এত দিন তাদের বিচরণ ছিল রানওয়ের পূর্ব প্রান্তে। মানুষজন বিশেষ পছন্দ নয়, তাই ঘাস-জঙ্গলের অন্তরালেই তাদের ঠিকানা। গত শনিবার সেই ধারণাকেই ভুল প্রমাণ করে কলকাতা বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল-লাগোয়া ঘরে ঢুকে বসল একটি শেয়াল।
বিমানসংস্থার এক কর্তার মন্তব্য, “এ ভাবে চললে, অদূর ভবিষ্যতে যাত্রীদের সঙ্গে টার্মিনালের ভিতরেও ঘুরতে দেখা যেতে পারে শেয়ালকে। যাত্রীরাও অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। বিমান ছাড়ার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার সময়ে কিছুক্ষণ শেয়ালের সঙ্গে সময়ও কাটাতে পারবেন।”
ঠিক কী হয়েছিল সে দিন?
সকাল সাড়ে ন’টা। অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের যে দিকে বিমান দাঁড়ায়, সেই ‘অ্যাপ্রন’ এলাকায় যাত্রীদের মালপত্র বিমানে তোলার আয়োজনে ব্যস্ত ছিলেন এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মীরা। টার্মিনালের গায়েই ‘ব্যাগেজ আইডেন্টিফিকেশন’ নামে একটি জায়গায় রাখা হয় যাত্রীদের মালপত্র। প্রশস্ত জায়গাটির দু’দিক জাল দিয়ে ঘেরা। মাঝখান দিয়ে মালপত্র টেনে নিয়ে যায় ট্রেকারগুলি। কর্মীরা ট্রেকারে মালপত্র তুলছিলেন।
সেই সময়েই শেয়ালটি ছুটে ঢুকে আসে ওই প্রশস্ত জায়গায়। তা দেখে কর্মীরা ঘাবড়ে যান। ছোটাছুটি শুরু হয়ে যায়। শেয়ালটিও ভয়ে এ দিক-সে দিক ছুটতে শুরু করে। কয়েক জন কর্মী শেয়ালটিকে লক্ষ করে ইটের টুকরো ছুড়তে শুরু করেন। তাতে আরও ভয় পেয়ে মালপত্রের আড়ালে লুকোনোর চেষ্টা করে শেয়ালটি। ওখানেই নিরাপত্তাকর্মীদের জন্য একটি ছোট ঘর রয়েছে। ওই সময়ে ঘরটি খালি ছিল। ছুটে তাতে ঢুকে যায় শেয়াল। এক কর্মী বাইরে থেকে ঘরটি বন্ধ করে দেন। পরে দুপুর আড়াইটে নাগাদ বন দফতরের লোকজন এসে শেয়ালটিকে নিয়ে যান।
আগে চিরকালই বিমানবন্দরের রানওয়ে ও তৎসংলগ্ন এলাকায় শেয়াল দেখা গিয়েছে। বিমান নিয়ে নামা-ওঠার সময়ে প্রধানত চালকদেরই নজরে এসেছে। ঘাস-জঙ্গল ছেড়ে শেয়াল ছিটকে রানওয়ের উপরে চলে এসে আবার ফিরে গিয়েছে পূর্ব দিকের ঘাস-জঙ্গলেই। শেয়াল ধরার জন্য যে ১০টি খাঁচা রাখা হয়েছে, তা-ও মূলত রানওয়ের পূর্ব প্রান্তের পাঁচিল-লাগোয়া রাস্তায়। প্রধান রানওয়ে থেকে টার্মিনাল ভবনের দূরত্ব প্রায় ৭০০ মিটার। এই এলাকায় সব সময়ে জিপ, যাত্রী-বাস, ট্রেকার এবং বিমান চলাচল করে। বিমানবন্দর ও সংস্থার কর্মীরা যাতায়াত করেন এই এলাকায়। এ রকম বিস্তীর্ণ জনবহুল এলাকা টপকে কী করে টার্মিনালে চলে এল শেয়াল? বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মা এ দিন বলেন, “পূর্ব প্রান্তের ঘাস-জঙ্গল আমরা পরিষ্কার করছি। সে কারণে পালিয়ে আসতে পারে শেয়াল।” বন দফতরের কনজার্ভেটর (ওয়াইল্ড লাইফ) শুভময় চন্দ্রের বক্তব্য, “পরিষ্কার করে কারণ বলা সম্ভব নয়। তবে বিমানবন্দরে কুকুরের সংখ্যা বেড়েছে। তাদের তাড়া খেয়ে চলে আসতে পারে। খাবারের গন্ধেও আসতে পারে।” প্রত্যক্ষদর্শী এক কর্মীর কথায়, “ছোটবেলায় শেয়ালের ডাক শুনেছি। জীবনে প্রথম এত কাছ থেকে দেখলাম। ইয়া মোটা ল্যাজ! ভয় পেয়ে ওই ঘরে না ঢুকে শেয়ালটা উল্টো দিকে ছুটে যাত্রীদের লাউঞ্জেও ঢুকে যেতে পারত! তা হলে কী হত ভাবতে পারছেন?”
|