পরিত্যক্ত কুয়োয় পড়ে গিয়েছিল একটি বাচ্চা হাতি। তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে কার্যত হিমশিম খেল বন দফতর। রাতভর উদ্বেগে থাকলেন গ্রামের মানুষ। শেষমেশ কুয়োর একপাশের মাটি কেটে রবিবার সকালে তাকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর হাতিটি বন দফতরের এক অফিসারকে জখমও করে।
ঘটনাটি শালবনি থানার ভীমপুর অঞ্চলের মথুরাপুরের। রবিবার সকালে এলাকায় গিয়েছিলেন বন দফতরের আধিকারিক ও কর্মীরা। নেতৃত্বে ছিলেন মেদিনীপুর বিভাগের এডিএফও মধুসূদন মুখোপাধ্যায়, রূপনারায়ণ বিভাগের এডিএফও বিকাশরঞ্জন চক্রবর্তী। বিকাশবাবু বলেন, “যাতায়াতের পথে দলছুট হয়ে বাচ্চা হাতিটি পরিত্যক্ত কুয়োর মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। প্রথমে হাতিটিকে উদ্ধার করতে গিয়ে কিছু সমস্যা হয়। পরে কুয়োর একপাশের মাটি কেটে বাচ্চা হাতিটিকে উদ্ধার করা হয়েছে।” |
উদ্ধার হওয়ার পর হস্তিশাবকটি। |
বন দফতর জানিয়েছে, হাতির দলটি এখন লালগড় রেঞ্জ ও তার আশপাশে এলাকায় রয়েছে। তাদের হানায় এলাকার ৮-১০টি মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত বছরের অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় বাঁকুড়ার বাঁকাদহ থেকে হাতির একটি দল পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার উপরজবা-শ্যামনগর এলাকায় ঢুকে পড়ে। দলটিতে ১৩০টি থেকে ১৪০টি হাতি রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি বাচ্চা হাতি। এরপর দলটি পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় দাপিয়ে বেড়িয়েছে। এক সময় লালগড় রেঞ্জ হয়ে দলটি মেদিনীপুর সদর ব্লক এলাকায় ঢোকে। পরে সেখান থেকে আবার কাঁসাই নদী পেরিয়ে পৌঁছয় খড়্গপুর। পরবর্তী সময় নয়াগ্রামে। বন দফতর সূত্রে খবর, এই দলটিই ফের খড়্গপুর পেরিয়ে মেদিনীপুর সদর ব্লক এলাকায় ঢুকেছে। শনিবার বিকেলের পর দলটি শালবনি ও মেদিনীপুর সদরের কয়েকটি এলাকা চষে বেড়ায়। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি করে। যাতায়াতের পথে যেমন ফসল নষ্ট করেছে, তেমন মাটির বাড়িও ভেঙেছে।
শনিবার রাতে দলটি মথুরাপুর পেরোচ্ছিল। আশপাশেই রয়েছে লক্ষ্মণপুর, হাতিলোট, রামেশ্বরপুর প্রভৃতি এলাকা। মথুরাপুরে একটি পরিত্যক্ত কুয়োর মধ্যে বাচ্চা হাতিটি পড়ে যায়। বয়স আনুমানিক দেড় বছর। এরপর আরও বেশ কিছু হাতি সেখানে এসে চিৎকার শুরু করে। গ্রামে আতঙ্ক ছড়ায়। রাতে গ্রামবাসীই মশাল জ্বেলে হাতি তাড়ানোর ব্যবস্থা করেন। রবিবার সকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছন বন দফতরের আধিকারিক ও কর্মীরা। আসে যৌথ বাহিনী। বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যদের নিয়ে হাতি উদ্ধারের কাজ শুরু হয়। শুরুতে কুয়োর একপাশের মাটি কেটে ফেলা হয়। পরে কুয়োর মধ্যে প্রচুর খড় ফেলা হয়। এডিএফও বিকাশরঞ্জনবাবু বলেন, “পরিত্যক্ত কুয়োটির গভীরতা প্রায় ১৫ ফুট ছিল। এ ভাবে খড় না ফেললে গভীরতা কমানো সম্ভব হত না। ফলে, আরও সমস্যা হত।” |
তখনও কুয়োয় আটকে। দলছুট হয়ে একটি বাচ্চা হাতি শনিবার পড়ে গিয়েছিল শালবনির মথুরাপুরে
পরিত্যক্ত কুয়োয়।
রাতভর চেষ্টার পরে রবিবার সকালে কুয়োর এক পাশের মাটি কেটে তাকে উদ্ধার
করল বন দফতর। তবে উদ্ধারের পরে
সামলানো কঠিন হচ্ছিল বছর দেড়েকের ওই হস্তিশাবককে।
তাকে বাগ মানাতে গিয়ে জখম হন এক বনাধিকারিক। |
গভীরতা কমার ফলে সহজেই বাচ্চা হাতিটি কুয়োর মধ্যে থেকে উঠে আসে। তবে, এরপরও হাতিটিকে সামলাতে হিমসিম খেতে হয়। শুরুতে ইঁদকুড়ি, পরে আনন্দনগর, মজুরকাঠি প্রভৃতি এলাকা চষে বেড়ায় সে। হাতিটির কাছে গিয়ে জখম হন বন দফতরের মেদিনীপুরের রেঞ্জার অভিজিৎ কর। বাচ্চা হাতিটি তাঁর দিকে তেড়ে আসে। মাটিতে পড়ে যান অভিজিৎবাবু। তখনই হাতিটি মাথা দিয়ে তাঁকে গুঁতো মারে। জখম অবস্থায় ওই রেঞ্জারকে পিড়াকাটায় এনে চিকিৎসা করানো হয়।
আপাতত, লালগড় রেঞ্জ এলাকাতেই হাতির দলটি রয়েছে বলে বন দফতর সূত্রে খবর। দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “গ্রামবাসীর সাহায্য নিয়েই হাতি তাড়ানোর কাজ চলছে। উদ্বেগের কিছু নেই। আমরা দলটির গতিবিধির উপর নজর রেখেছি।”
|