রঙ্গকর্মী নাট্যদল ‘হোলি’ নামে একটা নাটক মঞ্চস্থ করেছিল। সেখানে মাত্রাতিরিক্ত ইয়ার্কি-ঠাট্টায় জর্জরিত একটি ছাত্র আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিল।
কলেজ, ইউনিভার্সিটির বহু পরিচিত র্যাগিং, অফিসেও যে বহমান, তার বিরলতম চিত্র ফুটে উঠল স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার ভবানীপুর শাখার সাম্প্রতিক ঘটনাটিতে। সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়ে খবরটি এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে যে, অফিসের সহকর্মীরা একে অপরকে ইদানীং যে কোনও প্রসঙ্গেই বলছেন, না, আর ঠাট্টা মসকরা নয়...।
ঘটনাটা পীড়াদায়ক। যন্ত্রণা উদ্রেককারী। অসহনীয় বিষণ্ণতার সম্মুখীন করেছে আমাদের। চরম সত্য উদ্ঘাটিত হবে তদন্তে। আততায়ী রক্ষীর যথার্থ বয়ানে।
কিন্তু যে প্রশ্নটা উঠে আসছে লোকমুখে, তা হল অপরকে উত্যক্ত করার আনন্দ কবে শেষ হবে? অফিসে-পাড়ায়-বাসে-ট্রামে-ট্রেনে সর্বত্রই এই অত্যন্ত স্মার্ট লোকজনকে দেখা যাবে, যারা মাত্রাতিরিক্ত টিটকিরি, মজা বিলোতে ওস্তাদ পাবলিক। ওরা স্থান-কাল-পাত্র ভুলে পরপীড়নের আনন্দে আত্মহারা। এদের একটা পারিষদ শ্রেণি থাকে। দলবদ্ধ ভাবে কাঠিবাজি, অশ্লীল খিস্তিখেউড় ওদের মজ্জাগত। এবং সবচেয়ে আশ্চর্য লাগে যখন দেখা যায়, এরা বয়স ভুলে গিয়ে অল্পবয়সির সঙ্গে নিরীহ একজনকে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে খোরাক করছেন। বহু ঘটনা ঘটে যেতেও দেখা যায়, যখন ওদের পাশবিক আনন্দ, মনুষ্যপদবাচ্য জাতিটার অভিধা ভুলিয়ে দেয় বেমালুম। সহাবস্থানকারীরা প্রতিবাদ করেন না, কেননা, নির্বিকার থাকার মধ্যবিত্ত মানসিকতার কোনও বিকল্প নেই। |
স্টেট ব্যাঙ্কের ঘটনাটা বিচ্ছিন্ন হতেও পারে। নিহত ক্যাশিয়ারের পাড়া প্রতিবেশী বা আত্মীয়স্বজনের বয়ান অনুযায়ী তিনি মিশুকে, পরোপকারী, বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়তে সর্বদা প্রস্তুত থাকতেন। নিরাপত্তা রক্ষী বলছেন, ওই ছিল নাটের গুরু...। উত্যক্ত করবার পুরস্কার যদি এই হয়, তবে অবশ্যই সেই নিরাপত্তা রক্ষীর কাউন্সেলিং প্রয়োজন। কী শাস্তি হবে, বিচারেই জানা যাবে। ইত্যবসরে অকালে চলে যাওয়া মৃত ব্যক্তিদের বিদেহী আত্মার শান্তি কাম্য।
এই পত্রলেখকও এক জন ব্যাঙ্ককর্মী। কর্মসূত্রে যে নিরাপত্তা রক্ষীদের দেখেছি বা দেখি তাঁরা প্রাক্তন সেনা। কর্মক্ষেত্রের পার্থক্য সত্ত্বেও এঁরা যথেষ্ট অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেন। নিত্য দিনের পরিষেবা ক্ষেত্রে মাসের প্রথম দিকে গ্রাহকপূর্ণ কাস্টমার লবিতে দায়িত্ব নিয়ে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করেন। সহকর্মীদের সুবিধে অসুবিধে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকেন। আবার ব্রাঞ্চের নিরাপত্তা রক্ষী দিনের শেষে কি নিপুণ ভাবে অন্যান্য ক্যাশিয়ারের সঙ্গে বসে জেনারেল ক্যাশ সামলাতে সাহায্য করেন, তা অকল্পনীয়। গত মাসের শেষে হঠাৎ করেই দু’দিনের শারীরিক অসুস্থতার কারণে অকালেই চলে গেলেন। ঘটনাচক্রে তারও নাম সুনীল, সুনীল ভৌমিক। ...আবার এও দেখেছি। প্রাক্তন সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় ওঁরা যখন যুদ্ধক্ষেত্রে ছিলেন, তার গল্প করতেন, হাসিমুখে শুনতেন গোল হয়ে বসা সহকর্মীরা।
