|
|
|
|
চান দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা |
হারিয়ে যাওয়া মেয়েদের
নিয়ে উদ্বিগ্ন মনমোহন জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি |
|
|
রাজধানীর ধর্ষণ কাণ্ডকে কেন্দ্র করে গোটা দেশ উত্তাল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সাম্প্রতিকতম রিপোর্টও স্বীকার করছে, এ দেশে প্রতি দুই থেকে তিন সেকেন্ডে এক জন নারীর বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এবং গবেষকরা বলছেন, বছরে প্রায় কুড়ি লক্ষ ভারতীয় মহিলা স্রেফ হারিয়ে যাচ্ছেন!
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ১৯৯০ সালে প্রথম এই হারিয়ে যাওয়া নারীদের কথা বলেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, গত কয়েক বছরে ভারত এবং চিন থেকে দশ কোটি নারী হারিয়ে গিয়েছেন। অমর্ত্য সেনের গবেষণার ভিত্তিতে অর্থনীতিবিদ সিয়ান অ্যান্ডারসন এবং দেবরাজ রায় ভারতের হারিয়ে যাওয়া মেয়েদের উপর একটি বিশেষ গবেষণাপত্র ২০১২ সালের মার্চ মাসে নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে পেশ করেন। সেখানেই বলা হয়, বছরে কুড়ি লক্ষ মহিলা ভারত থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছেন।
২০১১ সালে ভারতের সর্বশেষতম জনগণনার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, শিশুকন্যার জন্মের হার শিশুপুত্রের তুলনায় ক্রমশ কমছে। ২০১১ সালে প্রতি এক হাজার শিশুপুত্রের অনুপাতে ৯১৪ জন শিশুকন্যা জন্মগ্রহণ করেছে। শিশুপুত্র ও শিশুকন্যার এই অনুপাতটি স্বাধীনতার পর থেকে এখনও পর্যন্ত সবথেকে খারাপ অনুপাত। ২০০১ সালে এই অনুপাত ছিল হাজারে ৯২৭ জন। আদর্শ পরিস্থিতিতে শিশুপুত্র ও শিশুকন্যার অনুপাত হওয়া উচিত ১০২০ : ১০০০। কেন? কারণ সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ছেলেদের জন্মের সময় মৃত্যুহার বেশি হয়। ছয় বছর বয়সের পর পুত্র ও কন্যার অনুপাতের পার্থক্য কমে আসে। |
নারী নিরুদ্দেশ |
গর্ভপাতে মৃত্যু |
১২ |
প্রসবকালে মৃত্যু |
২৫ |
বয়স্থা হয়ে নিখোঁজ |
১৮ |
বয়স্কা হয়ে নিখোঁজ |
৪৫ |
* শতাংশে |
|
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এখন দেশের মেয়েদের সমস্যা এবং তার সমাধানে অগ্রাধিকারের উপর জোর দিচ্ছেন। এক দিকে যেমন তিনি এই সমস্যার শিকড় খোঁজার চেষ্টা করছেন। অন্য দিকে অমর্ত্য সেন এবং আরও কিছু বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি একটি ভবিষ্যত পরিকল্পনা তৈরি করতে আগ্রহী। কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী কৃষ্ণা তিরথ-কে যোজনা কমিশন, শিক্ষা দফতরের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এ ব্যাপারে একটি রিপোর্ট তৈরি করতে বলেছেন। অন্যান্য দেশের প্রেক্ষিতে ভারতের অবস্থা এবং ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নারী ও পুরুষের অনুপাত, সবই সেই রিপোর্টের বিচার্য বিষয়। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্র বলছে, মনমোহন শীঘ্রই কিছু অর্থনীতিবিদ, জনসংখ্যাবিদ, সমাজতাত্ত্বিকদের নিয়ে বৈঠকও ডাকতে চলেছেন। হারিয়ে যাওয়া মেয়েদের বিপুল পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে আগামী দিনে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ করার বিষয়ে কৃষ্ণা তিরথকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
অ্যান্ডারসন ও দেবরাজ রায়ের পেশ করা গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, জন্মানোর পর ও শিশু অবস্থায় হারানোর চেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েরা অনেক বেশি মাত্রায় হারিয়ে যাচ্ছে। নিখোঁজদের মধ্যে ৪৫ শতাংশই প্রপ্তবয়স্ক। আরও জানা গিয়েছে, পঞ্জাবে কিন্তু হারিয়ে যাওয়া মেয়েদের মধ্যে ৬০ শতাংশ মারা পড়ে জন্মের সময়। ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ পরীক্ষা ওই রাজ্যেই সবথেকে বেশি হয়।
১৫ বছরের কমবয়সী মেয়েদের হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা সবচেয়ে বেশি (১৫%) ঘটে হরিয়ানা ও রাজস্থানে। যে রাজ্যে সব থেকে কম (১০%) মেয়েদের হারিয়ে যাওয়ার কথা জানা যায়, সেগুলি হল কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অপরাধ পরিসংখ্যান দফতর থেকে জানা যাচ্ছে, ২০১১ সালে মেয়েদের বিরুদ্ধে অপরাধ নথিভুক্ত হয়েছিল ২ লক্ষ ২৮ হাজার ৬৫০টি। যা তার আগের বছরের চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি।
এবং ২০০৭ সালের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি।
প্রতি বছর যেখানে জনসংখ্যা ১ থেকে ২ শতাংশ হারে বাড়ছে, তখন মহিলাদের উপর অপরাধ বৃদ্ধির হার যথেষ্ট উদ্বেগের বলেই মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি চান, ওই সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্য মহিলাদের উপর অপরাধ এবং তাদের সমস্যাগুলির শিকড় খুঁজে বার করার মতো গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হোক। যাতে ওই ধরনের সমস্যাগুলির একটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধান বার করা সম্ভব হয়। |
|
|
|
|
|