নিজস্ব সংবাদদাতা • আরামবাগ ও ঘাটাল |
দলছুট দাঁতাল পিষে মারল এক বৃদ্ধাকে।
সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে আরামবাগের ডহরকুণ্ডতে। সে সময়ে বাড়ির সামনে বসে রোদ পোয়াচ্ছিলেন পূর্ণবালা পাত্র (৭২) নামে ওই বৃদ্ধা। এলাকার মানুষের তাড়া খেয়ে পালানোর সময়ে হাতিটি পূর্ণবালাদেবীকে সামনে পেয়ে শুঁড়ে তুলে আছড়ে মারে। পরে পায়ে পিষে দেয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান ওই বৃদ্ধা। পরে খানাকুলের মহিষগোটে একটি ঢাল পেরোনোর সময় উল্টো দিক থেকে আসা পঞ্চানন ভৌমিক নামে বছর সত্তরের এক বৃদ্ধকেও জখম করে হাতিটি। গুরুতর আহত ওই বৃদ্ধাকে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল ৭টা নাগাদ আরামবাগের গৌরহাটি, ডিহিবাগনান গ্রামে ঢুকে পড়ে দলছুট হাতিটি। সব্জি খেত তছনছ করে। স্থানীয় মানুষ ঢিল ছুড়ে তাকে আরও খেপিয়ে দেয়। দিকবিদিক শূন্য হয়ে দাঁতালটি গৌরহাটি গ্রামেই ঢুকে যায়। খুঁটিতে বাঁধা গরুগুলি হাতিকে দেখে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। হাতির তাড়া খেয়ে পুকুরে নেমে সাঁতরে প্রাণ বাঁচান ফটিক দলুই নামে এক প্রৌঢ। সবিতা দাস নামে এক বৃদ্ধাও কোনও রকমে রেহাই পান। |
গৌরহাটি বোসপাড়ায় তত ক্ষণে একটি সমাধি উপড়েছে হাতি। কাছেই বেহালা বাজারে ঢুকে হাতিটি গৌরহাটি রামকৃষ্ণ মিশন-সংলগ্ন রাস্তায় কয়েকটি মাটির বাড়িতে শুঁড় দিয়ে আঘাত করতে থাকে। সওয়া ৮টা নাগাদ ডহরকুণ্ড গ্রামে ঢুকে পড়ে হাতিটি। গ্রামবাসীরা তাড়া করে দক্ষিণের মাঠে তাড়ানোর চেষ্টা করলে সে আরও বিগড়ে যায়। পাল্টা ধাওয়া করে মানুষের জমায়েতের দিকে। তারপরেই ডহরকুণ্ড গ্রামের ওই বৃদ্ধাকে আছড়ে ফেলে খুন করে সে।
সকাল ৯টা নাগাদ হাতিটি বেড়াবেড়ি মহিষগোট হয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর ও হুগলির সীমান্ত এলাকাবর্তী শ্রীমন্তপুরে আসে। শুকিয়ে আসা দ্বারকেশ্বর নদ পার হয়ে ঢুকে পড়ে পশ্চিম মেদিনীপুরে।
হাতিটি খানাকুলে ঢোকার পর তত ক্ষণে হাজির হন বন দফতরের কর্মীরা। পুলিশও আসে পরে। বন দফতরের (আরামবাগ) বিট অফিসার রবীন্দ্রনাথ মুর্মু বলেন, “দলছুট হাতিটি ঘাটালের চন্দ্রকোণা, রসকুণ্ডু হয়ে গড়বেতা জঙ্গলে পৌঁছেছে। বন দফতরের (আরামবাগ) রেঞ্জ অফিসার দিব্যেন্দু রাউত বলেন, “বাঁকুড়া বা পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গল থেকেই অপ্রাপ্তবয়স্ক দাঁতালটি দলছুট হয়েছে বলে ধারণা। সম্ভবত সারারাত ধরে হেঁটে সে আরামবাগে পৌঁছেছে। ফসল নষ্ট এবং প্রাণহানির বিষয়গুলি নিয়ে ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে তদন্ত শুরু হয়েছে।”
মেদিনীপুর বন দফতর জানায়, মনশুকা, কামারডাঙ্গা, খাসবার, ইরপালা, চন্দ্রকোণা, শ্রীনগর, প্রসাদপুর হয়ে হাতিটি আধঘাটা জঙ্গলে ঢোকে। সেখানে বন দফতরের লোকজন পটকা ফাটাতে শুরু করেন। ঘুরে গিয়ে হাতি জনতার দিকে তেড়ে আসে। ঘাটালের বিট অফিসার নয়ন দত্ত বাঁ পা দাত দিয়ে চিরে দেয় হাতিটি। আছড়ে ফেলে। আহত অবস্থায় তাঁকে চন্দ্রকোণা গ্রামীন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খড়্গপুরের ডি এফ ও অঞ্জন গুহ বলেন, “৭-৮টি গ্রামে ফসলের ক্ষতি হয়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।” |