|
|
|
|
শুনানি গোপনে, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তদন্ত |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
গোটা দেশের নজর এখন যে মামলার দিকে, তার শুনানি হবে গোপনে। মামলার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ব্যক্তিরা ছাড়া আর কেউই হাজির থাকতে পারবেন না এজলাসে। সাংবাদিকরাও নন। দিল্লিতে ২৩ বছরের তরুণীকে গণধর্ষণ ও খুনের মামলায় আজ এই নির্দেশ দিয়েছেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নম্রিতা অগ্রবাল। সে রাতে পুলিশ ঘটনার এলাকা নিয়ে তর্কাতর্কিতে সময় নষ্ট করেছিল বলে নিহত তরুণীর বন্ধু যে অভিযোগ তুলেছেন, তা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কারণ এ নিয়ে চাপানউতোর বাড়লে অস্বস্তি বাড়বে কেন্দ্রেরই। দিল্লি পুলিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকেরই অধীনে।
গণধর্ষণ মামলায় আজকের শুনানির প্রথম পর্বে প্রচুর হট্টগোল হয়। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে এ দিন সকালেই তিহাড় থেকে আনা হয়েছিল প্রাপ্তবয়স্ক পাঁচ অভিযুক্তকে। কিন্তু তার অনেক আগেই এজলাস কার্যত লোকারণ্য। বসার জায়গা মাত্র ৩০ জনের। সেখানেই গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে দেড়শোরও বেশি মানুষ। দেশি-বিদেশি সাংবাদিকরা তো বটেই, হাজির ছিলেন প্রচুর শামলাধারী ও কৌতূহলী মানুষ। তর্কবিতর্ক বাড়তে বাড়তে ঘর জুড়ে রীতিমতো হট্টগোল। ভিড়ে শুনানি ব্যাহত হচ্ছে দেখে মামলার সঙ্গে যুক্তদের বাদ দিয়ে বাকিদের বেরিয়ে যেতে বারবার অনুরোধ করা হয়। এমন সিদ্ধান্তও হয় যে, এই অবস্থায় অভিযুক্তদের এজলাসে হাজিরই করা হবে না। শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট গোপান শুনানির নির্দেশ জারি করেন। এজলাস ফাঁকা হলে আনা হয় অভিযুক্তদের।
বিচারক অগ্রবাল জানিছেন, এ দিন শুধু নয়, মামলার ভবিষ্যৎ শুনানি হবে গোপনেই। প্রবেশ নিষেধ সংবাদমাধ্যমেরও। আদালত সূত্রে খবর, অভিযুক্তদের এ দিন চার্জশিটের কপি দেওয়া হয়েছে। |
|
আদালতের সামনে পাহারা। —নিজস্ব চিত্র |
তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ ছাড়াও অপহরণ, ডাকাতি এবং ষড়যন্ত্রের চার্জ তৈরি হয়েছে। পুলিশ জানায়, অপরাধ প্রমাণ করার জন্য উপযুক্ত
ফরেন্সিক প্রমাণও রয়েছে তাদের হাতে।
শুনানি চলাকালীন মোহনলাল শর্মা নামে এক আইনজীবী অভিযুক্তদের পক্ষে দাঁড়াতে চাইলে এজলাসেই বাগ্বিতণ্ডা বেধে যায়। গণধর্ষণ-কাণ্ডে অভিযুক্তদের হয়ে কেউ মামলা লড়বেন না, এমনই ঘোষণা করে রেখেছে বেশ কিছু বার অ্যাসোসিয়েশন। ফলে অনেক আইনজীবীই মোহনলালের বিরোধিতা করেন। মোহনলালের দাবি, অভিযুক্তরা বিএমডব্লু চড়া বড়লোক হলে অনেক তাবড় আইনজীবীই তাদের পাশে দাঁড়াতেন। কিন্তু অভিযুক্তদের বাড়ির লোক তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁদের দিল্লিতে এসে থাকারও ক্ষমতা নেই। এ নিয়ে জট কাটেনি। অভিযুক্তদের আইনজীবী নির্ধারিত হওয়ার পরই মামলাটিকে ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে পাঠানো যাবে। পরের শুনানি হবে ১০ জানুয়ারি।
ষষ্ঠ অভিযুক্তকে আজ হাজির করা হয়েছিল জুভেনাইল বোর্ডে। সে নাবালক কি না, তা জানার জন্য তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক এ দিন যে প্রমাণ পেশ করেছেন, বোর্ড তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। আরও কিছু প্রমাণপত্র নিয়ে ১৫ জানুয়ারি তাঁকে ফের বোর্ডের কাছে হাজির হতে বলা হয়। ষষ্ঠ অভিযুক্তকেও সে দিন বোর্ডে হাজির করা হবে।
শাস্তির হাত থেকে বাঁচতে গত কালই রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন জানিয়েছিল দুই অভিযুক্ত, পবন গুপ্ত ও বিনয় শর্মা। আজ ওই তরুণীর পরিবার সেই আবেদনের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বাকিদের মতো তাঁদেরও বক্তব্য, মৃত্যুদণ্ডের হাত
থেকে রেহাই পেতেই এই আবেদন জানিয়েছে অপরাধীরা।
দেশ জুড়ে তীব্র বিক্ষোভ প্রতিবাদের ঝড় কিছুটা ঠান্ডা হওয়ার পরে কেন্দ্র এখন এই মামলা ও তদন্তের ব্যাপারে সতর্ক ভাবে এগোতে চাইছে। ঘটনার রাতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ তুলেছেন তরুণীর বন্ধু। পুলিশি গাফিলতির এই অভিযোগ নিয়ে চাপানউতোরের পথ বন্ধ করতেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আজ এ ব্যাপারে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
তরুণীর বন্ধু গত সপ্তাহে এক টিভি সাক্ষাৎকারে অভিযোগ তুলেছেন, ধর্ষণকারীরা বাস থেকে তাঁদের দু’জনকে রাস্তায় ফেলে দেওয়ার প্রায় আধ ঘণ্টা থেকে ৪৫ মিনিট পরে পুলিশের দু’টি জিপ আসে। তার পরেও কোন থানা এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে, তা নিয়ে তর্ক করে বহু সময় নষ্ট করে তারা।
অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে দিল্লি পুলিশের মুখপাত্র রাজন ভগত জানান, ফোনে খবর জানার পাঁচ মিনিট পরেই পুলিশ ভ্যান পৌঁছে গিয়েছিল। তার আগেই অবশ্য একটি জিপ নিজে থেকে সেখানে হাজির হয়। কন্ট্রোল রুম থেকে বার্তা পাওয়া জিপটি তিন মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থল থেকে নির্যাতিতা ও তাঁর বন্ধুকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হয়। জিপটি সফদরজঙ্গ হাসপাতালে পৌঁছোয় মিনিট ২৫ পরে। প্রত্যেকটি জিপেই জিপিএস ব্যবস্থা লাগানো রয়েছে বলে তাদের গতিবিধিও রেকর্ড করা রয়েছে। |
|
|
|
|
|