’ গড়ে তোলা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার আসানসোলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তিনি ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট’ এর শেষে ‘ফেজ ২’ কথাটি জুড়ে দেওয়ায় ধন্দ তৈরি হয়েছে নানা মহলে। গত দেড় দশকে দুর্গাপুরে বেশ কয়েকটি শিল্পতালুক গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু ‘ফেজ ১’ হিসেবে কোনওটিকেই নির্দিষ্ট করা হয়নি। কাজেই হঠাত্ দ্বিতীয় পর্যায় কী ভাবে এল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এ দিন আসানসোল পোলো ময়দানের সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দুর্গাপুরে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ফেজ ২’ গড়ে তোলা হয়েছে। ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশের জন্য এই এস্টেট গড়া হয়েছে। ৫০টি ইউনিট আসবে। রাজ্যের ক্ষুদ্রশিল্প উন্নয়ন নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর স্টেশনের কাছে দফতরের অধীন বন্ধ পড়ে থাকা উড ইন্ডাস্ট্রিজ-এর ২৭.৯৪ একর জমিতে গড়ে তোলা এই শিল্পতালুকে ক্ষুদ্র শিল্পদ্যোগীরা শিল্প স্থাপনের জন্য জমি পাবেন। ক্ষুদ্রশিল্পের জন্য আলাদা শিল্পতালুক গড়ার পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন দুর্গাপুরের ক্ষুদ্র শিল্পদ্যোগীরা। |
কিন্তু এই তালুকের প্রথম পর্যায় কোথায়? দুর্গাপুর স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সমীর বসু এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংস্থার আর এক কর্তা বলেন, “ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ফেজ ১-এর কথা কোনও দিন শুনিনি। তাই ফেজ-২ কোথা থেকে এল, পরিষ্কার নয়।” দুর্গাপুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তীর মন্তব্য, “ফেজ ১ কোথায় সেটি মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীও বলতে পারবেন।” তাঁর দাবি, উড ইন্ডাস্ট্রিজের পড়ে থাকা জায়গায় এই শিল্পতালুক গড়ার পরিকল্পনা বামফ্রন্ট নিয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরে তা ধামাচাপা পড়ে যায়। বিপ্রেন্দুবাবু বলেন, “শিল্প আসুক। সেটাই চাই। তবে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় নতুনত্ব কিছু নেই।”
নতুন শিল্পতালুক গড়ার পাশাপাশি দুর্গাপুরে ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ২০১১ সালের নভেম্বরে দুর্গাপুরে এসে তিনি জানিয়েছিলেন, ইস্পাত কারখানার সম্প্রসারণে সেল ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। তবে বৃহস্পতিবার আসানসোলে তিনি জানান, সেল দুর্গাপুরে নতুন ইস্পাত কারখানা গড়বে। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইস্পাত কারখানা হবে এটি। পানাগড় শিল্পতালুকের ১৪৫৮ একর জমির মধ্যে ১১৮৫ একর জমি বিভিন্ন শিল্প সংস্থা নেবে বলে জানিয়েছে। বিনিয়োগ হবে মোট ১২ হাজার কোটি টাকা। সেখানে ১২ হাজার কর্মসংস্থান হবে বলে দাবি মুখ্যমন্ত্রীর। এ দিন আসানসোল থেকে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে আরবান হাটের পাশে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর উত্পাদিত সামগ্রী প্রদর্শন ও বিক্রয় কেন্দ্র ‘সবলা’র উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ভবনে ২৬টি স্টল রয়েছে। বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর পাশাপাশি সরকারি স্বরোজগার প্রকল্পের অধীনে যাঁরা রয়েছেন তাঁরাও এখানে স্টলের সুবিধা পাবেন। আসানসোল থেকেই এ দিন তিনি দুর্গাপুরে ফুলঝোড়ে ‘ইনস্টিটিউট অফ হোটেল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ক্যাটারিং টেকনোলজি’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। রাজ্য পর্যটন দফতরের উদ্যোগে ১০ কোটি ৪৯ লক্ষ টাকায় এই প্রতিষ্ঠানটি গড়া হবে। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০১৪ সাল। |