নিঃশব্দ ঘাতক
সচেতনতার অভাবে বাড়ছে জটিলতা, মৃত্যুর আশঙ্কাও
ফিসে কাজ করতে করতেই আচমকা শরীরে একটা অস্বস্তি শুরু হয়েছিল সুমনা সেনের। তলপেটে ব্যথা, সঙ্গে সামান্য বমি-ভাব। তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন তিনি। রাতে সামান্য কিছু খাবার আর ব্যথা কমানোর ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়েন। মাঝরাত থেকে ব্যথা বাড়তে থাকে। কোনওমতে রাতটা কাটিয়ে সকালে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় সুমনাকে। পরীক্ষানিরীক্ষার পরে জানা যায়, সমস্যাটা এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির। তার জেরেই ফ্যালোপিয়ান টিউব ফেটে গিয়েছে। বেলা বাড়ার আগেই মৃত্যু হয় বছর পঁয়ত্রিশের সুমনার।
অথচ সুমনা জানতেনই না তিনি অন্তঃসত্ত্বা। কারণ, তাঁর ঋতুচক্রে উল্লেখযোগ্য কোনও পরিবর্তন হয়নি। গর্ভধারণের অন্য কোনও লক্ষণও তিনি টের পাননি। চিকিৎসকেরা বলছেন, এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির মূল আতঙ্কের জায়গাও এটাই। আক্ষরিক অর্থেই এ হল নিঃশব্দ ঘাতক। সচেতনতা না বাড়লে অস্তিত্ব টের পেতে দেরি হয়ে যায়। আর দেরি মানেই শিয়রে শমন।
শহরে চিকিৎসার পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও স্রেফ সচেতনতার অভাবে বাড়ছে এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি থেকে চূড়ান্ত ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা। ঘটছে মৃত্যুও।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ডিম্বাণু ও শুক্রাণু নিষিক্ত হয় ফ্যালোপিয়ান টিউবে। সাধারণ ভাবে এর তিন-চার দিন পরে ভ্রূণটি প্রতিস্থাপিত হয় জরায়ুতে। কিন্তু টিউবের কোনও সমস্যা থাকলে ভ্রূণের গতি বাধা পায় এবং তা টিউবেই আটকে থাকে। একেই বলে এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ভ্রূণটি টিউবে না থেকে ডিম্বাশয়, জরায়ুমুখ এমনকী অন্ত্রেও আটকে থাকে।
কেন হয় এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি? স্ত্রী রোগ চিকিৎসক গৌতম খাস্তগীর জানান, এর একাধিক কারণ। অতীতের কোনও অস্ত্রোপচারের জেরে কিংবা বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে এমন ঘটে। আবার যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে যে সংক্রমণ ছড়ায়, সেটাও এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির উৎস হতে পারে। তিনি বলেন, “এ ছাড়াও ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপ্টিভ পিল খেলে জরায়ুর দেওয়াল ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের অনুপযুক্ত হয়ে যায়। ফ্যালোপিয়ান টিউবের নড়াচড়াও কমে যায়। তাই ওই ধরনের ওষুধের সঙ্গেও এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির একটা যোগ রয়েছে।”
প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে ওষুধ দিয়েই এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি নির্মূল করা সম্ভব। কিন্তু ফ্যালোপিয়ান টিউব ফেটে গেলে পরিস্থিতি সঙ্গীন হয়ে পড়ে। রক্তক্ষরণ হয়ে মৃত্যুর আশঙ্কাও থাকে। কেন টিউব ফেটে যায়? স্ত্রী রোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ভ্রূণের আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জরায়ুরও প্রসারণ ঘটে। ফ্যালোপিয়ান টিউব বা অন্য কোনও অঙ্গের ক্ষেত্রে এই প্রসারণটা সম্ভব হয় না। প্রসারিত হতে না পেরে তা ফেটে যেতে পারে। যদি না-ও ফাটে, রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে ভ্রূণের মৃত্যু ঘটে।’’
এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রে কখনও স্বাভাবিক ঋতুচক্র বন্ধ হয়, কখনও হয় না। আর সেই জন্যই বিভ্রান্তিটা বাড়ে। অভিনিবেশবাবু জানান, তাঁর কাছে পেটে ব্যথা নিয়ে ১৬ বছরের একটি মেয়ে এসেছিল। তার মাসিক ঋতুচক্র স্বাভাবিকই ছিল। সাধারণ ভাবে স্কুলপড়ুয়া, অবিবাহিতা মেয়ের ক্ষেত্রে এক্টোপিক প্রেগন্যান্সির কথা ভাবাই হয় না। কয়েকটি বিষয়ে সন্দেহ হওয়ায় তিনি রক্তের একটি পরীক্ষা (সেরাম বিটা এইচসিজি) করান। হয় সোনোগ্রাফিও। তাতেই ধরা পড়ে। তাঁর কথায়, “পেটে ব্যথা নিয়ে মেয়েটি যখন আসে, তখনই তার ভিতরে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে গিয়েছিল। তড়িঘড়ি ল্যাপারোস্কোপি করতে হয়। সামান্য দেরি হলেই মেয়েটিকে হয়তো আর বাঁচানো যেত না।”
অল্পবয়সী মেয়েদের মায়েদেরও এই কারণেই সতর্ক থাকতে বলছেন চিকিৎসকেরা। তল পেটে অসহ্য ব্যথা হলে ফেলে না রেখে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। ‘আমার মেয়ে কোনও যৌন সম্পর্কে জড়াতেই পারে না’-এমন বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে থেকে বিপদ না বাড়ানোই ভাল বলে তাঁদের অভিমত।
স্ত্রী রোগ চিকিৎসকদের সংগঠন বেঙ্গল গাইনোকোলজিস্ট অ্যান্ড অবস্টেট্রিক অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি কালীদাস বক্সি বলেন, “গর্ভধারণের ছয় থেকে আট সপ্তাহের মাথায় আলট্রা সোনোগ্রাফি করলে এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি হয়েছে কি না তা জানা যায়। আট সপ্তাহ পেরিয়ে গেলে ফ্যালোপিয়ান টিউব ফেটে যাওয়ার ভয় থাকে। তাই সময়মতো চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।”
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি ১০০ জন অন্তঃসত্ত্বা মহিলার মধ্যে তিন থেকে চার জনের এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি ধরা পড়ছে। যাঁদের এক বার এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি হয়, তাঁদের পরের বারও এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি হওয়ার আশঙ্কা চার থেকে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.