চূড়ান্ত বিচারে যা-ই হোক, বুধবার রাতটা মা সাগরিকা ভট্টাচার্যের কাছেই থাকার সুযোগ পেল দুই শিশু অভিজ্ঞান ও ঐশ্বর্যা। এবং সেটা আদালতের নির্দেশেই। শিশু দু’টি কার কাছে থাকবে, আজ, বৃহস্পতিবার সেই বিষয়ে রায় দেবে কলকাতা হাইকোর্ট।
বুধবার ফয়সালা না-হলেও মা যে শিশুর আদশর্র্ আশ্রয়, এ দিন এই মামলার শুনানির সময় সেই ব্যাপারে একমত হন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত, আবেদনকারিণী সাগরিকাদেবীর আইনজীবী সমরাদিত্য পাল এবং রাজ্যের জিপি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের মতে, মা ছাড়া অন্য কেউই শিশুর যথাযথ যত্ন নিতে পারেন না।
মা-বাবা ঠিক ভাবে সন্তানের যত্ন নিতে পারছেন না, এই অভিযোগে নরওয়ে সরকার দু’টি শিশুকে তাদের কাকা অরুণাভাস ভট্টাচার্যের কাছে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। দুই সন্তানকে কাছে পেতে চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন সাগরিকাদেবী। অরুণাভাসবাবুর আইনজীবী সপ্তাংশু বসু মঙ্গলবার বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তকে জানান, পুলিশ শিশু দু’টিকে তাদের কাকার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছে। সেই সময় পুলিশের সঙ্গে ছিলেন সাগরিকাদেবী এবং তাঁর বাবা মনোতোষ চক্রবর্তী। মঙ্গলবার শিশু দু’টি তাদের মা সাগরিকাদেবীর দমদমের বাড়িতে ছিল। কাকার কাছ থেকে নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে বিচারপতি মঙ্গলবার বিকেলেই পুলিশকে নির্দেশ দেন, অভিজ্ঞান ও ঐশ্বর্যাকে অবিলম্বে তাদের কাকা অরুণাভাসবাবুর হেফাজতে পৌঁছে দিতে হবে এবং এই নির্দেশ যে পালিত হয়েছে, সেটা বুধবার সকালে জানাতে হবে আদালতে। অরুণাভাসবাবুর বাড়ি কুলটিতে। দমদম থেকে অভিজ্ঞান-ঐশ্বর্যাকে কুলটির বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বুধবার ফের তাদের আদালতে হাজির না-করে পুলিশ এ দিন সকালে দু’টি শিশুকে সরাসরি হাইকোর্টে আনে।
তারা কার হেফাজতে থাকবে, কার্যত জন্মের পর থেকেই শিশু দু’টি সেই টানাপোড়েনের শিকার। এ দিনও আদালতে মায়ের সঙ্গে অসহায়ের মতো বসে ছিল ছয় এবং চার বছরের ভাই আর বোন। বিচারকক্ষে রুদ্ধদ্বার শুনানির ব্যবস্থা হয়। সাগরিকাদেবীর আইনজীবী সমরাদিত্যবাবুর বক্তব্য ছিল, ওই দু’টি শিশু এবং তাদের মা এখন ভারতে। তাই ভারতের আইনেই তাঁদের আবেদনের বিচার হবে। তিনি বলেন, অন্য কোনও দেশে শিশুদের লালনপালনের জন্য দক্ষ বিকল্প থাকতে পারে। কিন্তু এ দেশে এত ছোট শিশুর জন্য কোনও আশ্রয়ই মায়ের থেকে ভাল হতে পারে না। মধ্যাহ্নবিরতিতে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত নিজের চেম্বারে সাগরিকাদেবী ও অরুণাভাসবাবুর সঙ্গে কথা বলেন। পরে ফের আদালতের কাজ শুরু হলে বিচারপতি জানিয়ে দেন, এ দিনের মতো এই মামলার শুনানি শেষ। ওই দু’টি শিশু কার হেফাজতে থাকবে, বৃহস্পতিবার সেই বিষয়ে রায় দেওয়া হবে। |