সকাল ফুটতে কম করে সাড়ে আটটা। কুয়াশা গাঢ় থাকলে তা ন’টাও বেজে যাচ্ছে। তারপরে বিকেল চারটে বাজতে না বাজতেই ঘড়ি দেখা শুরু হয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যা হওয়ার আর দেরি নেই। প্রবল শীতের চাপে শীতের ছোট দিন আরও ছোট হয়ে যাচ্ছে। বাড়ি থেকে বেরোতে দেরি হয়ে যাচ্ছে, বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাড়াতাড়ি। ৮ জানুয়ারি নদিয়ার তাপমাত্রা গত ত্রিশ বছরে সব থেকে কম ছিল বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি দফতেরর কর্তারা। নদিয়ার কৃষি দফতেরর ডেপুটি ডাইরেক্টর হরেন্দ্রকুমার ঘোষ বলেন, “মঙ্গলবার নাকাশিপাড়ায় সন্ধ্যায় তাপমাত্রা ছিল ৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার সকালে এই তাপমাত্রা আরও নেমে ৩.২ ডিগ্রি হয়েছে। সাম্প্রতিক কালে ঠান্ডা এত কমেনি। গত বছর তাপমাত্রা নেমেছিল ৪.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।” তাঁর কথায়, “শুধু যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রাই কমছে তাই নয়, দিনভর তাপমাত্রা থাকছে স্বাভাবিকের চেয়ে ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি কম। তাই কষ্ট বাড়ছে।”
কষ্ট বলে কষ্ট। নবদ্বীপ ধাম স্টেশনে কলকাতা যেতে লোকাল ট্রেন ধরতে সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ দাঁড়িয়ে কার্যত ঠকঠক করে কাঁপছিলেন পরমেশ দত্ত। তিনি বলেন, “প্রায় ২৫ বছর ধরে ট্রেনে নিত্যযাত্রী আমি। এমন ঠান্ডা কখনও দেখিনি।” দায় না পড়লে বস্তুত ঘর থেকে লোকজন বেরোচ্ছেনই কম। নদিয়া জেলা বাসবালিকদের সমিতির অন্যতম কতর্ া অসীম দত্ত বলেন, “বাসে লোকজন কম। সাড়ে ন’টার আগে যাত্রী হচ্ছে না। বিকেল পাঁচটা বেজে গেলেই বাস ফাঁকা হতে শুরু করছে। তাই ভোর ও রাতের কিছু বাস বিভিন্ন রুটে উঠে যাচ্ছে।”
একই ছবি জলপথেও। নবদ্বীপ-মায়াপুর-স্বরূপগঞ্জ-তারণপুর এই চারটি ঘাট দিয়ে শীতকালে পর্যটকের ঢল নামে। তবে সন্ধ্যার পরে খেয়াঘাট কার্যত জনশূন্য হয়ে পড়ছে। পরপর দুর্ঘটনার পরে বিশেষ সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে জলপথ পরিবহণ সমিতি। ওই সমিতির সম্পাদক গোলাপ দাস বলেন, “ঘন কুয়াশায় বা রাতের দিকে দৃশ্যমানতা কম থাকায় নৌকা ছাড়ছি না। যাত্রীদের জন্য কিছু সতর্কতা মূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। জেটিতে ভিড়ের সময় বিপদ এড়াতে লোহার রেলিংও লাগানো হচ্ছে। ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবীরা।” |