|
|
|
|
নয়া প্রজন্মের চিন্তন-প্রস্তুতি |
ল্যাপটপ-ইমেল ইন, রাত-বিরেতে বৈঠক আউট |
শঙ্খদীপ দাস • নয়াদিল্লি |
দফায় দফায় বৈঠক নেই গভীর রাত পর্যন্ত। স্টেনোগ্রাফার ডেকে ডিক্টেশন দেওয়া নেই। পাতার পর পাতা প্রিন্ট আউটের বালাই নেই। কাজ চলছে ল্যাপটপে। আর মতামত লেনদেন ইমেলে। কংগ্রেসের বড় কোনও বৈঠকের আগে প্রস্তুতির যে চেনা ছবিটা এত দিন দেখা যেত, এ বার তা পাল্টে গিয়েছে অনেকটাই।
চলছে জয়পুরে দলের চিন্তন-মন্থন শিবিরের প্রস্তুতি। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকে তাঁর দফতরে বসে ল্যাপটপ খুলে খসড়া লিখছেন বা তা সংশোধন করছেন জয়রাম রমেশ। দশ নম্বর জনপথ-ঘনিষ্ঠ এই নেতার পাশে রাখা ছোট একটা সাউন্ড সিস্টেম থেকে হালকা ভেসে আসছে আবিদা পারভিনের গান। দিগ্বিজয় সিংহ তখন মধ্যপ্রদেশের রাঘোগড়ে। সেখান থেকে ইমেলে ‘ইনপুট’ পাঠাচ্ছেন। আবার তার উত্তর দিচ্ছেন জয়রাম। সেই খসড়া ইমেলেই পৌঁছে যাচ্ছে সনিয়া ও রাহুল গাঁধীর কাছে। এই দু’জনের পাশাপাশি চূড়ান্ত খসড়া রচনায় অংশ নিচ্ছেন অম্বিকা সোনি, গুলাম নবি আজাদ, অস্কার ফার্নান্ডেজরাও।
এমন নয় যে দলের এই নেতারা এই প্রথম এমন কাজে নেমেছেন। তবে তফাতটা এই যে, আগে এই জাতীয় রাজসূয় বৈঠকের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে শীর্ষ দায়িত্ব পালন করতেন প্রণব মুখোপাধ্যায়, দেবেন্দ্র দ্বিবেদী, অর্জুন সিংহের মতো বর্ষীয়ান নেতারা। অর্থনীতির বিষয়ে দিশা দেখাতেন মনমোহন সিংহ। বিষয় যখন বিদেশ, তখন সেই সংক্রান্ত খসড়া তৈরির দায়িত্ব সামলাতেন নটবর সিংহ। দলের এক নেতার কথায়, “আগে খসড়া রচনা নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠক করতেন প্রণববাবু-অর্জুন সিংহরা। দশ জনপথে গিয়েও বৈঠক হত দফায় দফায়। খসড়ার প্রতিটি শব্দ ধরে চুল চেরা বিচার চলত।” প্রণববাবু এখন রাইসিনা হিলে। অর্জুন সিংহ, দেবেন্দ্র দ্বিবেদী প্রয়াত। নটবর দল থেকে বহিষ্কৃত ভোলকার কাণ্ড তথা তেলের বিনিময়ে খাদ্য প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে।
তবে কি এত দিনে বৃদ্ধতন্ত্রের অবসান হচ্ছে কংগ্রেসে?
প্রণববাবু রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে সংসদে রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার ভার তুলনায় নবীন কমলনাথের হাতে তুলে দিয়েছেন সনিয়া। সিমলায় ঐতিহাসিক ‘বিচার মন্থন’ বৈঠকের এক দশক পর চিন্তন শিবির হতে চলেছে। জয়পুরের মঞ্চ থেকে রাহুল গাঁধীর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার চিত্রনাট্য রচনার দায়িত্বও বর্তেছে নবীনদের কাঁধে।
কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, বদলানো হচ্ছে বৈঠকের জন্য খসড়ার ধারাও। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক বিষয় নিয়ে আলাদা ভাবে আলোচনা হবে ঠিকই, কিন্তু চূড়ান্ত ঘোষণাপত্র হবে একটিই। মূলত সেই ঘোষণাপত্র রচনারই কাজ চলছে এখন। বৈঠকে আলোচনার পর তা প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন বা পরিমার্জন করা হবে। অর্জুন-দ্বিবেদীদের পরের প্রজন্ম দায়িত্ব নেওয়ার পর এ-ও এক ইতিবাচক পরিবর্তন বলেই মনে করছেন কংগ্রেস নেতারা। “তবে বৃদ্ধতন্ত্র একেবারে উঠে গেল ভাবলে ভুল হবে,” মজা করে বললেন কংগ্রেসের এক কেন্দ্রীয় নেতা। কারণ চিন্তন শিবির আয়োজন কমিটির নেতা কিন্তু দলের অশীতিপর কোষাধক্ষ, মোতিলাল ভোরা। দলের ওই কেন্দ্রীয় নেতাটির কথায়, “ভোরাজি এমনিতে সাধাসিধে। তবে একটা পয়সা এদিক-ওদিক হলেই টেনে ধরবেন। শিবিরের জন্য টাকাপয়সার হিসেব চেয়ে এ দিন সন্ধেতেও বৈঠক করেছেন তিনি।” |
|
|
|
|
|