পেটে খিদে, তার উপর তীব্র ঠান্ডার আক্রমণে কাবু ডুয়ার্সের দুই বন্ধ বাগানের শ্রমিকরা একে নানা অসুখে ভুগে ঠিকঠাক চিকিৎসা পাচ্ছিলেন না। তার উপর শীতের কামড়ে পর পর দু’দিনে বন্ধ দলমোড় বাগানের দুই বাসিন্দার মৃত্যুর অভিযোগ উঠল। গত ছয় মাস যাবত বন্ধ ওই বাগানে এ নিয়ে ২৩ জনের মৃত্যু হল। সোমবার মৃত্যু হয়েছে বাগানের বড়া লাইনের বাসিন্দা সোমরা ওঁরাও (৬২)। দীর্ঘ দিন ধরে তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। মঙ্গলবার শেষ রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। ৭৬ বছর বয়সী বৃদ্ধা মারিয়াম তিরকে কয়েক মাস ধরে অসুস্থ ছিলেন। ঠিকঠাক চিকিৎসা করাতে পারেননি। উপরন্তু, তীব্র ঠাণ্ডা সইতে না-পেরে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেশীদের দাবি। গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য দশরাম টোপ্পো বলেন, “বহু মানুষের শীত পোশাক নেই। খাবার নেই। মৃত্যুই যেন ভবিতব্য।” গত দশ বছর ধরে বন্ধ থাকা ঢেকলাপাড়ার হালও একই রকম দশ বছরে বান্দাপানি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসা হাতির হানায় গোটা পঞ্চাশেক ঘর তছনছ হয়েছে তার উপর বাগানের ঘর বাড়ি মেরামতি করার দায়িত্ব নেন। মালিকপক্ষ মালিক না-থাকায় ১০ বছর ধরে বাড়ি ঘরের জীর্ণ দশা হলেও তা মেরামতি করার কাজ করতে পাচ্ছেন না। দুঃস্থ শ্রমিকরা রাতে ভাঙা ঘরে হু হু করে ঢুকে পড়ছে। ঠাণ্ডা কনকনে হাওয়া কিছু দিন আগে পরিবার প্রতি এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন একটি করে কম্বল দিয়েছিল তা দিয়ে কোনওমতে জড়োসড়ো হয়ে ঘুমোতে হচ্ছে। কিছু বাসিন্দা রাতভর ঘরে আগুন জ্বালিয়ে তার পাশে শুতে বাধ্য হচ্ছেন। বাগানের নেপানিয়া ডিভিশনের বাসিন্দা অসুস্থ চিন্তামণি বাগদির ঘর হাতিতে ভেঙেছে কয়েক মাস আগে। স্বামী কাল্টু নদীতে দিন ভর নদী থেকে পাথর তুলে ঠিকাদারকে দিয়ে দিনান্তে ৩৫-৪০ টাকা হাতে পান। সে কাজ যে প্রতিদিন মিলবে তার নিশ্চয়তা নেই। চিন্তামণির কথায়, “টাকা কোথায় ঘর মেরামতি করব? খাবারই জোটানো দায়।” ঢেকলাপাড়া বাগানের পাশে দোতলা পঞ্চায়েত ভবন। আরএসপি দলের দখলে গ্রাম পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েত দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, বাগানে মোট ৪৬২ টি পরিবার থাকলেও বিপিএল তালিকায় নাম রয়েছে মাত্র ১১৩ জনের। গত ১০ বছরে ইন্দিরা আবাসের ঘর মিলেছে ২২ জনের। বাগানের বহু বাড়ির অবস্থা জরাজীর্ণ তা মেনে নিলেও কেন ইন্দিরা আবাস পাইয়ে দিতে তাঁরা উদ্যোগী হচ্ছেন না সেই প্রশ্নে প্রধান শুক্রা ওঁরাও বলেন, “বেশ কিছু কারণে বিপিএল তালিকা ভুক্ত সকলকে ইন্দিরা আবাস দেওয়া সম্ভব হয়নি। কী ভাবে তারা ইন্দিরা আবাস পেতে পারে সে বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।” জলপাইগুড়ির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন সরকার জানান, দুটি মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে খোঁজ খবর চলছে। এ দিকে, সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর উদ্যোগে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঢেকলাপাড়ার ১৫ জন অসুস্থকে ভর্তি করানো হয়েছে। তবে তাঁদের চিকিৎসা ঠিকঠাক হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন রোগীদের পরিবারের লোকজনেরা। দিলবাতি মুণ্ডা এমনই একজন রোগী। তাঁর মা চঞ্চলা দেবীর কথায়, “মেয়ে ঠিকঠাক হাঁটতে পারে না। বাড়িতে অভাব। এভাবে চিকিৎসার নাম করে তা হলে কেন তাদের নিয়ে যাওয়া হল বুঝছি না।” |