বাবা জ্ঞান দিয়ো না...
ইউ টিউবে চলে যাচ্ছে গোপন প্র্যাকটিস
নিউ ইয়ার রেজলিউশনে বিশ্বাস করেন না। তবু নতুন বছরের ময়দানে দেখতে চান নতুন অনেক কিছু। ফেলে আসা ২০১২-র ফুটবল শিরোনাম থেকে নতুন বছরে তাঁর আশা সব কিছু নিয়ে কথা বললেন কলকাতা ময়দানের ‘স্যর অ্যালেক্স ফার্গুসন’। ট্রেভর জেমস মর্গ্যান।

ইস্টবেঙ্গল অনুশীলনে তো মিডিয়ার জন্য ‘নো এন্ট্রি’?
হ্যাঁ, এই একটা ব্যাপারে আমি খুব কড়া। আমি চাই না আমার প্র্যাক্টিসের খুঁটিনাটি বিপক্ষের হাতে চলে যাক। মিডিয়া দেখলে, লিখবে। সেটা হলে বাকিরা জেনে যাবে আমি ঠিক কোন স্ট্র্যাটেজি ধরে এগোচ্ছি। আর এটা নতুন কিছু নয়। ক্লোজড ডোর প্র্যাক্টিস বিশ্বের সব বড় বড় ক্লাবই করিয়ে থাকে। তা হলে আমার নিয়মটা মেনে চলতে অসুবিধে কোথায়?

কিন্তু ইউ টিউবে সার্চ করলেই তো পাওয়া যাচ্ছে আপনার টিমের অনুশীলনের নেপথ্য-দৃশ্য।
হ্যা।ঁ কথাটা আমার কানেও এসেছে। দেখতে হবে ভিডিওগুলোয় ঠিক কী কী দেখানো হয়েছে।
কড়া নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ সেই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যাচ্ছে। রাগ হচ্ছে না?
শুধু একটা কথাই বলব, লোকজনের যদি আর একটু সেন্স থাকত!

মানে?
দেখুন, কিছু কিছু জিনিস আমরা অনুশীলনে করি যেগুলো বাকিরা দেখে ফেললে আমাদেরই খেলার ক্ষতি। যেমন ধরুন, ফ্রি-কিক আর কর্নার নেওয়ার কিছু বিশেষ কৌশল, যেগুলো অনুশীলনে ছেলেরা মুখস্থ করে
নেয়। এগুলো কি বাইরে ঢাক পিটিয়ে প্রচারের জন্য? এগুলো তো স্ট্র্যাটেজির খুঁটিনাটি। একেবারে আমাদের নিজস্ব। কিন্তু নির্বোধ কিছু লোকের জন্য গোপনীয়তাটা রাখা যাচ্ছে না। বিশ্বের যে কোনও জায়গায় যে কোনও লোক ইচ্ছে করলে আমার প্র্যাক্টিসের ‘এ টু জেড’ দেখে ফেলছে। এটা ক্লাবের বড় ক্ষতি নয়?
কিন্তু আটকাবেন কী ভাবে?
এখনও কিছু ভাবিনি। তবে ব্যাপারটা আয়ত্তের বাইরে চলে গেলে তো মনে হচ্ছে প্র্যাক্টিস চলার সময় মাঠে লোক ঢোকাই বন্ধ করে দিতে হবে!

প্রথম বিশ্বের ফুটবল-দেশ থেকে একেবারে তৃতীয় বিশ্বের ময়দানে। চূড়ান্ত পেশাদারিত্বের জগৎ থেকে ছিটকে পড়েছেন অন্য দুনিয়ায়। মাঝে মাঝে মনে হয় না, গোটা ময়দানটা ঢেলে সাজাই?
না, না। আমি বিদেশি। আমি যদি আপনাদের দেশে এসে সব কিছু নিয়ে অভিযোগ তোলা শুরু করি তা হলে কি সেটা ভাল দেখাবে?

কিন্তু এই যে মোহনবাগান আড়াই বছর নির্বাসনের কোপে পড়েও ফের শাস্তি কমানোর আবেদন করছে। এগুলো দেখে আপনার আশ্চর্য লাগে না? আপনার ইংল্যান্ডে তো এ ভাবে নিয়মকে কেউ নিজের মতো দুমড়ে-মুচড়ে নিতে পারে না।
নিয়মটা নিয়মই। বিশ্বের যে কোনও জায়গাতেই। আর এই সিদ্ধান্তটা নিয়েছে নিরপেক্ষ প্যানেল। আজ শুনছি, ওরা বলছে, আড়াই বছর আই লিগে না খেললে সমর্থকদের কী হবে? কিন্তু সে দিনের ডার্বি ম্যাচে হাজার পঞ্চাশেক মোহনবাগান সমর্থক মাঠে এসেছিলেন। তাঁরা নব্বই মিনিটের ফুটবল দেখতে চেয়েছিলেন। সে দিন যখন মাঝপথে টিম তুলে নেওয়া হল, কোথায়, কেউ তো সমর্থকদের কথা ভাবেনি। সে দিন ওই সিদ্ধান্তটা কে নিয়েছিল? নিশ্চয়ই সমর্থকরা নয়। তা হলে আজ ওঁদের টেনে আনা হচ্ছে কেন?

