গত ডিসেম্বরে ফাঁসিদেওয়া থানার রাবভিটায় বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতা নিয়ে গ্রামবাসীদের সঙ্গে এলাকার একাংশ বাসিন্দার গোলমাল হয়। কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের বাঁশ নিয়ে তেড়ে যান একদল গ্রামের মহিলা। মহিলা পুলিশ অফিসার, কনস্টেবল না থাকায় তাঁদের সামাল দিতে হল পুরুষ পুলিশকর্মীদের। শেষে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা এলাকার সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের ‘ময়দানে’ নামিয়ে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এর কিছুদিন আগে নকশালবাড়ি থানার রথখোলা এলাকার জমি নিয়ে দুই প্রতিবেশীর গোলমাল শুরু হয়। বচসা, কথা কাটাকাটি শুধু নয় হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন মহিলারাও। শেষে ওই এলাকার বাসিন্দাদের কাজে লাগিয়ে অবস্থা স্বাভাবিক করেন পুলিশ অফিসারেরা। দুটি ক্ষেত্রেই অবশ্য মহিলা পুলিশ অফিসার এবং কনস্টেবলদের না থাকায় সমস্যায় পড়েন তাঁরা। একই অবস্থা খড়িবাড়ি থানারও।
দার্জিলিং জেলা পুলিশ ওই তিনটি গ্রামীণ থানার এই অবস্থা চলছে গত পাঁচ মাস ধরে। গত বছরের অগস্ট মাসে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট তৈরি হওয়ার পর থেকেই ওই সমস্যায় পড়েছে থানাগুলি। তিন থানার পুলিশ অফিসারেরা জানাচ্ছেন, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে শিলিগুড়ি মহিলা থানা তৈরি করা হয়। সেই সময় সমতলের ওই থানাগুলি থেকে মহিলা ৩ জন অফিসার এবং ১৭ জন কনস্টেবল মহিলা থানায় নিয়োগ করা হয়। গোটা শিলিগুড়ি মহকুমা ওই মহিলা থানার আওতায় সেই সময় থাকায় খুব একটা সমস্যা হয়নি।
কিন্তু কমিশনারেট মহিলা থানাটি ঢুকে পড়ায় মহিলা অফিসার শূন্য হয়ে পড়ে তিনটি গ্রামীণ এলাকার থানা। জরুরি প্রয়োজনে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের কার্শিয়াং থানা থেকে অফিসার, কনস্টেবলদের এনে কাজ চালাতে হচ্ছে জেলা পুলিশকে। মহিলা পুলিশ কর্মী বলতে তিন থানার ভরসা হাতে গোনা জনা দশেক হোমগার্ড এবং এনভিএফ কর্মী। সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল। তিনি বলেন, “বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। জেলায় যে সংখ্যক মহিলা কর্মী আছেন তাঁদের দিয়েই কাজ চালাতে হচ্ছে।”
জেলা পুলিশের কয়েক শীর্ষ কর্তা জানান, প্রায় ৪ লক্ষ ৭০ হাজার জনবসতির পূর্ণ ওই তিনটি থানায় আওতায় গুরুত্বপূর্ণ প্রায় ৩০ কিলোমিটার বাংলাদেশ এবং নেপাল সীমান্ত এলাকা রয়েছে। বিএসএফ এবং এসএসবিতে আলাদা মহিলা বাহিনী থাকায় সীমান্তে কোনও সমস্যা হলে তা বর্তমানে মিটে যাচ্ছে। কিন্তু কোনও সময় বড় সমস্যা দেখা দিয়ে তা কীভাবে সামাল দেওয়া হবে তা ভেবেই উদ্বিগ্ন পুলিশ অফিসারেরা। ঘটনাচক্রে শিলিগুড়ির বড় গ্রামীণ এলাকায় দুই জন বিধায়কই কংগ্রেসের। দুই জনই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
মাটিগাড়া নকশালবাড়ি বিধায়ক শঙ্কর মালাকার বলেন, “দার্জিলিং জেলা পুলিশের পরিকাঠামো ঠিক না করেই শিলিগুড়ি কমিশনারেট তৈরি হওয়ায় এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। মহিলা অফিসার, কর্মী ছাড়া থানা ভাবাই যায় না। রাজ্য পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাচ্ছি।” আর ফাঁসিদেওয়ার বিধায়ক সুনীল তিরকে বলেন, “মহিলাদের উপর নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলছে। সেখানে থানায় মহিলা পুলিশ অফিসার, কনস্টেবল থাকবে না, এটা ভাবাই যায় না।”
পুলিশ সূত্রের খবর, একজন ‘রাইটার’ এবং চারজন ‘চাপরাশি’ নিয়ে ১৮৩৯ সালে গঠিত হয় দার্জিলিং জেলা পুলিশ। ৮০ দশকে পাহাড়ের আন্দোলনের সময় নিয়োগ হয় দুই জন মহিলা এএসআই এবং ৭৩ জন কনস্টেবল। বর্তমানে দার্জিলিং জেলা পুলিশের ১৪টি থানায় একজন মহিলা অফিসার-কর্মীর সংখ্যা ৩৭ জন। ১ জন ডিএসপি, তিনজন সাব ইন্সপেক্টর এবং ৩৫ জন কনস্টেবল। সকলেই পাহাড়ি এলাকার থানায় কর্মরতা। সমতলের ৩টি থানায় কেন একজন কনস্টেবলকেও রাখা হয়নি সেই প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি। জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, নতুন মহিলা পুলিশকর্মী নিয়োগ হলে সমতলে পাঠানো হবে। |