জোড়াতালির কূটনীতিতেও ধাক্কা পাক হানায়
৬/১১-র পর দু’দেশের সম্পর্ক যেটুকু মেরামত হয়েছিল, গত কাল নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাক-আক্রমণের ঘটনার পর তা ফের বিশ বাঁও জলে চলে গেল বলেই মনে করছে নয়াদিল্লি। অনিশ্চিত হয়ে পড়ল দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ভবিষ্যৎও।
গত কাল ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে পাক সেনারা দুই ভারতীয় জওয়ানকে খুন করার পর তাঁদের মাথা কেটে নেয়। এক জওয়ানের ছিন্নমুণ্ড এখনও মেলেনি। গোটা ঘটনার তীব্র নিন্দা করে আজ পাকিস্তানের কাছে ‘জবাব’ দাবি করেছে কেন্দ্র। পাক সেনা অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে গোটা ঘটনাটিকেই ‘ভারতীয় সেনার চক্রান্ত’ বলে দাবি করেছে।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, সেনা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ বলেছেন, “আলোচনা প্রক্রিয়া নষ্টের উদ্দেশ্যেই এই ভয়ঙ্কর, অমানবিক হামলা। কোনও সভ্য দেশ তার প্রতিবেশীর সঙ্গে এমন ব্যবহার করে না।” নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত পাক রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠান বিদেশসচিব রঞ্জন মাথাই। তিনি পাক দূতকে মনে করিয়ে দেন, নিয়ন্ত্রণরেখা মেনে চলাই যে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ, সে ব্যাপারে গত ২৭ ডিসেম্বর এক আলোচনাচক্রে একমত হয়েছিলেন দু’দেশের বিশেষজ্ঞরা। তার মাত্র দু’সপ্তাহের মধ্যে এমন ঘটনায় গোটা বিষয়টিই ধাক্কা খেল।
পাক সেনার যদিও দাবি, তদন্তে তারা দেখেছে, এমন কিছুই ঘটেনি। সূত্রের খবর, পাক ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস (ডিজিএমও) আজ হটলাইনে ভারতের ডিজিএমও-র সঙ্গে কথা বলেন। তখন তিনি অভিযোগ অস্বীকারই করেছেন। যদিও আজ কলকাতায় আইএসআই-এ প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি বলেছেন, “ঘটনা তো ঘটেইছে। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে।”
প্রশ্ন উঠছে, হঠাৎ কেন পাকিস্তানের এই হঠকারিতা? গত বছরের শেষেও পাক সফরে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকেও তো নিয়মিত আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছে ইসলামাবাদ!
সুধাকর সিংহ হেমরাজ
বিদেশ মন্ত্রকের অভিযোগ, ঘরোয়া নির্বাচনে ফায়দা তুলতেই সুপরিকল্পিত ভাবে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে জারদারি সরকার। ভোটের মুখে পিপিপি চূড়ান্ত কোণঠাসা। তড়িঘড়ি ভোট হলে তাদের ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা কম। ভারত বিরোধিতার তাস খেললেই তারা কিছুটা অক্সিজেন পেতে পারত। তাৎপর্যপূর্ণ হল, এই জারদারিই ভারতকে বাণিজ্যিক ভাবে সবচেয়ে সুবিধাপ্রাপ্ত দেশ হিসেবে ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় দেশের সর্বস্তরে (আইএসআই, সেনা, বিরোধী দল এবং মোল্লাতন্ত্র) প্রবল সমালোচিত হয়েছিলেন। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাঁরা শুধু ভারত-বিরোধিতার তাসই খেললেন না, উস্কে দিলেন কাশ্মীর-প্রসঙ্গও।
আরও একটি বিষয় খতিয়ে দেখছে সাউথ ব্লক। পাক সংবিধান অনুযায়ী, জাতীয় নিরাপত্তা সঙ্কটের মুখে পড়লে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে জারদারির। গত কালের মতো আক্রমণ যদি ধারাবাহিক ভাবে ঘটে এবং ভারত যদি ধৈর্য হারিয়ে প্রত্যুত্তর দেয়, সে ক্ষেত্রে জারদারির সামনে নিরাপত্তা সংক্রান্ত অস্থিরতার মঞ্চ তৈরি হয়ে যাবে। তখন পরিস্থিতিই তাঁকে সাহায্য করবে আরও এক বছর গদিতে টিঁকে যেতে।
অনেকে বলছেন, আমেরিকার চাপ হাল্কা হওয়াতেও সাহস বেড়েছে পাকিস্তানের। ২০১৪-র মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সেনা সরাতে পাক সাহায্য দরকার আমেরিকার। তাই জঙ্গি-যোগ ইত্যাদি নিয়ে ইদানীং পাকিস্তানকে তারা ততটা চাপ দিচ্ছে না (যদিও গত কালের ঘটনার প্রেক্ষিতে দু’দেশকেই শান্তি বজায় রাখার আর্জি জানিয়েছে পেন্টাগন)। ফলে সুযোগ বুঝে পাক প্রশাসনে প্রভাব খাটাচ্ছে কট্টরপন্থীরা।
এই অবস্থায় পক্ষে ভবিষ্যৎ পাক-নীতি প্রণয়ন নিঃসন্দেহে কেন্দ্রের কাছে চ্যালেঞ্জ। দু’দেশের মধ্যে আস্থাবর্ধক প্রক্রিয়া এমনিতেই ঝুলে রয়েছে। ২৬/১১-র অভিযুক্তদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না ইসলামাবাদ। স্বাভাবিক ভাবেই সরকারের পাক নীতি নিয়ে আজ তোপ দেগেছে বিজেপি। অরুণ জেটলি দাবি করেছেন, পাক নীতি নিয়ে নতুন করে ভাবা হোক। বস্তুত, মনমোহন বরাবরই পাক গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার পক্ষে। শর্ম অল শেখের শীর্ষ বৈঠকের পর এই নীতি ঘোষণা করে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি। তা সত্ত্বেও দু’দেশের কূটনৈতিক আদানপ্রদান (কখনও কখনও ‘ট্র্যাক-টু’) জারি ছিল। কিন্তু গত কালের ঘটনায় সেই প্রয়াসটুকুও থমকে গিয়েছে। বারবার প্রশ্ন উঠছে, এখন কী করবেন মনমোহন?
কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ জানাচ্ছেন, আপাতত আলোচনা বন্ধ থাকারই সম্ভাবনা। এমনিতেই ভারতের উদ্বেগের অধিকাংশ বিষয়ে পাক নেতৃত্ব নির্বিকার ছিলেন। কাজেই আলোচনা চালিয়েও অন্তত এই মুহূর্তে দিল্লির কিছু পাওয়ার ছিল না। এর পর লোকসভা ভোট এগিয়ে এলে এমনিতেও পাক-বিরোধিতার সুর চড়াতে হবে কেন্দ্রকে। আপাতত কংগ্রেসের আসন্ন চিন্তন সম্মেলনে বিদেশনীতি সংক্রান্ত প্রস্তাবে বেশ কিছু কড়া অবস্থান নেওয়া হবে।
নিহত দুই জওয়ান সুধাকর সিংহ ও হেমরাজের দেহ আজ দিল্লি হয়ে তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.