নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
ত্রিফলা আলোর পর এ বার নদীখাতের মাটি কাটতে প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচ করা নিয়েও দুর্নীতির অভিযোগ তুলল বামেরা। বুধবার শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন তাঁরা। হিলকার্ট রোডে এসজেডিএ ভবনের সামনে বিক্ষোভ সভা করে জেলা বামফ্রন্ট। বামেদের অভিযোগ, শিলিগুড়ির জোড়াপানি নদীখাত পরিষ্কার করার কাজেও দুর্নীতি হচ্ছে। কাজ না-হতেই টাকা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ নদী আগের মতোই রয়েছে। ত্রিফলা আলোর ক্ষেত্রে প্রায় ৫ কোটি টাকা দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছিল, তা নিয়ে সরব হন বামেরা। জেলা সিপিএম নেতৃত্বের পাশাপাশি শরিক দল সিপিআই-এর জেলা সম্পাদক উজ্জ্বল চৌধুরী, আরএসপি-র জেলা নেতা দিলীপ রায় এসজেডিএ-র বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন।
|
ত্রিফলা কাণ্ড নিয়ে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও তা নিয়ে কেন সঠিক তদন্ত হচ্ছে না সেই প্রশ্নও উঠেছে। এসজেডিএ-র বর্তমান চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “ত্রিফলা নিয়ে বিভাগীয় তদন্ত হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার সময় বাস্তুকাররা যে ভাবে বলেছেন, সেই মতো কাজ করতে হয়েছে। জোড়াপানি নদীর বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। তবে বামেরা আন্দোলন করার আগে তাদের আমলে যে দুর্নীতি হয়েছে, সেগুলির কথা যেন মাথায় রাখেন। আমরা তা মানুষকে জানাব।” চেয়ারম্যানের অভিযোগ, পরিকল্পনাহীন ভাবে বামেরাই এতদিন কাজ করেছেন। তাই মানুষ তাদের সঙ্গে নেই। এসজেডিএ-তে প্রকল্প ভিত্তিক টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। সেই টাকা খরচই করতে পারেননি বামেরা। তাই পড়ে ছিল। বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ ঝুলে ছিল বলে রুদ্রবাবুর দাবি। তিনি বলেন, “কাওয়াখালি উপনগরীর প্রকল্পের সমস্যা মিটিয়েছি। বামেরা তা মেটাতে পারেননি। তা ছাড়া চতুর্থ মহানন্দা সেতুর কাজ শেষ পর্বে। পঞ্চম মহানন্দা সেতুর কাজও শুরু হয়েছে। টি-পার্ক, ড্রাইপোর্ট-এর যন্ত্রাংশ বামেরা কিনেছিলেন অথচ কাজ করাতে পারেননি। সেই কাজ শেষ করে এনেছি। মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানে নর্দমার জল পরিস্রুত করে নদীতে ফেলার যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, সেই কাজও শেষের পথে। ফুলবাড়ি ল্যান্ড কাস্টম স্টেশনের কাজ শেষ, তা উদ্বোধনের অপেক্ষায়।”
সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকারের পাল্টা অভিযোগ, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই দার্জিলিং মোড় থেকে বাগডোগরা পর্যন্ত ত্রিফলা আলো লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। অথচ জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ নিষেধ করায় এখন তা কাওয়াখালি এলাকায় মাঠের মাঠে, পুকুর পাড়ে লাগানো হচ্ছে। তাঁর কথায়, “এসজেডিএ-র অর্থ নয়ছয় করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের সততা থাকলে এ ব্যাপারে তদন্ত করা হোক।
|
কাঠগড়ায় এসজেডিএ |
• ত্রিফলা আলোয় দুর্নীতি ৫ কোটি টাকা • জোড়াপানি নদীখাত পরিষ্কারে কয়েক কোটি টাকা
• নিয়োগ,পদোন্নতিতে অনিয়ম • একই ঠিকাদারকে বারবার বরাত •ঠিকাদার-ইঞ্জিনিয়র যোগসাজশ |
