|
|
|
|
বকেয়া বিদ্যুৎ বিল ৯ কোটি, খরচ কমাতে বিকল্প ভাবনা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
বিদ্যুৎ বিল মেটাতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা পুর-কর্তৃপক্ষের। মেদিনীপুরের মতো পরিস্থিতি খড়্গপুরেও। বিদ্যুৎ দফতর থেকে মাঝেমধ্যেই বকেয়া বিল মেটানোর আবেদন জানানো হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নিরুপায়। স্রেফ বিদ্যুৎ বিলের জন্য প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ হওয়ায় পুরসভায় আর্থিক সঙ্কটও দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে শহরের কয়েকটি এলাকায় সৌর আলো লাগানোর কথা ভাবছে পুরসভা। আপাতত, শ্মশান এবং কবরস্থানগুলোয় এই আলো লাগানো নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। খড়্গপুরের ভারপ্রাপ্ত পুরপ্রধান তুষার চৌধুরী বলেন, “প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল মেটাতেই মোটা অঙ্কের টাকা চলে যায়। কয়েকটি এলাকায় যদি সোলার আলো লাগানো যায়, তাহলে খরচ কিছুটা কমে। সেই জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে।” তাঁর কথায়, “আমরা এ নিয়ে পুর- দফতরে নির্দিষ্ট প্রস্তাব দেব। প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল মেটাতে গিয়ে পুরসভাকে কী সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে, তা জানাব। পুর-দফতর অনুমতি দিলে আপাতত শ্মশান ও কবরস্থানে সৌর আলো লাগানো হবে।”
বিদ্যুৎ বিল বাবদ প্রতি মাসে খড়্গপুর পুরসভার গড়ে ৩৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়। এর মধ্যে শুধু পথবাতির জন্যই খরচ হয় প্রায় ১৫ লক্ষ। বাকিটা জলপ্রকল্প-সহ অন্য ক্ষেত্রের ব্যয়। রাজ্যে পালাবদলের পর শহরের মুখ উজ্জ্বল করতে অনান্য শহরের মতো খড়্গপুরেও সুদৃশ্য ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ লাগানো হয়েছে। এরফলে বিদ্যুতের বিল বেড়েছে। সরকারের কোষাগার যখন ‘বেহাল’, তখন স্রেফ সৌন্দর্যায়ন করতে গিয়ে এমন বাতিস্তম্ভ লাগানো প্রয়োজন কী ছিল, সেই প্রশ্ন আগেই উঠেছিল। এখন খড়্গপুরে আবার নতুন করে সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এ দিকে, পুরসভার বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের অঙ্কটা প্রায় ৯ কোটি। যত মাস যাচ্ছে, বকেয়া তত বাড়ছে। খোদ ভারপ্রাপ্ত পুরপ্রধানের স্বীকারোক্তি, “ক’দিন আগেই খোঁজ নিচ্ছিলাম। তখনই জানতে পারি, পুরসভার কাছ থেকে বিদ্যুৎ দফতরের প্রাপ্য রয়েছে প্রায় ৯ কোটি টাকা।” অবশ্য তাঁর বক্তব্য, “এই পরিস্থিতি আগে থেকেই রয়েছে। আমি যতদূর জানি, আগের বোর্ডের আমলে প্রায় ৬ কোটি টাকা বকেয়া ছিল। এই বোর্ডের আমলে তা বেড়ে প্রায় ৯ কোটি হয়েছে।” তুষারবাবুর কথায়, “মাসে যত আয় হয়, তার একটা বড় অংশ যদি বিদ্যুৎ বিল মেটাতে চলে যায়, তাহলে কিছু সমস্যা হবেই। তেমন কিছু সমস্যা হচ্ছে। তবে শুধু খড়্গপুর নয়, বিভিন্ন পুরসভায় এই সমস্যা হয়। খোঁজ নিয়ে দেখেছি, মেদিনীপুরেও এমন সমস্যা রয়েছে।”
কী অবস্থা মেদিনীপুরে? কয়েক মাস আগে পুরসভার আর্থিক পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে পুরপ্রধানকে এক রিপোর্ট দেন অ্যাকাউন্ট্যান্ট। সেই রিপোর্টেই জানানো হয়েছিল, ‘চরম’ আর্থিক সঙ্কট চলছে মেদিনীপুর পুরসভায়। মাসে যেখানে আয় হচ্ছে গড়ে ৪১ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা। সেখানে ব্যয় হচ্ছে ৪১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা। সঙ্গে এও জানানো হয়, আর্থিক ঘাটতির জন্য বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থেকে গিয়েছে। বকেয়ার পরিমান প্রায় ৯ কোটি। পরিকল্পনা মতো নতুন করে অগভীর নলকূপ তৈরি এবং পানীয় জলের মাস্টার প্ল্যান প্রকল্প পুরোদমে চালু হলে প্রতি মাসে পুরসভার নিজস্ব যে আয় হয়, তার পুরোটাই বিদ্যুৎ বিল মেটাতে খরচ হবে। পরিস্থিতি দেখেই খড়্গপুরের কয়েকটি এলাকায় সোলার আলো লাগানোর উদ্যোগ শুরু হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত পুরপ্রধান তুষারবাবু বলেন, “এখনই এমন পদক্ষেপ না করলে পরবর্তী সময় সমস্যা আরও বাড়বে। বিষয়টি নিয়ে পুরসভার বোর্ড মিটিংয়েও আলোচনা হবে। শহরে ১৭টি শ্মশান এবং ৮টি কবরস্থান রয়েছে। সৌর আলো লাগানো হলে নিশ্চিত ভাবেই বিদ্যুৎ বিল কিছুটা কমবে। সেই অর্থে উন্নয়নের কাজ করা যাবে। পুরসভার প্রস্তাব লিখিত ভাবেই পুর-দফতরে পাঠানো হচ্ছে। পুর- দফতর অনুমতি দিলে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।” |
|
|
 |
|
|