রায়গঞ্জের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রশাসন রাজ্য সরকারের কাছে বিএসএফ মোতায়েন করার প্রস্তাব পাঠালেও তা আদতে কার্যকরী হবে কি না তা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সংশয়ে। সম্প্রতি শহরে লাগাতার খুন-সহ নানা অপরাধের ঘটনা ঠেকাতে নানা রাজনৈতিক দল আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েনের দাবি করেন। মঙ্গলবার জেলাশাসক রাজ্য সরকারের কাছে শহরে কিছু দিনের জন্য বিএসএফ মোতায়েন করার প্রস্তাব পাঠান। বুধবার জেলাশাসর পাসাং নরবু ভুটিয়া বলেন, “বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের দাবি অনুযায়ী রাজ্য সরকারের কাছে বিএসএফ মোতায়েন করার প্রস্তাব পাঠিয়েছি। ওই প্রস্তাব কার্যকর করার বিষয়টি সরকারের।”
এদিকে বিএসএফ মোতায়েন করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সম্পাদক অসীম ঘোষ। তিনি বলেন, “একের পর এক অপরাধের ঘটনার জেরে রায়গঞ্জে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলেও ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। শহর জুড়ে পুলিশি অভিযান চলছে। জনজীবন স্বাভাবিক হয়েছে। তাই বর্তমানে বিএসএফ মোতায়েন করার কোনও দরকার নেই বলে আমাদের ধারণা।” জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দ ও সিপিএমের রায়গঞ্জ লোকাল কমিটির সম্পাদক নীলকমল সাহা এদিনও পৃথক ভাবে অভিযোগ করেন, “পুলিশি নিষ্ক্রিয়তায় শহরের আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে। পুলিশ সুপার ব্যর্থ। মানুষের আতঙ্ক কাটেনি। বিএসএফ মোতায়েন করা হলে বাসিন্দারা আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবেন। তবে শাসকদলের চাপে আদৌ বিএসএফ মোতায়েন করা সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, বিএসএফ মোতায়েন হলে রাজ্য সরকার যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে ব্যর্থ তা প্রমাণ হয়ে যাবে।” এ দিকে শহরের বাসিন্দাদের আতঙ্ক কাটাতে এদিন বিজেপির তরফে জেলা প্রশাসনের কাছে শান্তি বৈঠকের দাবি জানানো হবে বলে ঘোষণা করা হয়। বিজেপির জেলা সভাপতি শুভ্র রায়চৌধুরী বলেন, “শহরে রাজনৈতিক বা সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনা না ঘটলেও প্রশাসন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনদের নিয়ে শান্তিবৈঠক করলে বাসিন্দারা ৃআতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে আমাদের ধারণা।” সিপিএম নেতা নীলকমলবাবু বলেন, “পুলিশের সক্রিয়তা না বাড়িয়ে শান্তি বৈঠকের প্রস্তাব হাস্যকর। তৃণমূল নেতা অসীমবাবুর দাবি, “দুষ্কৃতীরা কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মী সমর্থক নয়। তাই শান্তি বৈঠকের প্রেশ্নই ওঠে না।”
রায়গঞ্জে গত দু’মাসে ৯ টি খুনের ঘট না ছাড়াও দুষ্কৃতীদের মধ্যে গুলি বোমা নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত শুক্রবার স্থানীয় কেবল চ্যানেলের বার্তা সম্পাদক প্রেস ক্লাবের সহ সম্পাদক সঞ্জীব বর্ধনকে দুষ্কৃতীরা গুলি করে খুন করার পরে শহর জুড়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভ বাড়তে থাকে। পুলিশের ব্যর্থতার প্রতিবাদে সোমবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ডাকা বন্ধে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে যায়। সঞ্জীববাবুকে খুনের ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এখনও দুই অভিযুক্ত অধরা। উত্তর দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডেভিড ইভান লেপচা বলেন, “আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে পুলিশি অভিযান চলছে। নানা মামলায় অভিযুক্তরা সবাই পালিয়ে যাওয়ায় তাদের ধরতে সাময়িক দেরি হচ্ছে।” |