|
|
নানা অভিযোগ
নানা নেতার নানা মত |
|
ত্রিফলা আলোর অভিযোগ নিয়ে বিভাগীয় তদন্ত হচ্ছে। বাম জমানায় প্রকল্পের টাকা খরচ করা হয়নি। জমি কেনা থেকে নানা ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে। আমরা তা মানুষকে জানাব। এসজেডিএ’র কর্মীদের বাম জমানায় পদোন্নতি হয়নি। আমরা তা করেছি।
রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য,চেয়ারম্যান |
|
|
চেয়ারম্যানই বোর্ড চালান। যা বলার তিনিই বলবেন।
শঙ্কর মালাকার,
এসজেডিএ’র সদস্য
|
|
|
ত্রিফলা আলো নিয়ে তো তৃণমূলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে। চেয়ারম্যানও স্বীকার করেছেন জরুরিভিত্তিতে টেন্ডার না ডেকেই কাজ করতে হয়েছে। জোড়াপানি নদীর কাজে একই রকম অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দেখা দরকার।
অশোক ভট্টাচার্য,
প্রাক্তন পুরমন্ত্রী |
|
|
জোড়াপানি নদীর একাংশ আমাদের বরো এলাকার মধ্যে পড়ে। ওই নদীতে কোনও রকম কাজ হচ্ছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে আমি তার কিছুই জানি না। নদী সংস্কারের ব্যাপারে রুদ্রবাবুর সঙ্গে এই নিয়ে আমি কথা বলব।
সমীরণ সূত্রধর,
পুরসভার বরো চেয়ারম্যান |
|
অভিযোগ |
* অপহরণের বিষয়টি প্রথমে মানতে চাওয়া হয়নি।
* পুলিশ গাড়ি-তেল অভাব জানিয়ে খুঁজতে দেরি করে।
* বাড়ির লোকজনকে গাড়ি দিতে হয়েছে।
*কোথায় খুঁজতে যেতে হবে তা অভিযোগকারীর কাছে জানতে চাইত পুলিশ।
* মোবাইলের কল রেকর্ড পরীক্ষার পরে তা প্রকাশ্যে জানিয়েছে পুলিশ। |
|
যুক্তি |
• পুলিশ মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে।
• পুলিশ মিরিক পর্যন্ত গিয়েছে।
• অভিযোগকারীর গাড়ি নেওয়া ঠিক হয়নি।
• অভিযোগকারীর সঙ্গে আলোচনা হতেই পারে।
• কল রেকর্ডের তথ্য কোন অফিসার প্রকাশ্যে জানিয়েছেন দেখা হবে। |
|
না হলে আমরা গণ আন্দোলনে নামব।” তা ছাড়া, তাঁর প্রশ্ন, বাম জমানায় চতুর্থ এবং পঞ্চম মহানন্দা সেতু তৈরির যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তা এখনও কেন সম্পূর্ণ করতে পারেনি বর্তমান কর্তৃপক্ষ? তিনি কটাক্ষ করেন, এ সব কাজের চেয়ে বর্তমান শাসক পক্ষ শ্মশানে দশকর্মার দোকান চালু, পুরহিতদের ভাতা দিতে বেশি উদ্যোগী। কর্মচারীদের পদোন্নতি, আচরণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন। ডিওয়াইএফের জেলা সম্পাদক শঙ্কর ঘোষ জানান, জোড়াপানি নদী খাত পরিষ্কার করতে নিয়ম না মেনেই কাজ করা হচ্ছে। তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ লোকজনদের কাজ পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। ত্রিফলা আলোর ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। তিনি বলেন, “কাজের পরিকল্পনা নয়, এসজেডিএ দুর্নীতির পরিকল্পনা করছে। নিয়োগেও দুর্নীতি হচ্ছে।” এসজেডিএ-র সদস্য ছিলেন শিলিগুড়ি পুরসভার বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম। তাঁর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই রাজ্য জুড়ে ত্রিফলা আলো বসানো হচ্ছে। উত্তরবঙ্গে এ কাজে এসজেডিএ দুর্নীতি করছে। তাঁর দাবি, প্রাক্তন পুরমন্ত্রী এসজেডিএ-র দায়িত্বে থাকার সময় নানা পরিকল্পনা খাতে বরাদ্দ আনেন। বর্তমান চেয়ারম্যান এক টাকাও আনতে পারেননি। বামেদের আমলের কাজের নিজেদের করা বলে সাইন বোর্ডে লিখে প্রচার করছেন। |