বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
|
আবহাওয়ার হঠাৎ ভোলবদলে প্রভাব
ফেলছে দূষিত কণা, দাবি আবহবিজ্ঞানীর
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
|
ফুসফুস ও দেহের অন্য অঙ্গে বাতাসে ভাসমান কণার (এরোসল) প্রভাব জানাই ছিল। এ বার আবহাওয়াতেও তার প্রভাবের কথা জানালেন এক বিজ্ঞানী।
রবিবার ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের মঞ্চে বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সেস (আইআইএসসি)-র আবহবিজ্ঞানী জে শ্রীনিবাসন বলেন, স্থানীয় আবহাওয়ার হঠাৎ ভোলবদলে দায়ী এই ভাসমান কণা-ই। ওই মঞ্চে হাজির ছিলেন নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী উয়ান লি এবং ভারতীয় বিজ্ঞানী রাজেন্দ্র পচৌরি।
আইআইএসসি-র দিবেচা সেন্টার অফ ক্লাইমেট চেঞ্জ-এর অধিকর্তা শ্রীনিবাসন এ দিন বলেন, বাতাসে ভেসে থাকা ১০ মাইক্রনের কম আকৃতির ভাসমান কণাগুলিকে খালি চোখে দেখা যায় না। কিন্তু বাতাসে ধোয়ার কুণ্ডলীর মতো ওই সব কণা উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়ে। বর্ষার আগে আগে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রাকৃতিক নিয়মেই তৈরি হয় এক ধরণের ভাসমান কণা। তবে সেগুলি মূলত ধুলিকণা। যার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য তেমন নষ্ট হয় না বলেই মনে করেন শ্রীনিবাসন। তাঁর দাবি, পরিবেশের মূল ক্ষতি করে মানুষের তৈরি ভাসমান কণা। এর মধ্যে রয়েছে, যানবাহন, অন্য ভাবে জ্বালানীর দহন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং বিভিন্ন শিল্প থেকে নির্গত ধোঁয়া।
আপাত নিরীহ ধূলিকণাও ধোঁয়ার মেশা কার্বন কণা এবং সালফার ডাই-অক্সাইডের সংস্পর্শে এসে পরিমন্ডলের বিভিন্ন স্তরে অস্থায়ী চাদরের সৃষ্টি করে বলে দাবি শ্রীনিবাসনের। তিনি বলেন, এই ধরনের অস্থায়ী চাদরই স্থানীয় আবহাওয়াকে প্রভাবিত করে।
কী ভাবে?
শ্রীনিবাসনের দাবি, কালচে রঙের ধূলিকণাগুলি সূর্যের আলোকে মাঝপথে ধরে নেয়। সেখান থেকে তা ফেরত যায় উপরে। তাতে মেঘ তৈরির প্রক্রিয়া দু’ভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়। ভূপৃষ্ঠে পর্যাপ্ত সূর্যের তাপ না পৌঁছনোয় সমুদ্র, নদী কিংবা পুকুর থেকে বাষ্পীভবন হতে পারে না। যার ফলে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে যায়। অন্য দিকে, বায়ুমণ্ডলের মধ্যস্থল অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়াতে মেঘ তৈরির প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়। যা সরাসরি স্থানীয় আবহাওয়ার উপরে প্রভাব ফেলে।
বর্ষার সময়ে বায়ুমণ্ডলে ভাসমান কণার পরিমাণ বেড়ে গেলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কমে যেতে পারে বলে মনে করেন শ্রীনিবাসন। তিনি বলেন, ভূপৃষ্ঠ যত বেশি উত্তপ্ত হবে তত বেশি বৃষ্টির অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হবে। কিন্তু সূর্যালোক আটকে যাওয়ায় ভূপৃষ্ঠের যথেষ্ট উত্তপ্ত হতে পারে না। তাই বৃষ্টির স্বাভাবিক ছন্দটা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।
উত্তর-পশ্চিম ভারতে মেঘ ভাঙা বৃষ্টির অন্যতম কারণ বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন শ্রীনিবাসন। তবে মৌসম ভবনের আবহবিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে এখনও কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না। তাঁরা বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণা চান।
তবে শ্রীনিবাসনের এই গবেষণা প্রশংসা পেয়েছে উয়ান লি এবং রাজেন্দ্র পচৌরির। তাঁদের বক্তব্য, শ্রীনিবাসনের এই গবেষণা স্থানীয় আবহাওয়ার পরিবর্তন সম্পর্কে বর্তমান ধারণা অনেকটাই বদলে দেবে। আবহবিজ্ঞানী ও পরিবেশ বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি চিকিৎসা বিজ্ঞানীদেরও ভাসমান কণা সংক্রান্ত গবেষণায় আরও সক্রিয় হওয়ার আর্জি জানিয়েছেন লি এবং পচৌরি। |