অভিযোগ প্রতারণার
পরোয়ানার পরোয়া না-করে তিন মূর্তি বহাল মহাকরণেই
দু’জন কাজ করেন মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে। এক জন অর্থ দফতরে। সহকর্মীদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পুলিশ তিন জনের বিরুদ্ধেই চার্জশিট দেয় গত অগস্টে। তার ভিত্তিতে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ কাউকে গ্রেফতার না-করায় ডিসেম্বরে ফের একই নির্দেশ দেয় আদালত। তার পরেও এক মাস কেটে গিয়েছে। অভিযুক্তেরা বহাল তবিয়তে কাজ করে চলেছেন। কিন্তু পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করেনি।
অভিযুক্তদের মধ্যে এক জন তৃণমূলের কর্মী সংগঠন ইউনাইটেড স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের নেতা সঞ্জীব পাল। অন্য দু’জন অমিতাভ মাইতি ও অরুণ পাল অফিসার-পদে উন্নীত হওয়ায় এখন আর সরাসরি তৃণমূলের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন। সঞ্জীববাবু মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের আপার ডিভিশন ক্লার্কের পদে রয়েছেন। অমিতাভবাবু একই অফিসে আছেন রেজিস্ট্রার-পদে। অন্য জন অরুণ পাল অর্থ দফতরের উপসচিব। ওই তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রায় ১০ বছরে আগে তাঁরা ‘তৃণমূল এমপ্লয়িজ ফেডারেশন ওয়েলফেয়ার কো-অপারেটিভ ফান্ড’ নামে একটি সংস্থা গড়ে সহকর্মীদের কাছ থেকে টাকা তুলেছিলেন। আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, ৪০ মাসের মধ্যে দ্বিগুণ টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
আরতি সাহা নামে মহাকরণের তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের এক কর্মীর অভিযোগের ভিত্তিতে ওই তিন জনের বিরুদ্ধে হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগ ছিল, মাসিক কিস্তিতে প্রায় ৫৬ হাজার টাকা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও তিনি কোনও টাকা ফেরত পাননি। ক্যানসারে আক্রান্ত আরতিদেবী গত বছর মারা গিয়েছেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই অগস্টে কলকাতার পঞ্চম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ওই তিন জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করে সংশ্লিষ্ট থানা। তাতে অভিযুক্তদের ‘পলাতক’ বলে দেখানো হয়।
চার্জশিট পেয়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। তা সত্ত্বেও পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার না-করায় গত ৪ ডিসেম্বর আদালত ফের ওই নির্দেশ দিয়ে জানায়, অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে ১৫ মে-র মধ্যে কোর্টে হাজির করাতে হবে। প্রশ্ন উঠেছে, কিন্তু আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও কেন তাঁদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না, কেনই বা চার্জশিটে তাঁদের ‘পলাতক’ দেখাল পুলিশ? হেয়ার স্ট্রিট থানা থেকে সদুত্তর মিলছে না। তারা বলছে, লালবাজারের অপরাধ দমন শাখা বিষয়টি দেখছে। ওই শাখার ডিসি পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “জেনে বলতে হবে।” এক পুলিশকর্তার কথায়, “চার্জশিট মানেই গ্রেফতার বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু আদালত পরোয়ানা জারি করলে পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে বাধ্য।”
সঞ্জীববাবুরা অবশ্য তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা কোনও অভিযোগই মানতে রাজি নন। অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা সঞ্জীব পাল বুধবার পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, “ঘটনাটি বাম আমলের। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে এই মামলা সাজানো হয়েছে। আমি যত দূর জানি, অভিযোগকারিণী আমাদের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলেও নিয়েছিলেন।” কিন্তু আদালত তাঁদের গ্রেফতার করার জন্য ডিসেম্বরে ফের নির্দেশ দিয়েছে। কী বলেন তাঁরা? সঞ্জীববাবুর জবাব, “আমরা আদালতের কোনও কাগজ পাইনি।” আর এক অভিযুক্ত অরুণ পাল বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পুরোপুরি অসত্য। সেই কারণেই তো আমরা প্রতিদিন মহাকরণে এসে কাজ করছি।”
মহাকরণের খবর, সরকার পরিবর্তনের পরে অভিযুক্ত তিন জন রীতিমতো ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছেন। মুখ্যমন্ত্রী-পদে শপথ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে-দিন প্রথম মহাকরণে পা রাখেন, সে-দিন তাঁকে বিভিন্ন দফতর ঘুরিয়ে দেখাতে ব্যস্ত কর্মীদের মধ্যে অভিযুক্তেরাও ছিলেন। অভিযোগ, সরকারের বিভিন্ন গ্রেডের কর্মীদের বদলির ব্যাপারেও মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন অভিযুক্তদের এক জন। এই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অসুবিধা আছে বলে মনে করছে প্রশাসনের একাংশ।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.