নবি সে দিন ইট খেলেন। মনে হয় না যুবভারতীর নিরাপত্তা যদি কড়া হতো, ওই কালো দিনটা এড়ানো যেত? এমনিই যুবভারতীর পরিকাঠামো নিয়ে প্রচুর কথা ওঠে। ম্যাচ শেষে গ্যালারিতে বিয়ারের বোতল পাওয়া যায়। মহিলারা একুশ শতকের কলকাতাতেও ফুটবল ম্যাচ দেখতে যেতে ভয় পান।
যে বা যারা সে দিন ইট ছুড়েছিল, তারা কিন্তু সংখ্যায় অত্যন্ত নগণ্য। এক লক্ষ লোকের স্টেডিয়ামে খুব বেশি হলে দশ জন ও রকম মনোভাব নিয়ে আসেন। কে ইট নিয়ে ঢুকছে, কে বোতল নিয়ে ঢুকে পড়ছে, সেটা ধরতে গেলে তো এয়ারপোর্টের মতো কড়া চেকিং দরকার। তবে একটা জিনিস বলব, যারা সে দিন ইটটা ছুড়েছিল, তারা আজ নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারছে কি? যদি তারা সত্যি সত্যিই ফুটবলকে ভালবাসে, ঘুমোতে পারবে না। নিজেদের ক্ষমাও করতে পারবে না। যুবভারতীর পরিকাঠামো নিয়ে বলি, সত্যিই কিছু বদলের প্রয়োজন আছে। আমাদের ড্রেসিংরুমগুলো ভাল। কিন্তু গ্যালারির টয়লেটগুলো একেবারেই ভাল নয়। স্টেডিয়ামের দেওয়াল বেশ কিছু জায়গায় ভেঙে পড়ছে। যা দেখে বাইরের কেউ মাঠে ঢুকতে চাইবে না। এক কাপ চা বা কফির সঙ্গে একটা স্যান্ডউইচ নিয়ে মেজাজে ফুটবল দেখার যে আনন্দটা, সেটা এখান থেকে পাওয়া মুশকিল। তা ছাড়া আমার মনে হয় মেয়েদের জন্য একটা আলাদা এনক্লোজার থাকা দরকার। মেয়েরাও তো কম ফুটবল-পাগল নয়!
প্র্যাক্টিসে যে সেট-পিস মুভমেন্টের ফুটেজ দেখে মর্গ্যান ক্ষুব্ধ
কলকাতা ফুটবলে যিনি মেয়েদের এক নম্বর হার্ট-থ্রব, সেই টোলগে-ইস্যুতেও কি ময়দানের অপেশাদারিত্ব ধরা পড়েনি?
ওটা খুব পুরোনো ব্যাপার। নতুন করে কিছু আর বলতে চাই না।
আমি ব্যাপারটাকে খুব সহজ ভাবে দেখি। ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে ওর চুক্তি শেষ হয়ে গিয়েছিল। ও নতুন ক্লাবে সই করল। পেশাদার ফুটবলে এ রকম আকছার হচ্ছে। এটা নিয়ে মেগা সিরিয়াল বানানোর কি কোনও দরকার ছিল?


ময়দানের রেফারিং? অপেশাদারিত্বের আরও এক নমুনা নয় কি?
সব সময় রেফারিদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। সে দিনের ডার্বির কথাই ধরুন। আগেও বলেছি, সে দিন রেফারির কোনও ভুল ছিল না। প্লেয়াররা যদি রেফারির সঙ্গে এ ভাবে দুর্ব্যবহার করে, এবং ব্যাপারটা যদি হাতাহাতি পর্যন্ত গড়ায়, তা হলে ও ভাবেই মাঠ থেকে প্লেয়ারদের বের করে দেওয়া উচিত। আর এখানে আমি দেখেছি প্লেয়াররা অল্পেতেই মাথা গরম করে রেফারির উপর চড়াও হয়। আমার ছেলেদের যেটা করতে আমি একদম বারণ করে দিয়েছি। কিন্তু সব ক্লাব যে আমার নিয়ম মেনে চলবে,
তা তো হয় না।


ময়দানে আরও একটা জিনিস হয়। এর সঙ্গে ওকে লড়িয়ে দেওয়া। যেমন এখন পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তুলনা চলছে আপনার।
ওই ম্যাচ জয়ের রেকর্ডের কথা বলছেন তো? ও সব নিয়ে আমি ভাবি না।

নতুন বছরে ময়দানের কর্তাদের কাছ থেকে কোন কোন রেজলিউশন আপনি দেখতে চান?
দেখতে তো চাই অনেক কিছু। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত ধ্যানধারণার সঙ্গে ময়দানি কর্তাদের চিন্তাভাবনা না-ও মিলতে পারে। তাই বলে লাভ নেই। আমি মনে করি ইস্টবেঙ্গল যেহেতু আমাকে মাইনে দেয়, তাই শুধু এই ক্লাবটাকে নিয়েই ভাবা ভাল।

আর আপনার নিজের রেজলিউশন?
নতুন বছরে আমাকে কী কী করতে হবে, সে রকম কোনও লিস্ট আমি বানাই না। কারণ শেষ পর্যন্ত সেটা কখনওই মেনে চলতে পারি না! তবে ইস্টবেঙ্গল কোচ হিসেবে একটা রেজলিউশন নিয়েছি। ক্লাবকে এ বার আই লিগ দিতে হবে। ওই ট্রফিটা এখনও আমি পাইনি।

শেষ প্রশ্ন। কলকাতা ফুটবলকে একটা শব্দে ধরতে গেলে কী বলবেন?
এই তো মুশকিলে ফেললেন...
সে রকম কোনও শব্দ কি
ডিকশনারিতে আছে?

তবু?
(মিনিট দুয়েক ভেবে) হেকটিক!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.