|
|
|
|
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে রায় আজ |
গণধর্ষণ কাণ্ডে রুদ্ধদ্বার শুনানির সিদ্ধান্তই বহাল |
সংবাদসংস্থা • নয়াদিল্লি |
দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডে গোপন শুনানির সিদ্ধান্তই বহাল রইল। এবং সেই সঙ্গে আদালত কক্ষে সংবাদমাধ্যমকে ঢুকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্তও। ১৬ ডিসেম্বর গণধর্ষণের রাতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে যে মামলা শুরু করেছিল, কাল তার রায় দেওয়া হবে। তার আগে আজ দিল্লির পুলিশকে কার্যত ভর্ৎসনা করেছেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি মুরুগেশন। তদন্তে গাফিলতি নিয়ে বিক্ষোভ তীব্র আকার নেওয়ার পরে সাসপেন্ড করা হয়েছে পুলিশের এক জুনিয়র অফিসারকে। কিন্তু উঁচু পদের কারও বিরুদ্ধে কেন পদক্ষেপ করা হয়নি, তা নিয়ে এ দিন প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি। বস্তুত আগামিকালের রায়েও এর প্রভাব পরতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
গণধর্ষণ মামলার প্রকাশ্য শুনানির আর্জি খারিজ করতে গিয়ে জেলা ও দায়রা বিচারক আর কে গাউবা আজ জানান, গত ৭ জানুয়ারি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোনও বেআইনি সিদ্ধান্ত নেননি। বরং তা যথার্থই ছিল। ম্যাজিস্ট্রেট তাঁর এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে কিছু করেননি। ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩২৭(২) নম্বর ধারায় তিনি নিয়মে বাঁধা।” এই ধারা অনুযায়ী, ধর্ষণ বা ওই ধরনের অপরাধে রুদ্ধদ্বার শুনানি করা যেতে পারে।
গাউবার কথায়, “শুনানির দিন এজলাসে এত ভিড় হয়েছিল যে, আসামিদেরও দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। ফলে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়।”
সাধারণ মানুষ ও মামলার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবীদের তরফে ম্যাজিস্ট্রটের ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে আবেদন জানিয়েছিলেন দুই আইনজীবী, ডি কে মিশ্র এবং পুনম কৌশিক। তাঁদের দাবি ছিল, ম্যাজিস্ট্রেটের ওই সিদ্ধান্ত দেশবাসীর প্রতি আঘাত। কারণ তাঁরা এই মামলা সম্পর্কে জানতে উদ্গ্রীব হয়ে রয়েছেন। মূল বিচার শুরু হলে দায়রা আদালতে না হয় রুদ্ধদ্বার শুনানির সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারত। তাঁদের আরও দাবি, প্রচুর পুলিশ নিয়োগ করার কারণেই সে দিন আদালতে এত ভিড় হয়েছিল।
গোপন শুনানি হোক, চায় না নিহত তরুণীর পরিবারও। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম তাঁর বা পরিবারের পরিচয় প্রকাশ না করলেও বিদেশি সংবাদমাধ্যম তা করেছে। আজও ব্রিটেনের এক সংবাদ চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গণধর্ষিতা ওই তরুণীর বাবা বলেছেন, “আমি চাই ওর নামে নতুন আইন হোক, কিংবা একটি হাসপাতাল। বরাবরই ও ডাক্তার হতে চাইত।” এই ব্রিটিশ চ্যানেলটিও নামধাম জানিয়েছে নিহত তরুণীর। তাঁর বাবার আরও বক্তব্য, “গোপনে শুনানি হলে সাধারণ মানুষ মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে পারবেন না। আমার মেয়ের মৃত্যু দেশে যে জাগরণ এনেছে, দেশ জুড়ে ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানি নিয়ে যে প্রতিবাদ-আন্দোলন শুরু হয়েছে, তা-ও ধীরে ধীরে থিতিয়ে পড়বে।”
নাবালক বলে দাবি করায় এই মামলার ষষ্ঠ অভিযুক্তের বিচার হচ্ছে জুভেনাইল বোর্ডে। সত্যিই সে নাবালক কি না সে বিষয়টি এখন বোর্ডের বিবেচনাধীন। ১৫ তারিখ এ নিয়ে শুনানি হওয়ার কথা। তবে ইতিমধ্যেই নাবালকদের বিচারের আইন সংশোধনের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। দিল্লি হাইকোটে এ নিয়ে জনস্বার্থের আবেদনও জমা পড়েছে। ওই আবেদনের ভিত্তিতে আজ হাইকোর্ট ওই মামলার বিষয়ে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রক এবং আইন ও বিচার মন্ত্রককে নোটিস পাঠিয়েছে। ১৪ই ফেব্রুয়ারি ফের ওই জনস্বার্থ মামলার শুনানি হবে।
ওই আবেদনে বলা হয়েছে, বারবার নৃশংস ও জঘন্য অপরাধ করেও অপরাধী স্রেফ নাবালক বলে অল্প দিন বিশেষ সংশোধনাগারে কাটিয়েই ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। কারণ, জুভেনাইল আইনে, নাবালককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যায় না। ১৮ বছর হওয়ার পরে অপরাধীকে বিশেষ হোমেও রাখা যায় না। এই আইন পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছে জনস্বার্থ মামলা করেছেন আইনজীবী শ্বেতা কপূর।
কেন্দ্রের তরফে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল রাজীব মেহরা জানিয়েছেন, ধর্ষণের ক্ষেত্রে আরও কঠোর আইন প্রণয়ন করা যায় কি না, বর্মা কমিটি সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। কিন্তু জুভেনাইল আইন বদলের বিষয়টিতে তাঁর কিছু করার নেই। কোর্ট এর পর কেন্দ্রকে নোটিস পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। |
|
|
|
|
|