ঘটনা ঘটে গেলে থাকে শুধু অতীত কাহিনি। যে পরিবারগুলো প্রিয়জনদের হারাল তাদের বুকেই ক্ষত থেকে যাবে দীর্ঘ দিন। ধীরে ধীরে তাও এক দিন বিলীন হবে। কিন্তু যথোচিত শিক্ষিত মান-হুঁশ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না-হলে যে মানুষগুলো অবিরাম উত্যক্তই করে যাবেন অন্যদের, তাঁদের ক্ষেত্রে কী করণীয়? স্রেফ উদাসীন হয়ে সবাই যে কালাতিপাত করতে পারেন না। তবে কি এই ঘটনা পুনরাবৃত্তির সূচনা করল? নতুন এক ক্ষত সৃষ্টি হল আমাদের নাগরিক সমাজে? ধ্রুবজ্যোতি বাগচী। কলকাতা-১২৫
|
কলকাতার কড়চায় প্রকাশিত ‘নটী বিনোদিনী’ (৩-১২) অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বিষয়। সেখানে লেখা হয়েছে ‘বিনোদিনীর নামে কিন্তু আজও গড়ে ওঠেনি কোনও থিয়েটার।’ এই প্রসঙ্গে জানাই, চল্লিশ বছর আগে হুগলি জেলার ডানকুনিতে ‘শিল্পীমন’ সাংস্কৃতিক সংস্থার উদ্যোগে এবং প্রয়াত প্রখ্যাত নাট্যশিল্পী বিদ্যুৎ বসুর আহ্বানে এলাকার নাট্য ও সংস্কৃতিপ্রেমী বহু মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও সততায় গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছিল ‘বিনোদিনী নাট্যমন্দির’। আজও যা ডানকুনি তথা সারা পশ্চিমবঙ্গের বুকে সর্বপ্রথম স্থাপিত নটী বিনোদিনীর নামাঙ্কিত নাট্যমঞ্চ বলে পরিচিত। এই মঞ্চ উৎপল দত্ত-সহ বহু বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্বের উজ্জ্বল উপস্থিতিতে গর্বিত এক অধ্যায়। এই মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়েছে কলকাতা ও জেলার নানা নাট্য সংস্থার বহু অভিনয় ও নাট্য প্রতিযোগিতা।
অস্থির সময় এবং কিছু স্বাভাবিক প্রতিবন্ধকতার কারণে কিছু দিন বন্ধ থাকার পর, আবার ১৫ অক্টোবর ২০১২ ডানকুনির বিনোদিনী নাট্যমন্দিরের ৪১তম প্রতিষ্ঠা দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে দু’দিন ব্যাপী এক নাট্যোৎসবের আয়োজন করেছিল ‘শিল্পীমন’ সংস্থা নাট্যব্যক্তিত্ব অশোক মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে। এই অনুষ্ঠানে যোগদান করেছিলেন সর্ব স্তরের বহু বিশিষ্ট মানুষ।
মুকুল বাগচী। ডানকুনি, হুগলি
|
কানেক্টিকাটের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে ‘রায়ান নয়, খুনি অটিজমে আক্রান্ত ভাই’ পড়ে ব্যথিত হলাম। যত দূর জানি, এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত অ্যাডাম লানজা অটিজমে আক্রান্ত ছিল এটা জল্পনা মাত্র। এখনও কোনও সরকারি স্বীকৃতি মেলেনি এ নিয়ে। শিরোনাম পড়ে মনে হচ্ছে, যেন অটিজমই এই ঘটনার জন্য দায়ী।
কানেক্টিকাটের ঘটনা আমাদের সকলকে ভাবায়। বিতর্কে অনেক কথা উঠে আসছে। যার মধ্যে প্রধান অবশ্যই আমেরিকান সমাজে বন্দুকের আপাতসুলভতা। এ ছাড়াও আজকের সমাজে আপাতসুস্থ ‘নর্মাল’ লোকদের মধ্যেও ক্রমবর্ধমান মানসিক অবসাদ ও হতাশা ইত্যাদি। অটিজম ও অন্যান্য মানসিক প্রতিবন্ধকতায় আক্রান্তরা জীবনে প্রতিদিন অনেক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়ে থাকেন। উপরন্তু তাঁদের খুনির তকমাটা নাই বা দিলেন।
ভাস্করদীপ্ত ভট্টাচার্য।
নিউ জার্সি, ইউ এস এ |