বহরমপুর থানার কনস্টেবল রানু খাতুনের তৎপরতায় ধরা পড়ল এক ছিনতাইকারী। রবিবার বিকেলে শহরের জনবহুল এলাকা হরিবাবুর ঢালুর কাছে নবদ্বীপের বাসিন্দা সঞ্জিত পালের কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে দুষ্কৃতীরা নগদ প্রায় ৫০ হাজার টাকা ছিনতাই করে পালানোর চেষ্টা করে। দুষ্কৃতীরা সংখ্যায় তিন জন ছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় দুষ্কৃতীদের এক জনকে ধরে ফেলেন বহরমপুর থানার ওই মহিলা কনস্টেবল। ধৃতের নাম হালিম শেখ। তার বাড়ি ভাগীরথীর পশ্চিমপাড়ের গোয়ালজান-নিয়াল্লিশপাড়ার বহড়া গ্রামে। ধৃতের কাছ থেকে একটি দেশি পিস্তল ও এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির বলেন, “বহরমপুর থানার ওই মহিলা কনস্টেবল উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে দুষ্কৃতীদের এক জনকে ধরেছেন, তা প্রশংসাযোগ্য। ধৃত ব্যক্তির কাছে গুলি ভরা পিস্তল ছিল। তা সত্ত্বেও ওই মহিলা কনস্টেবল তার কোনও পরোয়া করেননি।” তিনি বলেন, “ওই কাজের জন্য ওই কনস্টেবলকে বিশেষ ভাবে পুরস্কৃত করা হবে।” |
রানু খাতুন। —নিজস্ব চিত্র। |
নবদ্বীপ পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ২ নম্বর গৌরাঙ্গ কলোনির বাসিন্দা সঞ্জিত পাল বহরমপুরের খাগড়া এলাকার বিভিন্ন দোকান থেকে রূপোর কাঁচা মাল সংগ্রহ করেন এবং পরে গহনা বানিয়ে সরবরাহ করেন। ওই কাজের জন্য তাঁর বহরমপুর-নবদ্বীপ যাতায়াত রয়েছে। এদিনও নবদ্বীপ থেকে বহরমপুরের এসে বিভিন্ন দোকানে তৈরি গহনা সরবরাহ করার পরে বাস ধরার জন্য রিকশা করে বহরমপুর বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছিলেন। সেই সময়ে ব্যস্ততম ও জনবহুল রাস্তা খাগড়া হরিবাবুর ঢালুর কাছে তিন জন মোটরবাইক আরোহী রিকশার পথ আটকায়। সঞ্জিতবাবু বলেন, “দু’জন আরোহী মোটরবাইক থেকে নেমে আমার কপালে পিস্তল ধরে। এক জন আমার ব্যাগ কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। বাধা দেওয়ায় এক জন পিস্তলের পিছন দিক দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে। রক্তাক্ত অবস্থায় আমি রিকশার উপরে পড়ে যাই। তখন তারা ব্যাগ ছিনতাই করে পালায়।”
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানতে পেরেছে, দুষ্কৃতীদের হাতে পিস্তল দেখে প্রথমে কেউ ওই ব্যবসায়ীকে রক্ষা করতে এগিয়ে যায়নি। থানার ডিউটি শেষে ঘটনাস্থলের কাছেই বিবি সেন রোডের একটি দোকানে গিয়েছিলেন রানু খাতুন। তাঁর কথায়, “ভিড় ও চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে স্থানীয় এক জনকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারি একটি ছিনতাই হয়েছে। সেই সময়েই দেখি দুই দুষ্কৃতী রায় অ্যান্ড রায়ের গলি দিয়ে পালানোর চেষ্টা করছে। তাদের তাড়া করতে শুরু করি। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় এক জনকে ধরে ফেলি। অন্য জন পালিয়ে যায়।” তাঁর কথায়, “সেই সময়ে উত্তেজিত জনতা তাকে মারধরও শুরু করে। তখন নিজের পরিচয় দিই এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের দুষ্কৃতীকে মারধর করতে বারণ করি।”
ওই কনস্টেবলের ফোন পেয়ে বহরমপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তার আগে দুষ্কৃতীর কাছ থেকে উদ্ধার করা পিস্তলটিও বাজেয়াপ্ত করেন ওই কনস্টেবল। উত্তর ২৪ পরগণার ইছাপুরের বাসিন্দা রানু খাতুন ১৯৯৯ সালে পুলিশে যোগ দেন। ২০০৯ সাল থেকে বহরমপুর থানায় কনস্টেবল পদে রয়েছেন। তার আগে কান্দি থানায় ছিলেন তিনি। রানু বলেন, “চার বোনের মধ্যে আমি ছাড়াও দুই বোন পুলিশের কনস্টেবল পদে কর্মরত।” |