বাঁ হাতের অদৃশ্য তর্জনী উড়ন্ত বলকে বলছে ‘থেমে থাক’
বাঁ হাতের তর্জনীর অর্ধেক চলে গিয়েছিল বছর দুই আগে। কিন্তু বল গলেনি।
আজ, মঙ্গলবার যখন সর্বভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবলে রাজ্যের সম্মান রক্ষার লড়াইয়ে নামছে বর্ধমান, গোলপোস্টের জাল আড়াল করে দাঁড়িয়ে সেই প্রহরী চিরদীপ চট্টোপাধ্যায়।
ক্যানসার জয় করে মাঠে ফেরা যুবরাজ সিংহকে নিয়ে এখনও দুনিয়া জুড়ে হইচই চলছে। অক্ষমতাকে মাঠের বাইরে উড়িয়ে দিয়ে তিনি এখন সাধারণ ক্রিকেটারের ঊর্ধ্বে উঠে যাওয়া এক ‘নায়ক’। চিরদীপের সামনে মারণ রোগের চ্যালেঞ্জ ছিল না। কিন্তু পায়ের খেলা ফুটবলে হাতের ভেল্কি দেখান এক মাত্র যিনি, সেই গোলকিপারের আঙুল যাওয়া কি কম?
চন্দননগরের ছেলে ২০০২ সালে নিজের শহরেই মেয়র একাদশের কোচিং ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিতে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখান থেকে যান টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমিতে। ২০০৮-০৯ মোহনবাগানের সিনিয়র টিমে সই করেও টিকতে পারেননি। পরে এরিয়ান্স ও জর্জ টেলিগ্রাফের হয়ে বারপোস্টের নীচে দাঁড়ান। বল ভালই গড়াচ্ছিল। আচমকা ২০১০ সালের গ্রীষ্মে সেই পথ দুর্ঘটনা সব ওলোট-পালট করে দেয়।

চিরদীপ চট্টোপাধ্যায়।—নিজস্ব চিত্র।
চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, চিরদীপ আর ফুটবলই খেলতে পারবেন না। গোলকিপার হিসেবে তো নয়ই। অন্য পোজিশনে খেলতেও পরামর্শ দেন কেউ-কেউ। কিন্তু চিরদীপ টলেননি। নিজের ক্ষমতায় আস্থাও হারাননি। বরং হাতের ক্ষত শুকোনো মাত্র মাঠে ফেরেন। প্রথম-প্রথম খুবই সমস্যা হত। চিরদীপের কথায়, “বল গ্রিপ করতে ঝামেলায় পড়তাম। অনবরত প্র্যাকটিস করে সে সমস্যা কাটিয়ে ফেলেছি। তবে চেষ্টা করি ওই আঙুলটা বাঁচিয়ে খেলতে। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, সব সময়ে হাতে গ্লাভস পরি।”
সেই গ্লাভস যে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় তথা রাজ্যের মর্যাদা সযত্নে আগলে রেখেছে, তার হাতে-গরম প্রমাণ মিলে গেল সোমবার বর্ধমানের মোহনবাগান মাঠেই। অমৃতসরের ছেলেদের পা থেকে বেরিয়ে আসা একের পর এক বিষাক্ত ছোবল বাঁচিয়ে কার্যত চিরদীপই ম্যাচের সেরা। কোথা থেকে পেলেন এমন মনের জোর?
এই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে খেলা স্নাতক স্তরের ছাত্রটি জানান, তাঁদের পরিবারের এমনিতেই ফুটবলের পরম্পরা আছে। জেঠু শম্ভু চট্টোপাধ্যায় ছিলেন রেলের ফুটবল কোচ। ভাইপোকে মাঠে নামাতে তাঁর উৎসাহই ছিল সবচেয়ে ষেশি। সমান সহযোগিতা করেন মা অঞ্জলিও। চিরদীপ বলেন, “মা বলেছিলেন, ‘তুই পারবি। নিশ্চই পারবি।’ সে কথা মনে রাখি আর নিজেকে মোটিভেট করি আমায় খেলতেই হবে।”
আপাতত চিরদীপের স্বপ্ন ভারতের হয়ে খেলা। তাঁর জীবনের আইডল যদি স্পেনের গোলরক্ষক ইকের ক্যাসিয়াস হন, দেশে তাঁর ধ্রুবতারা বর্ধমান লোকো কলোনি থেকে উঠে আসা সন্দীপ নন্দী (আপাতত চার্চিলে)। মোহনবাগান মাঠের কাছে দাঁড়িয়ে চিরদীপ বলে যান, “স্যার আশুতোষ কাপ জেতা ছাড়া এখন আর কিচ্ছু ভাবতে পারছি না।”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.